ঘরের সামনে, কারাগার, গমের বাটি, অসুখপ্রবণ ঋতু, উপসংহার || ফাহমিনা নূর

0

ঘরের সামনে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঘরের সামনে যখন
চারজন ফকির এসে সুর কেটে ভিক্ষে করছিল
তখন তাদের বাউল ভেবে ভুল হয়েছে, বেশ হয়েছে!

একজন ছিল অল্প লাজুক, অন্য একজন খুব
উদাসীন।
তৃতীয়জন ভীষণ জেদী, মূল ফটকে দিয়েছে ‘থুঃ’।
চতুর্থজন দরুদ পড়ে দু’হাত তুলে মুনাজাতে বলেছে ‘আমিন’।

রকমফেরে যাইনি আমি
তিন পঁচিশে পচাত্তর হয়, এই হিসেবটা খুব বুঝেছি;
না’ত করেছে তিন জনাতে, একজনাতে দিয়েছে থুঃ
তবু আমি শতেক নোটে একটা হিসেব খুব কষেছি
রকম ফেরে যাইনি আমি।

 

 

 

 

 

কারাগার
~~~~~~~~~~
কুহু কণিকারা লাল রঙ হয়ে বয়ে যায়।
ফুসফুসে বিমর্ষ বাতাস ফেরিওয়ালার মত
হাঁক দিয়ে বলে
দেহ এক সুরম্য কারাগার।

একে একে ধ্বসে পড়ছে আনন্দ মহল।
অধরাকে ধরিনি বলে জাপটে ধরেছিল
সে-ই আমাকে।
আজ বলছে— বিদায়।

 

 

 

 

 

গমের বাটি
~~~
ঘরের বাইরে পা রাখলেই ভীষণ শব্দ
তারই ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে নীরবতা
যেতে যেতে সেই নীরবতা পেড়ে খাই

খেতে খেতে চলে যাই গভীর জনারণ্যে
সে অরণ্যে কত কত ঘটনা ঘটে যায়!
যেহেতু নীরবতা খাই ও পান করি
আমার বোবার্ত্ত মুখ, না শোকার্ত্ত না সুখী
দিন টেনে চলে, টেনে টেনে চলে যায়;

চলতে চলতে পৌঁছে যায়
ট্রাফালগার স্কোয়ারে—
একঝাঁক পায়রার দেখা পায়,
তাদের জন্য বাটিতে গম রাখা আছে
দলে এক পরিযায়ী বাজিকর আমাকে
আমারই ইতিহাস পড়ে শোনায়,
ভূগোলও পড়াতে চায়;

নীরবতা ভেঙে আমি হাই তুলি, বলি—
গমের বাটিতে অনেক কঙ্কর মিশে আছে।

 

 

 

 

 

অসুখপ্রবণ ঋতু
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দ্রব্যমূল্য আর শিলাবৃষ্টির হাত ধরে
এগিয়ে যাচ্ছে এক অসুখপ্রবণ ঋতু।
খেঁজুরগাছেরা সিজদারত,
প্রার্থনায় ক্যাডবেরিজ ছাড়া কিছু নেই।

ক্যান্ডিক্রাশ সাগা খেলতে খেলতে সুখী
পিঁপড়াবাহিনী ছুটছে মলগুলোর দিকে
ওখানে আরও সুখ বিক্রি হবে।

সুখ খেতে খেতে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে
বণিক শ্রেণীর উদবিড়ালের,
রাজনীতি তাদের শখ হতে হতে হয়ে
গেল হাতিয়ার, মাঠে নৃত্য করার।

সুখ খুব বর্দ্ধনশীল
গাছে গাছে, শাখায় শাখায় দুলছে সুখের
পায়রা, কানাগলিগুলো উন্মোচিত হয়েছে—
ঐ পথে ধেয়ে আসছে সুখ।

তবু
পৃথিবীতে রাজত্ব করছে এক
অসুখপ্রবণ ঋতু,
মানুষ তারই দাসানুদাস হয়ে সুখ কিনতে ছুটছে।

 

 

 

 

 

উপসংহার
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জঙ্গলকে রাগিয়ে দিয়ে
হায়েনারা বসে থাকে পোড়া পাখীর
মাংস খাবে বলে,
কেন না খাওয়া-ই তাদের ধর্ম্ম আর
পাখীর নিয়তী।

হে প্রিয় অন্তর আমার
কালাহারি প্রান্তরে তুমি শুধু ধুধু অপেক্ষা।
তুমি শান্ত হও,
ধীর হও, নত হও, যেমন নতমুখী শিশিরবিন্দু
ঝরে পড়বে দুর্ব্বাঘাসের ডগা থেকে।

এই মাটি, এই পৃথিবী,
এই পুষ্পিত বিন্যাসের গান
কিছুই তোমার নয়, ছিল না কখনও
যেমন তুমিও নিমিত্ত কেবল, এই পৃথিবী
তার অক্ষে চলার কারণ সে নিজেই।

আগুনের দোষ নেই
পোড়ানো তার ধর্ম্ম, জলের বিলাপে
কান পাতা তরঙ্গের কাজ আর কান্না তার ধর্ম্ম;
তোমার সংযুক্তি কেবল তোমার সাথে,
বিযুক্ত হও এমন কি আমা হতে।

পেছনে তাকিও না
পেছনে মায়ার প্যারাবল নিরর্থক পিছুটান,
আংশিক ভঙ্গুর পথেই এঁকে দাও পায়ের ছাপ
ভবিতব্য রচিত হয় প্রাকৃতিক নিয়মে।

একটি গোপন তথ্যই কেবল সত্য—
জীবন আসলে মাটি ছাড়া কিছু নয়,
প্রমাণ চাইলে একবার মরে দেখতে পার।

 

 

 

 

 

 

 

 


ফাহমিনা নূর
জন্ম:
১৯৭০, ঢাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা :
এম এস এস, লোক প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা:
শিক্ষকতা, বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল।
নিবাস:
চট্টগ্রাম, বাঙলাদেশ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার