ভাষা
মানবের মান বহনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবনা …
কারণ এই যে,
ভাষাই শব্দের মর্ম্মে বহন করছে সকল অর্জ্জন …
জীবন বৈচিত্রে
মানবজাতির সাংস্কৃতিক বিন্যাসে যে আলাদা আলাদা জাতিসত্ত্বা গড়ে ওঠেছে তার পেছনে রয়েছে (পরমা প্রকৃতি ও তার ক্রিয়ার) নানান ভাষায় রূপান্তর!
আর
এই রূপান্তরের যজ্ঞের ধ্বনি থেকে বর্ণের মালায় বরণকৃত কথারা নানানরঙে রূপ পেল ভাষের আধার ভাষায় … মানুষের ইতিহাসের সকল অর্জ্জন (…) শাব্দিক বিজ্ঞানে ধারণ করে রেখেছে
মানবপ্রকৃতির উদ্ভাবিত বর্ণমালা—
এই
ভাষার মৌল যে (ধ্বনি কে বরণ করা) বর্ণ, তার খবর কতটুকু জানি আমরা? … বিশেষ করে আমাদের মাতৃপিতৃভাষা বাঙ্লার …
মানবের মান বহনের সময় ও কালচেতনাকে (শব্দে ও ভাষায়) ধরে রেখেছে ৫০টি বর্ণের বিজ্ঞান,
… সময় ও কালচেতনাকে আগামী কালের গতিশীলতায় গিলে ফেলা (যে ভাবে মানব ইতিহাসের অজস্র কাল হারিয়ে গেছে মহাকালের গর্ভে …)
সেই
মহাকালরূপী (শিল্পীর মন ও মননে গড়া) প্রতিমাতত্ত্বের ভদ্রকালীর হাতে ১টা ও গলায় শোভিত ৪৯ টা মুণ্ডময় অক্ষমালার
(মোদের গরব আহা মরি বাঙ্লা ভাষার) ৫০টা যে বর্ণ—
এর মাঝে
আপাততঃ আমাদের লক্ষ্য হ্রস্ব-ই ও দীর্ঘ-ঈ বর্ণের দিকে …
ভাবের মাজারে কিংবা ভাবের বাজারে কী স্বভাব ধারন করে আছে
এই
প্রেমিকযুগল,
ভাষের আভাসে চয়ন করা যাক, তাহাদের
অর্থের স্পন্দন—
ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষার দর্শন অনুসারে—
• হ্রস্ব-ই = সক্রিয়ণ বা গতিশীলতা বা আধেয় বা পুরুষ …
• দীর্ঘ-ঈ = সক্রিয় বা গতিশীলতার আধার বা প্রকৃতি …তথ্যসূত্র: ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি
হ্রস্ব-ই-র অর্থ সক্রিয়ণ বা গতিশীলতা বা আধেয় বা পুরুষ … আর দীর্ঘ-ঈ-র অর্থ সক্রিয় বা গতিশীলতার আধার বা প্রকৃতি নির্দ্ধারণ করা হল কী ভাবে?—
মাপকাঠী এই—
আমরা যখন মুখে হাঁ করে ‘ই’ উচ্চারণ করি তখন আমাদের কণ্ঠের ধ্বনি (টা-না—আ) প্রবাহিত হয় … এই যে ধ্বনির (টা-না—আ) প্রবাহ, তার যে সক্রিয়ণ, গতিশীলতাময় ক্রিয়ার আচরণ, এর ওপর নির্ভর করে নাম করণ করা হয়, হ্রস্ব-ই = সক্রিয়ণ বা গতিশীলতা বা আধেয় বা পুরুষ …
যেমন—
যা-এর সাথে (গতিশীল) ‘ই’ যোগ হলেই যাই হয় অর্থাৎ যাওয়ার আধার গতিশীল হয়; যাই মানেই গমন, গমন মানেই গতিশীলতা …
‘ই’ ধ্বনির গতি কম, তাই নাম হ্রস্ব-ই।
আবার
আমরা যখন ‘ই’ ধ্বনির উচ্চারণ আরও বেশী প্রবাহিত/গতিশীল করি, তার ধ্বনি দীর্ঘ হয়ে থিতু হয়ে যায়
