[এটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র কোন নিবন্ধ নয়। অনলাইন ম্যাগাজিন ‘ধারাপাত’-এ ১২ই জুন ২০১৮-তে প্রকাশিত শ্রীময় আশিক পারভেজ নামক জনৈক গ্রন্থ সমালোচকের লেখা ‘পরম ভাষার খোঁজে : কলিম খানের ভাষাতত্ত্ব’ শীর্ষক নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। তারই পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় সমালোচক ও ভাষাতত্ত্ব-গবেষক শ্রীময় পিণ্টু দাস মহাশয় মাস ছয়েক আগে লিখিতভাবে যে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন তা ‘ধারাপাত’-এ অজ্ঞাত কারণে আজও প্রকাশ পায়নি। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মতামত সম্বলিত সেই প্রতিক্রিয়া পাঠক-সমাজের অবগতির জন্য আজ তুলে ধরা হল।
— সম্পাদকীয়]
গ্রন্থসমালোচককে বিভিন্ন ভাষা চর্চ্চা করতে হবে। কলিম খান এবং রবি চক্রবর্ত্তী ছাড়া আজ পর্য্যন্ত সারা পৃথিবীর যত শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় হয়েছে, সেগুলো আসলে ব্যুৎপত্তিভ্রম। অভিধানকাররাও সেগুলোকে ব্যুৎপত্তি ভেবে বিভ্রান্তি কর্ষণ করে চলেছেন, আর পাঠকরাও সেগুলোকে ব্যুৎপত্তি ভেবে বিভ্রান্তির ফসল চয়ন করে চলেছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় যত অভিধান [ইংরাজী, জার্ম্মাণ, ফরাসী, লাটিন, আর গ্রীক ভাষার শুধুমাত্র অভিধানই নয়, তাদের আলাদা করে প্রণীত ব্যুৎপত্তিমূলক অভিধানগুলো আমি রীতিমত পড়ে দেখেছি] সেগুলো ব্যুৎপত্তি বলতে বুঝেছে শুধুমাত্র ফর্দ্দ। একটা ভাষার শব্দ পাশাপাশি দেশগুলোতে কী বলে শুধুমাত্র তার ফর্দ্দ। তবে, এই ব্যুৎপত্তির অসম্পূর্ণ আলোচনাও কিন্তু ঐতিহাসিকতার (diachrony-র) ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
আর আধুনিক ভাষাতত্ত্ব বলতে পৃথিবী যা বোঝে তার বনিয়াদ তৈরি হয়েছে ফের্দ্দিন্য সস্যিয়রের মতের উপর ভিত্তি করে। সেখানে ঐতিহাসিকতার (diachrony-র) স্থান নেই; সেটি এককালীনতার (synchrony-র) উপর ভিত্তি করে তৈরী। সস্যিয়রের আলোচনায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় আছে— এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু, সস্যিয়রের সিদ্ধান্তের ভিত্তি ছিল প্রচুর ভ্রান্তিপূর্ণ নিবেশ (input) সস্যিয়র আপতিকতার সিদ্ধান্ত টেনেছিলেন সংস্কৃতের উপর তাঁর ডক্টরাল থিসিস সম্পূর্ণ করার পর। দুঃখের বিষয় সংস্কৃত ভাষায় যে বর্ণ থেকে অর্থ নিষ্কাশন সম্ভব, সেই জ্ঞান বহুকাল আগেই হারিয়ে গেছে, যেটা কলিম খান পুনরুদ্ধার করেছেন। কলিম খানের মত যোগ্য শিক্ষক পেলে সস্যিয়রের সিদ্ধান্ত উল্টো হত।
আজ পর্য্যন্ত একমাত্র খান-চক্রবর্ত্তীর (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তীর) তত্ত্বই শব্দের অর্থকে synchronically এবং diachronically নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। বাকী কোনও তত্ত্ব বা অভিধান এই কাজে সফল হয়নি। তাঁদের তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে ওসব বুঝে তারপর করা উচিত। না হলে অকারণ অযৌক্তিক বিভ্রান্তি ছড়াবে।
[ কিন্তু আমার প্রতিক্রিয়াটি ধারাপাত-এ এখনও প্রকাশিত হয়নি, মডারেটরগণ এখনও মডারেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে রেখেছেন। প্রকাশের এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। – পিণ্টু দাস ]
.
.
পিণ্টু দাস
পেশায় ইংরেজী সাহিত্য এবং ভাষাতত্ত্বের শিক্ষক। জন্ম ১৯৮১ সালে। বসবাস কলিকাতায়। আগ্রহের বিষয় মূলতঃ দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা। সেই সূত্রেই মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক সাহিত্য ছাড়াও একদিকে তিনি ঢুকে পড়েছেন বিভিন্ন দেশের পুরাণ, সংস্কৃতি ও ভাষার জগতে, আর অন্যদিকে তিনি ঢুকে পড়তে চান জ্ঞানতত্ত্বের অন্যান্য সমস্ত শাখায়।