উত্তরাকাশ
জিজ্ঞাসার পরেও এক অপর জিজ্ঞাসা
ডানা মেলে ধরে
তোমাকে আজন্মকাল
খুঁজে যেতে হবে সেই উত্তরাকাশ
পৃথিবীর ভেতরে আরো এক পৃথিবী আছে
মৃত্যুরও আছে জন্মলাভ
আয়ু এক অপরিসীম হাওয়া
শক্তিসঞ্চিত দিক্বলয়
এই শীতে, জানি
দুপুর এসে গিলে খাবে কুয়াশা
তবু দেখ,
শিশিরের মৃত্যু নেই!
মায়া
লোকটাকে দেখতে হারিয়ে ফেলা
রাস্তার মত লাগছে
পকেট থেকে অতীত বা’র করে
মিলিয়ে নিই
না, চেনা যাচ্ছে না
দাউদাউ— ঝাউমনে উজ্জ্বল
জ্যোৎস্না লেগে আছে
কুয়াশার ভেতর দ্রুত পা ফেলে
বাড়ী ফিরছে, চাঁদ…
প্রতিফল
কেটে কেটে গাছকে দুঃখ দিয়েছি
গাছ আমাদের দুঃখ দিতে পারেনি
এই জেনে—
কোন কোন ফুল প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে
সৌন্দর্য্যে মোহিত করে
কাঁটা দিয়ে আঘাত করে আমাদের!
শোক
ফুলটি ঝরে গেছে
তার ম-ম গন্ধে
ভেসে আসে কেবলি
পাপড়িসজ্জার আনন্দগান …
আজকে ছুটির দিন
কয়েক দশকের ধুলা মেখে
শুয়ে পড়েছি রাস্তার ওপরনিঃসঙ্গতার ট্রাকভর্ত্তি চাকা
বুক কেটে চলে যায় তোমার শহরের দিকেএমন চৈত্রে, নিরন্ন বাতাস গায়ে
পৌরসভার রাজনৈতিক শো-ডাউনের মত
পথজুড়ে হাঁটছি রোদমিছিল…যেন তুমি দূর, শতাব্দীর ছায়াঘেরা মাঠ
সারা সপ্তাহ স্কুল পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো
গ্লানিবদ্ধ মুখ নিয়ে আমি;তোমার কাছে গেলে মনে হয়— আজকে ছুটির দিন…
আবার জন্মের আগে
যেকোন আলোর নীচেই
তুমি বেশী উজ্জ্বলযদি থাকে ভেতরে
নিরেট বর্ণচ্ছটাআগুনের চেয়ে অধিক
হবে তেজস্ক্রিয়যদি সঞ্চারণ কর
দাহ্যক্ষমতাঅর্থকে সঙ্গী নয়
তাকে বল চির-আগন্তুক
প্রতি সাক্ষাতে ইশারা পাল্টে যাবেযদি পারো—
ভাষাকে উপ-মা করো
একদিন জন্মপরিচয় পাবে
ডমিনেন্স
প্রতিটা ফুলের বাসনা
যেন সে ঝরে যেতে পারে
মৃদু বাতাসের রেশমছোঁয়ায়তবু বিনাশের নিয়তি
আসে ঘুরেফিরেখোঁপায় গুজবে বলে
কোনো স্বেচ্ছাচারী হাতে
ছেঁড়া হয় ফুল …রক্তহীন, নিষ্করুণ আঘাতে
স্বাধীনতা
স্বাধীনতার নদীতে আমরা নিশ্চয়ই সাঁতার কাটব না
কিন্তু সাঁতার কাটার মত স্বাধীনতা আমাদের চাই।
ডিসিপ্লিন এন্ড চেয়ার
শুনেছি চার পুরুষ আগে আমরাও জমিদার ছিলাম
আর বাড়ীতে ছিল এক আলিশান চেয়ারআমার পিতা, প্রপিতামহ আর তার প্রপিতামহদের সকলেই
সেই চেয়ারে বসতেন
এবং তারা প্রত্যেকেই ছিলেন বাড়ীর
ভীষণ কঠোর, জেদী, একরৈখিক শাসনকর্ত্তাযারাই ঐ চেয়ারে বসত
কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকাত আর
কথা বলত রূঢ় ভঙ্গিমায়তাদের সামনে এসে দাঁড়ালে মনে হত
যেন তিনি পাহাড়
আর অন্য সকলের দৃষ্টি পড়ে থাকত মাটিতেএ’সবই ছিল চেয়ারের ডিসিপ্লিন
এক ধরণের আত্মবদ্ধ গাম্ভীর্য্যতা!সেই চারপুরুষ আগেকার চেয়ার
এখনো আছে বাড়ীতে
তার স্বয়ম্ভু বলবত্তা নিয়েএবং এরকমই থাকবে
যতক্ষণ না কেউ এসে ছুড়ে ফেলে দেয়আর চালু করে নয়া ডিসিপ্লিন…
ছাতা ফসকে যায়
বৃষ্টির মত সে জল
চোখ গলে নামে, অতল
শ্যামল, কি আশ্চর্য রূপ
নীল হাসি, জলরাশি, কাঁপে
যেন শীতের শৈবাল
ঘুমিয়ে আছে দেহতাপে
তুমি বোঝনি সে গান
সুর যার ভাষাভাষা, ম্লান
তুঁতবনে উদিত হয়, সঙ্গীন
কোমল জ্যোৎস্নার স্নায়ুবনে
মেঘের অধিক ভাসে বান
মৃদু ডাক আসে, হাওয়াকলে
ছাতা ফসকে যায়, হঠাৎ
আশরীর, ভিজে যাওয়ার ছলে
সাঈদ শ
পরিচিতি— ১৯৯৭ সালে গাইবান্ধা জেলায় জন্ম। বর্ত্তমানে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত। ২০১৫ সাল থেকে লেখালিখির সাথে যুক্ত।
ইমেইলঃ skylarkshathil@gmail