ই-ধ্বনির প্রকৃতিতে/আধারে, অর্থাৎ ঈ-তে …
তাই
দীর্ঘ-ঈ = সক্রিয় বা গতিশীলতার আধার বা প্রকৃতি …
‘ঈ’ ধ্বনির গতি বেশী, তাই নাম দীর্ঘ-ঈ।
এই
হ্রস্ব-দীর্ঘ-ময় ই-বর্ণের ব্যাবহার বাঙ্লা ভাষায় পুরুষ-প্রকৃতি, আধেয়-আধার (প্রাণ ও দেহ) রূপে বিরাজিত …
বাক্যে শব্দ লেখার সময় হ্রস্ব-ই ও দীর্ঘ-ঈ কোথায় বসবে সেটি নির্দ্ধারিত হয় (ক্রিয়ানির্ভর) অর্থময় কথার গতি (বা পুরুষ) ও প্রকৃতির মাধ্যমে …
ইদানিং
দীর্ঘ-ঈ-মূলক (শ্রেণী, ঈগল, ঈদ, পাখী, বাড়ী, গাড়ী …) শব্দ, হ্রস্ব-ই-মূলক (শ্রেণি, ইগল, ইদ, পাখি, বাড়ি, গাড়ি …) শব্দে লিখা হচ্ছে … যাহার সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য আছে …
উদ্দেশ্য এই—
বাঙ্লা বর্ণমালাকে ধীরে ধীরে দীর্ঘ-ঈ-মুক্ত করা … তাহাদের বয়ান: যাতে লিখার কাজ সহজ হয়, কোথায় হ্রস্ব-ই কোথায় দীর্ঘ-ঈ হবে তা নিয়ে আর ভাবতে হবে না! কিন্তু ভাবছে না … যাহার পরিনতি হবে ভয়াবহ …
কারণ,
বাঙ্লা বর্ণমালা ও ভাষা প্রকৃতি-পুরুষ,
আধার-আধেয়-নির্ভর …
(এখানে হ্রস্ব-ই হল পুরুষ বা আধেয় ও দীর্ঘ-ঈ হল প্রকৃতি বা আধার—
তদ্রুপ,
স্বরে-অ হল পুরুষ বা আধেয় ও স্বরে-আ হল প্রকৃতি বা আধার— স্বরে-অ (পুরুষ) স্বরে-আ (প্রকৃতি)-তে, হ্রস্ব-ই (পুরুষ) দীর্ঘ-ঈ (প্রকৃতি)মূলক আধারে স্থিত হয়) … আর এই আধার-আধেয়ের প্রণয়বিধুর জননলীলা/ফানাফিল্লাহ যদি থেমে যায় তবে ভাষা হয়ে উঠবে জড়, একরৈখিক … পুরুষশাষিত … প্রকৃতিবিনাশী …
অথচ
(দরিদ্র) ২৬টি বর্ণমালার ভাষাকে আইডল ভাবা (সম্পৎশালী) ৫০টি বর্ণমালার মালিক বাঙ্লাভাষী পণ্ডিতেরা নিজেদের দরিদ্রদের সমগোত্রীয় করার জন্য কাটাছেঁড়া করেছে/করছে
(উত্তারাধিকারে পাওয়া) তাহাদের পূর্ব্বপুরুষের যে বর্ণবিজ্ঞান/শব্দবিজ্ঞান/ভাষাবিজ্ঞানকে …. তার জননলীলার ব্যাকরণ না জেনেই! …
দীর্ঘ-ঈ-মূলক ব্যাবহার/হালচাল(না) (…)
ইংরেজী ভাষায় কেমন, তাহা জেনে নেওয়া যাক—
Eagle শব্দে ea (International phonetics alphabet বা IPA-চিহ্নে i:) হল দীর্ঘ ঈ,
অথচ বাংলায় করা হয়েছে ইগল, Eid কে করা হয়েছে ইদ।
meaning হবে মীনিং,
কারণ meaning এর ea/i: বাংলায় দীর্ঘ ঈ হয়।
একইভাবে read যদি রিড লিখেন তাহলে ea/IPA চিহ্ন i: -এর মত হয় না।
এটা দীর্ঘ হয়, রীড বলতে হবে।
বর্ত্তমানে
বাংলা অ্যাকাডেমী শব্দের বানানে দীর্ঘ-ঈ কার উঠিয়ে দিচ্ছে …
(বিদেশী শব্দ বলে!)
