একদিন যাত্রাপালা
একদিন যাত্রাপালা এসেছিল গ্রামেগঞ্জে
কাহিনীর উচ্চকিত ঘনঘটা নিয়ে
ঘাসের ওপরে বসে গালে হাত দিয়ে দেখা
টান টান উৎকন্ঠা কখনো দাঁড় করিয়ে রাখত
বসে থাকা সামনের দর্শকের লোম খাড়া
তারপর একসময় তিনি আসতেন
তিনি মানে আর কেউ নয়— মহান বিবেক।
সুরে সুরে ‘ভোলা মন’ বলে
আমাদেরও জাগৃতি ঘটত কিছুটা।
এখন সে যাত্রা নেই— যাত্রানাস্তি চারদিকে
স্থিতিও দুষ্প্রাপ্য দেখি
পালা পার্ব্বণের শেষ নেই তবু
হত্যা আর ধর্ষণের দেশে এখন নিবাস
সারাদেশ আজ একলাশপুর বহুলাশপুর ধর্ষণপুরও বটে
কত গান গায় লোকে
গান আছে কত কত— বহু ধরনের গান
রেপ গান থেকে মেটালিক গানে জগতের তোলপাড়
শুধু নেই সেই মধ্যযাত্রাপথে সেই ‘ভোলা মন’
বিবেকের গান— নেই সে বিবেক
আম্রপালী
নেই সে বৈশাল রাজ
নেই রাজ্যপুরী জুড়ে হাজার হাজার
নারীলোভী লালাঝরা পুরুষের উত্থিত শিশ্নের দল
নেই রাজা বিম্বিসার
নেই তার প্রেমমত্ত পুত্র রাজার কুমার
আম্রকুঞ্জে ভীড় করা কামলোভী হাজার পুরুষ আজ
নিশ্চিহ্ন উধাও লীন পঞ্চভূতে
শুধু টিকে থাকে টিকে যায়
কালের করাল গ্রাস ভেদ করে
নগর বধূর নামে পুরুষের ডিক্রী পাওয়া
অপরূপা সরকারী পতিতা আম্রপালীর নাম
সে আজো রসনা তৃপ্ত করে
আম্রলোভী সহস্র লোকের
সে আজো ঘুরছে দেখো মানুষের হাত থেকে হাতে
মানুষের ঠোঁট থেকে ঠোঁটে
ঝরে পড়া আমের পল্লব আজ সে বড় মজার নাম
সে বড় মজার আম বাংলার বাগানেও থাকে
প্যান্ডোরার বাক্স
প্যান্ডোরা এসেছে বুঝি! পুনর্ব্বার প্রেম দেবে বলে
পৃথিবীর ঘৃণামত্ত মানুষের তৃষিত হৃদয়ে!
প্যান্ডোরাকে কখনো দেখিনি তবু পেয়েছি খবর তার
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে জরা মৃত্যু দুঃখ রোগ বন্যা জলোচ্ছ্বাস
একে একে বের হয়ে ভেসে গেল হাওয়ায় হাওয়ায়
ধুলার মানুষ যত বারংবার লুটায় ধুলাতে
আতঙ্কে প্যান্ডোরা তার বাক্সে ফের ঝাঁপি দিয়েছিল তাও জানি
প্যান্ডোরা মায়াবী বড়— বড় রূপবতী বড় আবেদনময়ী
চিরল চোখের দিকে চেয়ে দেখলে শুনেছি ফেরে না দৃষ্টি
স্বয়ং প্রেমের দেবী সাজিয়েছে প্যান্ডোরার দেহের ভঙ্গিমা
আমি তাকে দেখিনি কখনো— সে ছিল আদিম যুগে
যখন জিউস ছিল তেজোদ্দীপ্ত নিষ্ঠুর ক্ষমতাবান
প্যান্ডোরাকে আরো কিছু আয়ু দিলে ক্ষতিটা কী হত?
এই যুগে ডোরা আর ডোরাকাটাদের ভীড়ে
প্যান্ডোরা দেখিনি একটিও— সে বড় মায়াবী ছিল শুনি
প্যান্ডোরা মরে গেছে নিজ বাক্স থেকে ছুটে আসা রোগের সন্ত্রাসে
তবু সে বাক্সের মুখ বন্ধ করতে পেরেছিল জানি
কে আজ নতুন করে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিল!
বাক্সের তলায় আজ বহুকাল জমে জমে ছিল ঘুমে ছিল
কীটানু-জীবাণুগুলো— কে খোলে বাক্সের মুখ!
তিনটে বিবর্ণ বর্ণ
তিনটে বিবর্ণ বর্ণ ‘জয়ে বয়ে র’ = জ্বর
কেবল হৃদয়ে মস্তিষ্কে নয়
সংসারে তুলেছে তুমুল ঝড়—
মনে হয়, কেনবা এমন হয়!
হবে না হবে না ভাবি
তবু হয়ে গেছে আলগোছে
বিবমিষা নিয়ে কত কাৎরায় মেয়েটি
তাপে তার শরীর ভরেছে
নয় বছরের কন্যা কৃশ এ শরীর
কত আর ভাসবে বেদনায়
নিজ শয্যাসনে শুয়ে স্থির
তবু তরী ভীড়ছে না কিনারায়
শেফা চাই, শরীর সতেজ হোক—
বুঝি না মগজে আজ কোন বিশ্বাসের ঝোঁক।
এ কেমন ডাক, কোন্ সুদূরের
কালো মহিষের প্রাচীন আত্মা
নেমে আসে কালো নিকষ রাতটা
ঘোর রাত্তিরে কে সারে সাপার
কালো মানে কিছু অশুভ ব্যাপার!
