মানবিক
অনেক এঁকেছি যাপনচিত্র
যত্নে বাঁধানো অহেতুক অভিমান
শব্দের নাজুক কোলাজে
সেই সব শীত ভোর
আহ্লাদের দাবী
যন্ত্রণার পরিধিতে ফেলে আসা খেয়ালী দিন
আজ নিপুণ লিখে রাখি
মনিটরে এঁকে রাখা
যুদ্ধবাজদের যুদ্ধ কাহিনী
টুম্বস্টোনে গচ্ছিত অজস্র ঘুম
পৃথিবীর প্যারালাইজড মগজ
আর পুড়ে যাওয়া চেতনার ব্ল্যাকহোলে
চাপা কান্নার গোপন দলিল
আশ্চর্য্য এই দিনে আজ আর
পূর্ব্ব পশ্চিম বলে কিছু নেই
রণক্লান্ত বাতাসের দীর্ঘ চলাচল উড়িয়েছে
সমস্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা…
খেলাঘর
আজ ওদের দিন ছিল না। মুখোশে ফুটে ছিল এক অনিশ্চয়তা।
যখন একে একে খুলছিল প্রাচীন প্রথা হয়ত ঘোমটার আড়ালে কেউ বলে উঠেছিল—
তো-বা! তো-বা!
অস্তরাগমাখা লাজুক আকাশ,
ছায়ার পাতায় হঠাৎ নিভে আসা রোদ এবং যাবতীয় কৌতূহল নিয়ে কেঁদে উঠেছিল কেউ!
অথচ
এরপরও মূর্চ্ছনায় গাঢ় হল আলাপ, মরমী সুর আর মায়ার উষ্ণতায় জমে উঠল ত্রিকোণ খেলাঘর…
পাতাঝরা কাল
পেরিয়ে যাচ্ছে হেমন্তকাল
ওক মেপলের অরণ্য জুড়ে
ছায়া হয়ে ভাসছে
এক প্রগাঢ় বিষাদ
ঝরা পাতাদের বুক থেকে
টুকরো আলোছায়ামায়া
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে সহস্র ভাঙন
আর আমি আলোটুকু ছুঁতে
গিয়ে বারবার ছুঁয়ে ফেলছি
নিকষ কালো এক অন্ধকার
মগ্ন
মগ্ন রাতের নির্জন
কে যেন দূর থেকে জ্বেলে রাখে আলো
মায়াময় এক উদারতায়
অবশিষ্ট যখন শুধু একমুঠো অক্ষর
স্মরণীয় সেইসব ব্যথা, যা ছিল পুরোনো
মনে পড়ে আবার
কিছু তো বলার নেই আর!
কিছু কথা ম্রিয়মান গ্রাফিতি, আঁকা হয়
শহরের দেওয়ালে, কিছু কথা ব্যক্তিগত
পাপপূন্যহীন, ছুঁয়ে থাকে নিবিড়
ভেঙেছে সুর, তবুও যা কিছু সঞ্চিত
সে শুধু কথারই ঋণ…
মায়া
হয়ত ব্যতিক্রমের স্বপ্ন শুধুই এক ভ্রমমাত্র
পারাহীন আরশির বুক
স্বর্গচ্যুৎ আজ প্রগলভ শব্দ
জাফরির নকশায় চুরচুর আলোর নিশ্চুপকণা
যে আভিজাত্যের উজ্জ্বলতায়
নির্ব্বিকার ভেঙেছ শ্রবণ,
তার ভেতরে ছায়া মাখে এক ভুলে যাওয়া মায়া
মেঘ
আজ আকাশের বুকে মেঘেদের বৃষ্টিকথা
জল ছুঁয়ে গভীর বিষাদ
জানলার শার্শিতে একটা
সাদামাটা জীবনের জলছবি অল্প অল্প ভিজছে
হঠাৎ বেঁকে ছিল যে পথ তার পাশে আগুন রং মেপল
ঝরা পাতায় নিশ্চুপ লিখছে সেই গোপন ভেজার কাহিনী
একাকী
এখনও হেমন্ত,
অথচ কুহেলিকাময় দিন নিদ্রিত
আর রঙ পেরোনো পর্ণমোচীদের নগ্ন দেহে বিমর্ষ সূর্য্যের মৃদুমন্দ তাপ…
আজ যাপন যেন বহমান জীবন থেকে পালানো এক রাখাল বালক
মৃত্যুমেঘের কালিমাব্যাপ্ত তমসাঘন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন,
দিগন্তবিস্তৃত মাঠের প্রান্তে কদমের বৃক্ষে একাকী…
যখন মাঠময় অগণিত দিশহীন পোষ্য এক অদ্ভুত যাপনের জাবর কাটায় ব্যতিব্যস্ত…
তুমি তখন আপন তালে হারমোনিকার সুরে নিমগ্ন…
যেন আলোর কারবারে আজ আর তোমার কোন হাত নেই…
কদমের দিন ফুরিয়েছে, প্রাণের সতেজ সবুজেরও…
বাতাসে ফেলে আসা বসন্তের হলুদ রিক্ততা…
যেন এভাবেই কেটেছে কতশত শতাব্দী আর এভাবেই কাটবে আগামী
আজও এক অলীক মেঠো সুরের খোঁজে তুমি… যে খোঁজের আড়াল নেই…
উলঙ্গ চেতনায় ভান নেই… আইন কানুনের ধারা নেই…
রাজাদের রীতিনীতি ভাঙা অরূপ চেতনায় যেন শুধু এক অমোঘ তানের সুরেলা বিস্তার…
সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ও মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার শেষে কিছুদিনের শিক্ষকতা-জীবন। তারপরেই প্রবাসে পাড়ি। গত বাইশ বছর যাবৎ ঠিকানা নিউ জার্সি। পেশায় মন্তেসরি শিক্ষক। ২০০৮ সাল থেকে ছদ্মনামে ব্লগ লেখা শুরু। ২০১০ থেকে ইন্ডিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও শারদীয়াতে নিজের নামে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখা চলতে থাকে| কমিউনিটির বিভিন্ন ভলেন্টারি কাজের পাশাপাশি নাটক ও সঞ্চালনা করে সময় কাটাতে ভালবাসেন|