এটা ব্যাকরণে রীতিসিদ্ধ না … এতে বেশী সমস্যা হবে। …যেমন:
teacher উচ্চারণ টীচা(র), এখন টিচার বললে তো হবে না।
Ship (শিপ) আর Sheep (শীপ) ভিন্ন। আবার ইংলিশ ধ্বনিগুলো বেশীরভাগ মহাপ্রাণ।একইরকমভাবে ড (ইংলিশ) D নয়। সেটা di:/ডী।
B ব নয় bi:/ বী,
E ই নয় i:/ঈ (তবে e এর phones আছে ভিন্ন ভিন্ন)।
c সি নয় si:/সী (এটারও phones আছে)।
tip(টিপ) teeth(টীথ) ভিন্ন দুটো উচ্চারণ,
এরকম top শব্দে ট নয় t এর মহাপ্রাণ ধ্বনি ঠপ হয়। teacher-এ টীচার t:/টী হয়।তাই সব ভাষাকে মূল ভাষার উচ্চারণেই রাখা হোক।
তথ্যসূত্র: A guide to correct speech by SM Amanullah
— বয়ানে, মাহবুবুল ইসলাম
ওপরি আলোকে
(আইডল ভাবা) ইংরেজী ভাষায় দীর্ঘ-ঈ বোঝাতে (বর্ণে) ea, ee, (চিহ্নে) i: লিখা হয় …
যেহেতু তাহাদের ‘দীর্ঘ-ঈ’ লিখতে
(continue/গতিশীলতামূলক বর্ণ) হ্রস্ব-ই/i-এর বিপরীতে অন্যকোন (মৌলিক) বর্ণ নেই, তাই তারা অন্য মৌলিক বর্ণ (শব্দের বানানভেদে) কখনো e ও a, কখনো e ও e কখনোবা I ও : -এর যোগসাধন করে আরেকটি যৌগিক বর্ণ দীর্ঘ-ঈ বোঝাতে …
যাহা হল (বর্ণে) ea, ee, (IPA-চিহ্নে) i:।
ইংরেজী ভাষার
ভেতরের খবরাখবর পাঠে
দেখা যাচ্ছে, এই দীর্ঘ-ঈ-মূলক ব্যাবহার নিছক ধ্বনি তাত্ত্বিক … এর পেছনে বর্ণের কোন অর্থগত কারণ নেই …
কারণ অন্যত্র—
(উদাহরণ স্বরূপ) Ship (শিপ) বলতে/লিখতে i আর Sheep (শীপ) বলতে/লিখতে ee-র ব্যাবহার যদি না করে শব্দদুটিতে কেবল i ব্যাবহার করে তাহলে Ship (শিপ) বা জাহাজ আর Sheep (শীপ) বা ভেড়া একই উচ্চারণের হয়ে যাবে … এ ধরণের অন্যান্য শব্দগুলিও …
যার কারনে শ্রোতা বা পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বে, জাহাজ বলল না ভেড়া বলল … অথবা জাহাজে ভেড়া উঠাবে না ভেড়াতে জাহাজ উঠাবে এই নিয়ে …
সাথে ধ্বনিকেও গুরুত্ব দেওয়া …
কিন্তু বাঙ্লা ভাষার ব্যাকরণ ভিন্ন … ভিন্ন এ কারণে যে বাঙ্লা ভাষার যে মূল, ক্রিয়াময় বর্ণ, এর প্রত্যেকটির রয়েছে অর্থের সংসার … (দ্রষ্টব্য: ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি) ।
