ফিরতে পারি না
আমার চেয়ে বেশী শব্দ জানে সমুদ্র
তার গল্পে আমার চেয়েও অধিক বাঁক
গর্জ্জে ওঠে ফের ফিরে যেতে পারে সে
আমি তুচ্ছ নীরবতাও ভাঙতে পারি না;
আমার জানা নেই ফেরার ডাক কবে
সমুদ্র ভাটার ডাক রোজ রোজ শোনে
যায় আবার ফিরে আসে, সে পরিমিত
জানে কতটুকু গেলে ফিরে আসা যায়;
আমি কোথাও গিয়ে আর ফিরতে পারি না।
পৃথিবীর পায়ে পায়ে ধুলোর মত জীবন
বেলকনীতে ঘাম ও ধুলা মুছে রাখা গামছাটা দুলছে
নিষ্ক্রান্ত প্রকট ঘ্রাণের ক্লান্ত নেশায়,
ফ্যানের বাতাসে মাকড়সার একটি ঠোল
ছেঁড়া জালে সার্কাস সার্কাস খেলছে,
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মুখে খুরের শব্দ তুলছে টেবিলের মার্বেলঘোড়া;
জীবনের নামেবিষাদেই জীবনকে উজ্জ্বল দেখে পৃথিবী
পৃথিবীর পায়ে পায়ে ধুলোর মত জীবন এখানে—
পা ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য প্রতিদিন পদাঘাত করে পৃথিবী,
বাদুড়ঝোলা হয়ে জীবন ঝুলে থাকে তবু পৃথিবীর পায়ে পায়ে
ধুলোর মত— উদ্দেশ্যহীন।
পৃথিবীর পার্কিংয়ে
মানুষ হেঁটে হেঁটে পথ শেষ করে রাখে,
মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ঘুম শেষ করে রাখে—
কোন একদিন শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য,
কোন একদিন শেষ হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেশেষ হলে, জংশন ধরে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় পার্কিংয়ে;
পৃথিবী নির্ভার থাকে, নির্ভয় থাকে— কেউ যায়নি যেন, কিছু হয়নি যেন!সহস্রবছর ধরে অপেক্ষায় সহস্রাধিক বছরের যাত্রা পথে
পৃথিবীর পার্কিংয়ে মানুষ শুয়ে থাকে কবর হয়ে
পুরোনো ধুলোময়লা গাড়ির মত সারিবদ্ধ কঙ্কালে।
প্রকট হবে সব অবহেলা
নির্জনতাকে ছুঁয়ে গ্রহণ করেছি অবহেলা
অবহেলাকে মাথার উপর ধরে
নীরবে আঘাতকে পৌঁছে দিয়েছি গভীরেযদি কোন দিন
ব্যথাকে রূপ দিতে পারি
চুপ হয়ে যাব তবে
আর বলব না কথাউচ্ছ্বাসে সেদিন
উচ্চারিত হবে হয়ত শংসার হর্ষধ্বনি
আর মুখোশ ঢলে পড়ে তখন হয়ত
ব্যথার উৎসবে প্রকট হবে সব অবহেলা
ভাসছে সব
কোথায় যেন যাচ্ছিলাম মনের মাঝখান দিয়ে
সামনে সব খোলা— আকাশ, মাঠ— বাড়ী নেইগুদাম ঘরের দরজা খোলা
ঢেঁকিতে হলাদের শব্দ
চাপকলের পানি হাসছে
ধূপের ধোঁয়ায় লাশের মুখ কেকের মত, ভাসছে
মাঠ থেকে দৌড়ে আসে এক সাদৃশ্য দৃশ্য
আসতে আসতে ডুবে যায়—
মাটিতে মিলিয়ে যায় গুদামঘরের বাড়ী, দরজার শব্দসন্ধানে চোখ যেন কোথায় নিয়ে যায়
চোখের ভ্রম মনের মাঝখান দিয়ে হাঁটে—
