মেয়েটি কী ভয় পাচ্ছে? পাওয়াটাই স্বাভাবিক। বাসে মাত্র তিনটা প্রাণী।
প্রাণীরা ভয় পেলে তাদের চোখের দিকে তাকাতে হয়। বিড়াল ভয় পেলে চোখের পিউপিল চিকন, লম্বাটে হয়ে যায়। মানুষের পিউপিল বড় হয়। তবে আধুনিক মানুষ মুখোশ পড়ে থাকে।
তবু মানুষ স্বাভাবিকভাবে ১০/১৫ বার চোখের পলক ফেলে, ভয়ে বা excitement-এ পলক কম ফেলে।
রঞ্জু ভাবছে তার মত ৫০ বছরের পুরুষকে দেখে ভয় পাচ্ছে কেন?
অবশ্য দুনিয়ার ‘আকাম’ এ বয়সের পুরুষরাই করে। এই বয়সে অনেকেই প্রোস্টেট এনলার্জের জন্য সাময়িক যৌবন অনুভব করে।
হুমায়ূনের ‘অরণ্য’ গল্পে দেখা যায় মনসুর মিয়া তার বউয়ের মৃত্যুর পর সে রাতে কান্নাকাটি করে এমনকি বউয়ের বেহেশতের জন্য নফল নামাজও আদায় করে। অথচ গভীর রাতে শ্যালিকাকে জোর করে ধর্ষণ করে।
মেয়েটা এবার ভ্যানিটি ব্যাগে হাত ঢুকাল।
কী বের করতে পারে? চাকু? পিস্তল? আই স্প্রে? মোবাইল? সে কি তার মাকে ফোন দিবে? না।
এই জেনারেশনের মেয়েরা স্বাধীন। বাবা-মাকে নয় তারা বন্ধুদের ফোন দিবে। তাছাড়া এখন বাসেই মেয়েরা সবচে অনিরাপদ।
রঞ্জুর সামনের স্টেশনেই নামার কথা।
হেল্পার বারবার বলছে ‘স্যার, সামনেই আপনার গন্তব্য’।
রঞ্জুর সন্দেহ হচ্ছে কোন প্যাসেঞ্জার উঠাচ্ছে না। ড্রাইভার বারবার মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে।
রঞ্জু দেখল একটু আগে ছয়জন লোক একসাথে উঠার পর দুইজন করে আলাদা তিনটা সীটে বসল। তাদের চোখে মুখে আশ্চর্য্য রকমের নীরবতা। অনেকটা ঝড় শুরুর আগে যেমন নীরবতা থাকে। মাঝে মধ্যে শুধু হাল্কা ইশারা। বড় কোন ক্রাইমের আগেই এমন করে মানুষ।
রঞ্জুর six sense বলছে কোন বিপদ আছে।
আচ্ছা বৃষ্টির ফোঁটা থেকে নক্ষত্রের বিন্যাস সবই যদি ফিবোনাক্কির গাণিতিক সূত্র মেনে চলে, তাহলে অপরাধ কী সংখ্যা মেনে চলে?
বাসে সবাই জোড় সংখ্যায় বসা।
শুধু রঞ্জু ও মেয়েটি ছাড়া।
তাহলে প্রকৃতি চাইছে তারা জোড় সংখ্যা গঠন করুক।
এটার জন্য রঞ্জুকে সাহায্যের জন্য এগোতে হবে। কিন্ত কীভাবে?
এমনও তো হতে পারে সে যা ভাবছে সবই ভুল। সব পুরুষই তো খারাপ নয়। তবে ভালো বা খারাপ মানুষের মাঝে innate জিনিশ নয়। Of human bondage-এ মম বলেছে— মানুষকে যদি আইন, সামাজিক মূল্যবোধ, আলোচনা, সমালোচনা, পাপ, পূণ্যবোধ আর স্বাধীনতা দেয়া হয় তাহলে সে সবধরনের জৈবিক চাহিদা মেটাবে।
তাহলে রঞ্জু যদি নেমে যায় এই নরখাদকরা এই মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া অস্বাভাবিক কিছু না। তবে রঞ্জু আগ বাড়িয়ে মেয়েটাকে কিছু বলতেও পারছে না।
মেয়েটি ভীত যে তা সন্দেহ নেই। যখন মেয়েটি হেল্পারকে বলল মিরপুর যাবে, তাই রঞ্জু হেল্পারকে বলল—
“ভাই, আমিও মিরপুরই যাব।”
মেয়েটি কথা শুনে তার দিকে চোখ বড় করে তাকাল এবং ছয়টি নরপ্রাণী এককজন আরেকজনের দিকে গভীর সন্দেহ নিয়ে তাকাল।
হেল্পার বিষণ্ন মনে উত্তর দিলো—
“ওস্তাদ আজকে আর খেপ দেয়া যাবে না। কপাল খারাপ। গাড়ি টানেন”।
.
.
মাহবুবুল ইসলাম
জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮১। পৈতৃক নিবাস— মাধবপুর, হবিগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ: জল ও জলোচ্ছ্বাস (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০১৯, প্রকাশক— চয়ন)। শিশির-হরফ (কবিতা) (প্রকাশ সাল— ২০২০, প্রকাশক— চারবাক)।