বাঙ্গালীর ইতিহাসের ঘোলা জলের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে (হারিয়ে যাওয়া বর্ণার্থ) যাস্ক, পাণিনি, হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের পথ ধরে সম্প্রতি তাহা পুনোর্দ্ধার করেছেন ভাষাতাত্ত্বিক কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী, যার নাম, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি …
এই যে বর্ণের পেছনে রয়েছে/আছে অর্থের ইতিহাস, যাহা ইংরেজী ভাষার নেই, তাই তাহাদের দারিদ্রকে আড়াল করার (ভাষাতাত্ত্বিক) নাম মীনিং ইজ আরবিটারি (বা অর্থ আকাশ থেকে পাওয়া) …
এই নিয়ে বাংরেজরা গর্ব্ব করতে পারে … বাঙ্গালীরা পারে না …
কারণ
বাঙ্লা বর্ণের অর্থ আকাশ থেকে পাওয়া না … এর রয়েছে ঘটনার/ক্রিয়ার আচরণময় অর্থের বিজ্ঞান …
আর এই অর্থের বিজ্ঞানকে না জেনে
বাঙ্লা ভাষায়
ধীরে ধীরে সবকিছুতে (‘দীর্ঘ-ঈ’ ফেলে দিয়ে) শব্দের বানানে হ্রস্ব-ই ব্যাবহারের চলন হলে কী হাল হবে তাহার অনুসন্ধানে কয়েকটি শব্দকে (হ্রস্ব-ই ও দীর্ঘ-ই-কার কার্য্যমূলক ভাবে) বিশ্লেষন করে দেখা যাক—
যেমন—
পিণাকী, নবী, পাখী, বাড়ী, গাড়ী … (* পিণাকি, * নবি, * পাখি, * বাড়ি, * গাড়ি …)
• পিণাকী = পিণাক + ঈ (সক্রিয়তা/গতিশীলতার আধার) > শিব… অর্থাৎ পিণাক এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী শিব… তাই শিবের আরেক নাম পিণাকী…
[পিণাক = প + ই + ণ + আ + ক > পায়ী + সক্রিয়ণ/গতিশীলতা + টঙ্কারণের রহস্যরূপ + অস্তিত্ব/আধার + কারী অর্থাৎ সক্রিয়ণ বা গতিশীল পায়ীর টঙ্কারণের রহস্যরূপের অস্তিত্ব বা আধার-কারী।
অথবা
পিণাক > শিবের ধনুক বা হরধনু > প্রলঙ্কারী অস্ত্র।]
* পিণাকি = পিণাক + ই (সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue)
অর্থাৎ পিণাক এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (শিব/আধার) এখানে অনুপুস্থিত… তাই পিণাকি লিখলে পিণাকের সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue বোঝায়, পিণাক এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (শিব/আধার) বোঝায় না …
ক্ষ্যাপা বলছেন,
‘‘আমি পিণাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দণ্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচণ্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য, আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!’’