অশরীরী যতো মাঝিদের গান
মাঝ দরিয়ায় থাকে ভাসমান
নদীকূলে কোন্ গৃহবধুটির
ভেসেছে কলস আঁচল শাড়ির
কোন প্যাঁচাটির বড় বড় চোখ
রাত বাড়লেই করে ছোঁক ছোঁক
কোথা থেকে শ্বাস কোথা যায় ফিরে
মানুষ যখন ভূতুড়ে শরীরে
প্রাণ ভরে ডাকে মহাপ্রাণটিকে
কালো চাবুকেরা কত আর টিকে
তবু ভাবি আর আছে কত দিন
শোধ করে কালো মহিষের ঋণ
আজ যেন মন অশরীরী চিল
স্বপ্নপুরীতে শুধু পড়ে ঢিল
এ কেমন ডাক কোন্ সুদূরের
কোন্ বেদনার দীর্ঘশ্বাসের
লোনাজল
সমুদ্রের বিস্তীর্ণ ফুটন্ত জলরাশি রৌদ্রতাপে চকচকে
তোমার অশ্রুর চেয়ে বিন্দুমাত্র দামী নয়
লোনাও অতোটা নয় যতোটা সাগর ভাবে
সাগরে যেমন ওঠে ঢেউ অশান্ত অসীম
তেমন তোমার বুকে আবেগ মথিত হয়ে
দুঃখ প্রকাশের নিত্য পরিণামরূপে
একেকটি অশ্রুকণা শিশিরের মত জন্ম দিয়ে যায়
অশ্রুই কেবল জানে বেদনার ভিন্ন কোন নাম
.
.
.
জিললুর রহমান
জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ নভেম্বর। তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেখালেখির যাত্রা শুরু করেন। তিনি কবিতা বিষয়ক নিবন্ধও লেখেন। তিনি কবিতা এবং নন্দনতাত্ত্বিক প্রবন্ধ অনুবাদ করেছেন। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ এবং অনুবাদগুলি বিভিন্ন ছোট্ট কাগজে প্রকাশিত হয়, যেমন:— লিরিক, নিসর্গ, জীবনানন্দ, সমুজ্জ্বল সুবাতাস, পুষ্পকরথ, সুদর্শন চক্র, শতক্রতু, সবুজ আড্ডা, চারবাক, বিন্দু, কঙ্কাল, খড়িমাটি, একবিংশ এবং আরও অনেক পত্রিকায়। তিনি যদিও উত্তরমেঘ (২০১৭) সম্পাদনা করেছেন এবং লিরিকের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন (১৯৯২-২০০৫)। তিনি তিনটি কবিতা সংগ্রহ, দুটি দীর্ঘ কবিতা, ২টি প্রবন্ধের সংগ্রহ এবং ৩টি অনুবাদকৃত বই প্রকাশ করেছেন। নাজিম হিকমতের রুবাইয়াতগুলি তিনিই প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ‘পপলার বন মরে পড়ে আছে’ এবং ‘একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি’ শীর্ষক কবিতার সিরিজ পাঠকমহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
কবিতার ভাঁজপত্র: ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের যৌবন (১৯৮৮)
কাব্যগ্রন্থ: অন্যমন্ত্র (লিরিক, ১৯৯৫), শাদা অন্ধকার (লিরিক, ২০১০), ডায়োজিনিসের হারিকেন (ভিন্নচোখ, ২০১৮)
দীর্ঘ কবিতার বই: আত্মজার প্রতি (বাঙময়, ২০১৭), শতখণ্ড (বাঙময়, ২০১৭)
প্রবন্ধ/নিবন্ধ: অমৃত কথা (লিরিক, ২০১০); উত্তর আধুনিকতাঃ এ সবুজ করুণ ডাঙায়; (বর্ধিত ২য় সংস্করণ, খড়িমাটি, ২০১৮; ১ম সংস্করণ, লিরিক, ২০০১)
অনুবাদ: আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্বঃ কয়েকটি অনুবাদ (লিরিক, ২০১০); নাজিম হিকমতের রুবাইয়াৎ (বাতিঘর, ২০১৮); এমিলি ডিকিনসনের কবিতা (চৈতন্য, ২০১৮)
‘সেইবই’ অনলাইন গ্রন্থ: লাশঘরে দেশজুড়ে (কবিতা); বাংলাদেশে উত্তর আধুনিকতা ও লিরিক (প্রবন্ধ); আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্বঃ কয়েকটি অনুবাদ (প্রবন্ধের অনুবাদ); অমৃত কথা (প্রবন্ধ); অন্য মন্ত্র (কবিতা)
‘যদিও উত্তরমেঘ’ (২০১৭) এর সম্পাদক। তরঙ্গ’ (১৯৯০, ১৯৯১) এর সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। লিরিক (১৯৯২—২০০৫) এর সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। মূলত লিরিক, নিসর্গ, জীবনানন্দ, সমুজ্জ্বল সুবাতাস, পুষ্পকরথ, সুদর্শন চক্র, শতক্রতু, সবুজ আড্ডা, বিন্দু, চারবাক, কঙ্কাল, খড়িমাটি, একবিংশ সহ বিভিন্ন ছোট কাগজে লিখে আসছেন দীর্ঘদিন।
প্রকাশিতব্য কবিতার বই: ১. পপলার বন মরে পড়ে আছে ২. হাস্নুহেনা ও মা ৩. একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি
প্রকাশিতব্য নিবন্ধের বই: ১. বাংলা কবিতার সারথীরা ২. নোবেলের কবিগণ ও অন্যান্য
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকাশনা:— 1. Undergraduate text book— Pathology Tutorial (vol—1&2); 3 editions since 2017. 2. Research articles—63 original articles published in different international and local journals including NATURE 3. Scientific Editorial in international and local journals—3