নরওয়েজিয়ান উড (সম্পর্ক-ত্রিভূজ)
আমি তোমাকে পড়ছিলাম— জান,
আকাশের রঙ মাঝেমধ্যে লাল হয়
যেন প্রেমরশ্মি রঙীন করেছে শরীর
শুনতে শুনতে নরওয়েজিয়ান উড
মনে পড়ে বিটলস্, আহা মুরাকামি
পড়তে পড়তে নরওয়েজিয়ান উড,
দেখি প্রান্তরে ঘাস জন্মেছে অনেক
ওখানে কি ঘোড়াও চড়ে কোন
তাহলে ওটার পিঠে চড়ে বোঝা যেত
সম্পর্ক কোন এক ত্রিভুজ কি-না
আমি তখন তোমাকে পড়ি— জান,
‘মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায়
কার্তিকের জোস্নার প্রান্তরে’ এখনো
মাত্রা
আমরা তিন জন ত্রিমাত্রিক জগতের…
পূর্ণ পৃথিবীর ছায়া সৌরবলয়ে যেভাবে ঘোরে
আমরাও প্রদক্ষিণরত এই সবুজ ভূগোলে
আমাদের দেহের ভাগ আত্মার অবিচ্ছেদকে স্বীকার করে
তাই বলে, একদিন যে গান রেখে এসেছিলাম অখণ্ড
তার স্মৃতির তুমুল মাপ নিয়ে বেঁচে রয়েছি এখনও
কিন্তু বেঁচে থাকাও এক তুখোড় ব্যাপার
অবর্ণনীয় লগবই, আমি তার পৃষ্টা খুলে দেখি,
আমরা তিনজন ত্রিমাত্রিক থেকে একমাত্রিক হয়েও
বহুমাত্রিক!
সূর্য্য উদয়ের কালে
যে ভাষা নিয়েছে কেড়ে মানুষের ঘুম
সে ভাষায় আমি শুধু তোমাকে ভেবেছি
তোমাকে ভাবা— তার যে সুখ— দিনরাত
আলোর সাথে অন্ধকারের মাখামাখি…
দেখি, সূর্য্য উদয়ের কালে, জড়ানো আবেশে
ভাষা ছড়িয়ে দিয়েছে শব্দের এত ঔজ্জ্বল্য
আমার শহরে, ভোরের শুরুতে স্নিগ্ধ আলো…
পথ
সেখানে দেখা পেয়েছিলাম সেই কুমারীর
যার সুগন্ধিযৌবন অক্ষরের মত
ছড়িয়ে পড়েছিল পৃষ্টায়
আর নিমগ্ন পাঠক খুঁজে পেয়েছিল তাঁকে
পৃথিবীর জ্ঞান ও কৌশলে
যাতে সৃষ্টিতত্ত্ব যথার্থ মর্য্যাদা পেয়েছিল,
আমি সেই কুমারীর ঘ্রাণে ঘুরেছি জ্যা-এর মত
কেন্দ্র থেকে তার দিকে
কোন তত্ত্বই আমাকে তার মত করে
বিবশ করেনি
অথচ দেখার জগতের বাইরে তোমাকে যে খুঁজেছি
প্রমাণ সাপেক্ষে
লিপিবদ্ধ করেছি যে শাস্ত্র
অভয় দিয়েছি— তোমাকে দেখার বহুকীর্ণ পথ
এখনো রয়েছে বাকী…
বানু ও বিরহী
উন্মাতাল বিষাদের গান শুনি— বানু, সূর্য্যাস্তের
ঠিক আগে পৃথিবী যেভাবে ঠাণ্ডা হয়ে আসে
শান্ত সেইরকম হৃদয়েরে বলি— এক নিমেষে
পথের দূরত্ত্ব অনেক অনেক হয়ে যায়, যদি
তা মৃত্যুগন্ধের হয়!গন্ধ, চূর্ণ-প্রতিভার একেকটি টুকরো
বিষাদ পেরিয়ে অধিবিদ্যার জগত থেকে আসেআমার হৃদয়টারে কচলাই দেয় বানু।
সম্মোহন এক অজরবিদ্যা বটে, সে বিদ্যারে
ভর করে আমি ও বানু পাতা গুন ডাল
ভাগ গাছ গুন দুই যুগ দূরত্ত্বে বেঁচে থাকি
তবিয়ত ঠিক রেখে*
যখন খুব কাছে যাই, তখন বুঝে যাই—
দূরত্ত্ব-বিচ্ছিন্ন বিষয়ের সাথে সংযোগ নাইআমার ভাষা পণ্যের অধিকারে চলে যায়
বানুর সাথে সম্পর্কেও আসে প্রগলভতা!মেরিনরোডে খুঁজে ফিরি হারানো অস্তিত্ত্বকে
একদিন এইখানে তাক করে দাঁড়িয়েছিলাম
একদিন লতাগাছফুলেদের দৃঢ়তা শিখেছিলামআমি ও বানু আফিমগলা চোখে দেখে যাই
*
চমকপ্রদ ভোর এলেই তোমার দিকে তাকাই
রাজনীতির বাতাসে সংকেত ও চিহ্নের চাঞ্চল্যভোর হতে না হতেই যারা দৌড়াতে যায়
তারা জানে বানু কী ধীরে অবগুন্ঠন খোলে!নাচগানহল্লা অনেক হল, মিথের ব্যবহারও
আশল কাজটি হতে আর কত দেরীঃ সম্প্রীতিশিশিরের শরীর থেকে কুড়িয়ে নিয়ে জলকণা
প্রভূত আলোচনা হলো, বানু এখনও নির্জনতার দেহের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে আড়ষ্টভঙ্গী
সে কিভাবে পারে খুলে দিতে প্রকৃত জানালা
স্বরূপ সুপান্থ
জন্মঃ ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ, বড়ঘোপ বাজার, কুতুবদিয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাস ও ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ জলকামানের বই (বাতিঘর, চট্টগ্রাম)।