……………
• নবী = নব + ঈ > নব-এর গতিশীলতার আধার > নবকে গতিশীল/continue করেন যিনি, বার্ত্তাবাহী।
[নব = ন + ব > না-কৃত ও হ্যাঁ-কৃত + বাহী > না-কৃত (প্রচল বিধান) ও হ্যাঁ-কৃত (নতুন বিধান)-বাহী। (আরবীতে নাবা শব্দের অর্থ বার্ত্তা) সূরা : নাবা।]
* নবি = নব + ই > ই (সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue) …
নব-এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (… ঈসা, মুসা, মোহাম্মদ … বা আধার) এখানে অনুপুস্থিত… তাই নবি লিখলে নব/বার্ত্তার সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue বোঝায় নব/বার্ত্তার সক্রিয়তাকারী
বা গতিশীলতাকারী
(… ঈসা, মুসা, মোহাম্মদ … বা আধার) বোঝায় না …
নবী বা নব/বার্ত্তার সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারীর বন্দনা শোনা যাক, দরশনকারীর কণ্ঠে—
“ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস, দেখবি যদি আয়” …
• পাখী = পাখ + ঈ > পাখ-এর গতিশীলতার আধার > পাখকে গতিশীল/continue করে যে …
[পাখ = প + আ + খ > পায়ী + অস্তিত্ব/আধার + করণস্থিতি > পায়ীর অস্তিত্বের করণস্থিতি করে যাহা। পাখের আধার পাখা, পাখার আরেক নাম ডানা।]
* পাখি = পাখ + ই (ই > সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue) …
পাখ-এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (পাখী/আধার) এখানে অনুপুস্থিত…
তাই পাখি লিখলে
পাখ-এর সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue বোঝায়, পাখ-এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (পাখী/আধার) বোঝায় না …
এই পাখীর বিহনে,
লালন সাঁইজী, গাইছে—
“খাচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়…
তারে ধরতে পারলে মনবেড়ী দিতাম পাখীর পায় …”
• বাড়ী = বাড় + ঈ > বাড়-এর গতিশীলতার আধার। অর্থাৎ বাড়ের গতিশীলতা/continue-কে ধারণ করে যাহা …
[বাড় = ব + আ + ড় > বাহী + অস্তিত্ব/আধার + ডয়নের রহস্যরূপ অর্থাৎ বাহীর ডয়নের রহস্যরূপ, বাড়া/বেড়ে উঠা।
নিকুঞ্জে …
বাড়ীর আঙিনায়
সবুজ পাতায় শাখায় শাখায় … সহজ সাধনে … বাড়িতেছে কুমড়ো লতাটি, ফুলেফুলেফলেফলে …]
* বাড়ি = বাড় + ই [ই (সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue) …]
বাড়ের সক্রিয়তার বা গতিশীলতার স্থান (বাড়ী/আধার) এখানে অনুপুস্থিত… তাই বাড়ি লিখলে
বাড়ের সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue (শপাং শপাং বেতের বাড়ি অথবা (বেত বা) বাহীর আধারের গতিশীল (উড়্)ডয়নের রহস্যরূপ) বোঝায়, বাড়ের সক্রিয়তার বা গতিশীলতার স্থান (বাড়ী/আধার) বোঝায় না …
পাঠ করা যাক, বাড়ীর কবিতা—
“বাড়ী যাব, বাড়ী …
ডাকছে আমায় নাড়ী।
টানটী আমার রয়েছে লুকানো
নদীর কিনারে …
বাড়ী যাব, বাড়ী …
ডাকছে আমায় নাড়ী,
নাড়ীটী আমার রয়েছে পোঁতা
বটের শিকড়ে …
বাড়ী যাব, বাড়ী …
ডাকছে আমায় নাড়ী।
মনটী আমার রয়েছে বাঁধা খেয়াপারের ঘাটে …
দূরে
নক্সী কথার মাঠে …”
— আরণ্যক টিটো।
• গাড়ী = গাড় + ঈ > গাড়-এর গতিশীলতার আধার > গামীর ডয়নের রহস্যরূপ/গাড়কে গতিশীল/continue করে যাহা …