ভাবনার ভেতর ভেসে ওঠে বিলীন হওয়া
তলিয়ে যাওয়া ধোয়া হয় চোখের ঘাটে।
রাতকে পান করি
চোখ খোলা রেখেই ঘুমাতে হয়
ঘুমের ভেতর
পান করি রাতের গলা জড়িয়ে ধরে রাতকেসাবধান থাকি, খুব সাবধানে এলোমেলো হই
জড়ানো ঠোঁটে চুমুক দিলেই রাত সুরসুর করে
তার গলা থেকে নেমে
উঠে আসে আমার গলায়—
বলায় সাবধানে, এলোমেলো হই, ঢালায়
বেশী রাত পড়ে গেলে কেঁদে ফেলি সাবধানে;
রাতের আমি আমারই রাতকে পান করি অমৃতজ্ঞানে।
সেই কোন একজন
নির্জনে কারো চাপা কোলাহল আকার পেয়ে যায়
কেউ সেখানে মনের মত কোন জনকে শোনেসুন্দরকে জীবন দিতে কত আকুতি সেখানে
হতে হবে বলে এখনও যে অপেক্ষাকে জানেসেই কোন একজন
এখনও আছে
গভীর মনোযোগে সারারাত জেগে থাকে ওৎ পেতে—
সুযোগ পেলেই এঁকে যায় তার নিজের ছবি
আমার নিড়ানো মনেযে তার একা চোখে পৃথিবীর প্রেমকে আগলে রাখে
যে তার শূন্যমনে আমাকে নিজের রঙ দিয়ে আঁকে
কুহক, মায়া ও ঋষির প্রতিভূ
মোহগ্রস্ত ভোর, সেখানে; বিষণ্ন কুহক বলে— ঘূর্ণায়মান এলোমেলো দোলা, কেন এখানে একা একা দেখি, এমন নির্জন অকুস্থলে; শোন— হে ঋষিশ্রেষ্ঠ! মিছে ভেক নিয়ে কোথায় যাও, অযথা! কোথায় তোমার জলসাকাতর বাতী, কিঙ্কর! কোথায় আনন্দ, স্বাদ! বিষাদরমণে ডেরা মূর্চ্ছা গেল বলে!
ঘোর হাসে, ক্ষেমঙ্করী মায়া বলে— নির্দ্দয় দাসভূমীতে শঠতার বিষাদ মুছে, ভুলে, বহুদিন তার যাপন বিরল আপনে, অকুতোভয়; বোকা হতাশা, শোন— সব তার মন বিরচিত ধ্যানে, প্রণমিত, তার পা এক স্থানে বসে সব স্থান ঘুরে আসে; ভুল ঢেউ দেখতে যেও না, বেখেয়ালে— দৈব আলোড়ন দেখ, দেখ, তরঙ্গে সাঁতার হয়ে মিশে আছে দোলা, সেখানে সুষমা ছায়ায়, মায়া তপস্যায়, চৈতন্য চর্ব্বণে, তার অভিনিবেশ মঙ্গলের মগ্নধ্যানে।
যার দৃষ্টি মায়াপরায়ণ, সুন্দর, মন জানে, মনের অগোচরে; মৌনতায় একার সন্ন্যাস, একা থাকে, একা একা ভোরে; শোন— মায়া পেলে প্রাণ ঠেলে দেয়, ডাক এলে মৃত্যুকে বসিয়ে রেখে ফিরে, এর চেয়ে বেশী আর কী! সব জানা তার, গুণ চূর্ণনে, স্থূলদৃষ্টি, বসে থাকে অবলা মূকে, অবোধ খেয়ালে— সে খেয়ালে নুনজল ঢালে না ঋষি, শুধু বলে— মঙ্গল তথাস্তু।
মঈন ফারুক।
জন্ম : ১৭ আগস্ট, ১৯৮৩।
গ্রন্থাবলী :
সাদা ফুলদানি (প্রথম কবিতার বই), প্রকাশ: ২০০৭।
বৈরী হাওয়া, প্রকাশ: ২০০৮।
অশ্রু গোলাপজলের মতোই সুঘ্রাণ, প্রকাশ: ২০১৭।
এ শহরের মানুষ হাঁটে না রাস্তা হাঁটে। প্রকাশ: ২০১৮।
কে যেন আছে, প্রকাশ: ২০২১।নিবাস : চট্টগ্রাম। সম্পাদনা : অঙ্গীকার (শিশুতোষ ম্যাগ), চন্দ্রবিন্দু (ছোটকাগজ)।