বয়স্ক মেঘ ও স্বপ্নবীজ
তোমার আসা যাওয়া স্বপ্ন গভীরেই
অন্ধজ্ঞানীগণ কিছুটা দেখছেন;
তুমি যে ভালবাস বয়স্ক মেঘকে,
একথা কোনোখানে কেউকি বলেছেন?
আমার জানামতে তথ্য কিছু নেই-
আছে যা গোপনেই সুতীব্র চালাকি;
আগেতো পিছুটান পরেতো বন্ধু-
এভাবে জ্ঞানী হও বলেছেন খালা কি?
একটা বেলুনের বহুযে গুণ আছে
একথা শিখতে হে, কেন যে কানা-মাছি?
বেদনা একখানা রঙটা বেদানার;
যদিও দুজনেই বানানে কাছা-কাছি।
জ্ঞান কি এইসব এমনি শেখা যায়?
কিছুটা ঋণ কর কিছুটা ঘৃতখাও;
বাবাজি তানসেন বাজান তানপুরা
যদিও চুর চুর স্বপ্নকৃতরাও।
গোপনে বহুবিধ রেখেছ লতা-পাতা
মনের জঙ্গলে বন্যফলগুলো
কতযে আশানিয়া জাগাবে রাত-দিন
ভেবেছে বহুক্ষণ সৈন্যদলগুলো।
ভয়েরা জড়োসড়ো এখানে উঁকি দেন-
কিছুটা বিস্ময় কিছুটা আন্ধারে;
যে যার মত করে বুজেছ সোজাসুজি
বৃষ্টিবুকে মেঘ ডাকে যে বান্দারে।
আলোয় ঝুলছে ভাগ্য উচাটন রেখা
অচেনা রোদ্দুরে স্মৃতি হাতড়ে কী দেখ বোকা পঙ্ক্ষিরাজ…?
সামাজিক প্রতিবিম্বে উদ্ভাসিত মেঘ-
তার প্রশস্তিগাথা কি লেখা হচ্ছে ওইখানে-মেলেনা উত্তর।
ফিরে আসে অন্তরীত শৈশব : লাল টুকটুকে তরমুজ, কী ফর্সা লাল!
অথবা বিকট সুন্দরের নিশানায় রক্তরাঙা চিত্রপাঠ।
এবং চকচকে ছুরিতে আশঙ্কা তীক্ষ্ণ হল: গন্তব্যহীন গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে মানুষ ?
হত্যাকাণ্ডে মুখর দেখ বেশুমার কানা-কড়ি : আহা! দারোগা বাবু কী বলি তোমার?
মহাগদ্যবাণে ভেসে যাচ্ছে শাহনামা,-দুঃস্বপ্নের স্রোতধারা গিলছে প্রিয়তর নগর।
আর দেখি পকেটে ভরছে কারা ফেরি করে: আসমানের নক্ষত্র ও চাঁদ।
বয়সের চামচে না আছে রূপা, না আছে সোনা…
বাণিজ্যনেশায় নিভে আসছে স্বপ্নের মোমবাতিশিখা,
কেবল তামার দামে ফুরিয়ে যাচ্ছে আমাদের হিসাবের খাতা।
এই ভাল… সেই ভাল….ভাল’র গীতাঞ্জলি ইতিহাস গলিয়ে দূরে…
আহা, কী বলি তোমার পঙ্ক্ষিরাজ ঘোড়া, উড়ে উড়ে… ?