[গাড় = গ + আ + ড় > গামী + অস্তিত্ব/আধার + ডয়নের রহস্যরূপ অর্থাৎ গামীর ডয়নের রহস্যরূপ]
* গাড়ি = গাড় + ই > ই (সক্রিয়ণ/গতিশীলতা/continue) …
গাড়-এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী (গাড়ী বা আধার) এখানে অনুপুস্থিত…
তাই গাড়ি লিখলে
গাড়-এর সক্রিয়ণ বা গতিশীলতা/continue বোঝায়, গাড়-এর সক্রিয়তাকারী বা গতিশীলতাকারী
(গাড়ী বা আধার) বোঝায় না …
সঞ্জীব চৌধুরীর কণ্ঠে শোনা যাক, গাড়ীর গীতিকা—
“ চড়িয়া মানবগাড়ী যাইতেছিলাম বন্ধুর বাড়ী
পথিমধ্যে নষ্ট হইলে উপায় মেলে না।
গাড়ী চলে না, চলে না… চলে না রে … গাড়ী চলে না “
এভাবে ই ও ঈ যুক্ত বাঙ্লা ভাষার অন্যান্য শব্দগুলোকে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে, একই পদ্ধতিতে গড়া ই ও ঈ-এর সংসার … ঘরকন্না …
ওপরি আলোকে
ঈ-যুক্ত শব্দগুলিতে কাজ করে গতিশীলতা/continue ও গতিশীলতার/continue-র আধার বা স্থিতি।
ই-যুক্ত শব্দগুলিতে কাজ করে গতিশীলতা/continue ।
যেমন—
পিণাকী, নবী, পাখী, বাড়ী, গাড়ী শব্দগুলিতে বিরাজ করছে ক্রিয়া (আধেয়) ও ক্রিয়াকারী (আধার) কিংবা প্রত্যয় ও প্রকৃতি।
আর
পিণাকি, নবি, পাখি, বাড়ি, গাড়ি শব্দগুলিতে বিরাজ করছে ক্রিয়া (পুরুষ বা আধেয় বা প্রত্যয়) ।
পিণাকী, নবী, পাখী, বাড়ী, গাড়ী শব্দের বিশ্লেষনে পিণাক, নব, পাখ, বাড়, গাড় শব্দের অর্থের বিশ্লেষণ প্রধান না, পিণাক, নব, পাখ, বাড়, গাড় শব্দের সাথে ঈ-মূলক সক্রিয়তা/গতিশীলতার আধার যুক্ত হয়ে
কী ভাবে পিণাকী, নবী, পাখী, বাড়ী, গাড়ী হয়েছে তাহাই প্রধান।
যেহুতু পিণাক, নব, পাখ, বাড়, গাড় শব্দগুলো আগেই তৈরি ছিল … অর্থাৎ আধেয়/পুরুষ/প্রত্যয় সাধনের আগেই (শব্দতত্ত্বের নিয়মানুসারে) আধার/প্রকৃতি তৈরি হয়েছে …
যে ভাবে তৈরি হয়েছে এ মহাবিশ্ব— প্রকৃতিস্বরূপা, এবং তাহাতে লীলাপরায়ণ ক্রিয়া আধেয়/পুরুষ/প্রত্যয় …
আধেয় স্থিত হয় আধারে,
আধেয় ছাড়া আধার, আধার ছাড়া আধেয় মূল্যহীন …
এখন
কেউ যদি শব্দের সাথে অর্থের সম্পর্ক খোঁজেন তাহলে লিখার সময় জেনেবুঝে লিখতে হবে,
যেহুতু তিনি অক্ষরজ্ঞানসম্পূর্ণ … নতুবা, (অ+গাধ না) অল্প বা গাধের আধার (গাধ + আ) গাধা হয়ে যাবেন অর্থাৎ অক্ষরজ্ঞানহীন …
অর্থময় শব্দকে (বানানে) বানাতে হয়, বর্ণের অর্থ বুঝে …
ভাষার মালা রচনায় ব্যাবহৃত যে শব্দ, তার রয়েছে অর্থকে বরণ করা বুৎপত্তিগত ক্রমবিকাশ …
সময় পরিবর্ত্তনশীল … বর্ত্তনের ক্রিয়াশীলতায় যদি অর্থের পরিবর্ত্তন না-ঘটে তাহলে শব্দের পরিবর্ত্তন ঘটবে না …
পরিবর্ত্তন
পরিবর্ত্তনকে আবাহন করে …
যার নতুন করে একটি বর্ণ সৃজনের ক্ষমতা নেই
সে কী ভাবে আসে পরিবর্ত্তনের, সৃজনের অধিকার নিয়ে … অনর্থের সংসার রচনায় …
না বুঝে/ব্যাবহারের অক্ষমতাকে আড়াল করার জন্য
এখন
আমরা যদি বাঙ্লা বর্ণমালা থেকে (মৌলিক বর্ণ) দীর্ঘ-ঈ বাদ দিয়ে দিই, তাহলে দীর্ঘ-ঈ লিখতে হ্রস্ব-ই-র সাথে কোন্ কোন্ মৌলিক বর্ণের যোগসাধন করব? … ইংরেজীতে যেখানে করা হয় (বর্ণে) e + a, e + e, (IPA-চিহ্নে) i + : ।
আর এ কাজ আমরা কেনই বা করতে যাব?
যেহুতু শুধু মাত্র উচ্চারণ/ধ্বনির ওপর নির্ভর করে ভাষা হয় না … ধ্বনির পরবর্ত্তী রূপ হল বর্ণ … সুতরাং বর্ণ ছেড়ে ধ্বনিকে প্রাধান্য দেওয়া হল বিজ্ঞানবিরুদ্ধতা …
ধ্বনি থেকে উত্তীর্ণ বর্ণে সৃজিত যে শব্দ ও ভাষা
তার কাঠামো গড়ে ওঠেছে, উঠছে, উঠবে সময় ও তার পরিপ্রেক্ষিতের ক্রিয়াময় আচরণের অর্থকে ধারণ করে … এর সাথে রয়েছে ভু-প্রকৃতি ও জনজীবনের সাংস্কৃতিক যোগসূত্র …
আর
আমাদের ই ও ঈ বর্ণের তো রয়েছে আধেয়-আধার-জ্ঞানের ধ্বনাত্বক ঐশ্বর্য্য … ‘ধন থাকিতে ঋণ করে খায় কোন্ পাগলে?’ …
ক্রমাগত
আধারবিহীন আধেয়ের (ঋণাত্মক) বাংরেজ-আরাধনা করতে থাকলে শব্দের আড়ালে লীলাপরায়ন (আমাদের সমাজসংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত) সহজাত অর্থ হারিয়ে আপন ভাষার দেশে
(ভাষাতাত্ত্বিক কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তীর ভাষায়) ‘একদিন সাংস্কৃতিক ভাবে ভিখারী হয়ে যাব’,
এখন অর্দ্ধ… আগামীতে পূর্ণ …
আমাদের কৃতকর্ম্মে
আগামী প্রজন্ম আক্ষেপ করবেন …
যে ভাবে
মাইকেল মধুসূদন দত্ত আক্ষেপ করে লিখেছিলেন—
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি; —
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে —
“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।
এমন কবিতার কান্নায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফিরেছিলেন, আজ্ঞা পালন সুখে … কিন্তু আমাদের উত্তরপুরুষদের ফেরার পথ থাকবে না, আত্নবিস্মৃতির অতলান্ত থেকে …
বাঙ্লা ভাষার (আগামী প্রজন্মের) সম্ভাব্য বিপদ থেকে উত্তরণের ভার আপনাদের হাতে …
অতএব
প্রিয়
অ্যাকাডেমস্রা, বিষয়টা ভেবে দেখবেন …
আরণ্যক টিটো
জন্ম— জুন, ০৬, ১৯৭৭।
জন্মস্থান— উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
(শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে।
প্রকাশিত কবিতার বই—
ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)।
প্রকাশিতব্য বই—
অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাতাত্ত্বিক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)।
সম্পাদক— চারবাক।
{বটতলার বয়ান : হ্রস্ব-ই ও দীর্ঘ-ঈ বা আধেয় ও আধার [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ বিধি (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) ও প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}