ওদিকে পূর্ব ওদিকে পশ্চিম ফাকা
শুধু উত্তর এবং দক্ষিণ ঢাকা
শত ফিরিস্তি… তবুও অজান্তে একা
আলোয় ঝুলছে ভাগ্য উচাটন রেখা…
ভবের কাঙাল চাঁদ তারা দেখ
মোমবাতি জ্ঞানে একদিন সবি জ্বলে জ্বলে যাবে নিভে-
ততোধিক ভাব, ওদিকে তখন রুদ্রমূর্তি শিবে,
গীত গেয়ে যাবে- ধান ভানবার, স্বপ্ন মুড়িয়ে রাতে;
বদ্ধ দালানে। কত কথা জাগে গাঞ্জার উৎপাতে:
পাহাড় ডিঙিয়ে নীলের নৌকা শাদাদের গিলে খায়।
কেউ কারো সাথে, কেউ কারো নয়- যাত্রার বাড়ি নাই;
এমন হতাশা! শূন্যজীবন কান্না বিকিয়ে তবে,
ভবের কাঙাল চাঁদ তারা দেখ। তোমারো পুচ্ছ হবে-
উড়ে উড়ে পাখি, এদিকে ওদিকে খুশিমত যাবে দূরে
একাকী বেচারা। লাগামবিহীন একটি ঘোড়ার ক্ষুরে-
ঘুম ছিড়ে গেলে, গভীর শব্দে নিজেই পাল্টে হাওয়ায় পেতেছ ঘর;
সূর্যের মত তীব্র আবেগে বল, আমি আছি, আমি অবিনশ্বর।
রাত্রির পাণ্ডুলিপি
১.
লোক ডাক, ডেকে আন আমির ওমরাহ
আমি তো করিনি তর্ক তবু কি গোমরাহ
বলে শাপ দেবে বন্ধু? নিয়ত নিশ্চয়
এখানে রাত্রির মাঝে গোপন বিস্ময়
চাদরে লুকিয়ে রাখ,-নাকি কোনো ছুরি?
না হয় বোকার মত চরাচরে ঘুরি
নিটল নিরেট প্রেম-লকবে মাজনুন
শায়ের বনেছি আমি করিনিতো খুন।
সেই মর্মে বিশ্বাসপ্রার্থী-তাই নিশাচর
অশ্বারোহী আমি এক। অদৃশ্য লাগাম
টেনে ধরি আর ছুটি তুমি বরাবর
এইবার খোল পথে চাঁদোয়া মাকাম
দু’পায়ে দলিত হোক ক্রান্তিকাল যত
রাতের গভীরে রাখ আমাকে অক্ষত।
২.
এইমাত্র পাঠ করি তোমার সুকৃতি
ফুটন্ত ফুলের মত ফুট্ ফুটে স্মৃতি
হোমারের দেশে দেখি নিয়ে যাচ্ছে দূরে
অন্ধত্বের স্বাদ ফের চোখের গভীরে
নিভে যাচ্ছে একে একে তাবৎ সলোক।
জগতের সকল মানুষ সুখী হোক-
যদিও প্রতীতি এই, তবুও দৃশ্যত
মন এক চুপ চাপ অন্য ক্রীড়ারত।
ঝাউপাতা নিয়ে যাচ্ছে সোনালি যৌবন
আমি এক হতভাগা করি না গোপন।
কোথায় তাজাল্লি তোর, কোথায় যে নূর
সামনে পেছন দেখি, দেখি বহুদূর…
দেখা দেখি শেষমেশ উড়ি নীলিমায়
মেঘের পালক হয়ে ঝরাবে আমায়?
৩.
রাত্রির বিদগ্ধ পাণ্ডুলিপি পাঠ করে
ফেরায় নিজেকে, উন্মুক্ত পশ্চিমে ঘুরে
কোটি কোটি বছরের অস্তাচল স্মৃতি
অনুপম স্থৈর্য:নিখিল মৃত্যুকে ছুঁয়ে
সোলেমান বাদশা আমি দীপ্র জাগরণে
সৃষ্টি হোক এই মতে তাবৎ সংসারে
বিনম্র খেয়াল নিয়ে ভেসেছি হাওয়ায়
কিন্তু, বিশ্বাসের চূড়াগুলো ছুঁয়ে দেখি
বৃষ্টির শরীর হয়ে ঝরছে অবিরাম
ফের তাই কঁচি কঁচি গাছেদের মত
উদ্ভাসিত চেতনাকে করেছি শাণিত
এবার দৃশ্যের তরে অদৃশ্যের খাঁদ
নক্ষত্র পতনরাগে নক্ষত্র জনমে
অনুদিত হতে থাক আকাশের পাঠ ।