খালেদ চৌধুরীর গল্প || ৩২ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা

0

অন্য সব সন্ধ্যার মত সেদিনের অন্ধকারে কোন বৈচিত্র্য ছিল না। কী এক আপ্লুতা বিষাদমাখা রজনীর ক্লান্তি, ঘনায়মান রাত্রির বুক চিড়ে এক খাঁচার মধ্যে বন্দী। অন্তর্লীন ঠোঁট দেয়ালে ঠোকর মেরেই যাচ্ছে। যেমনটা গ্যাসীয় পদার্থ লাইটারের তরলে থাকে। বটবৃক্ষের বীজও কম না। অবশেষে বিহ্বলতা নিউরনের দলা মুখস্থ করতে সমর্থ হয়। তার গভীরে কত কত রূপ, রুপালী বাসর। বাবুই পাখী যেভাবে বাসা বুনে কিংবা পিঁপড়ার হাইওয়ে পেড়িয়ে কোথাও মৃত্যু সংবাদ। জন্ম মানেই তো মরণটাকে আগলে রাখা। কেউ যদি বাহির থেকে মৃত্যু ছিনিয়ে নিতে আসে— তাকে প্রতিহত করাই তো জীবনের ধর্ম্ম। ৪০০ বছর ৫০০ বছর স্বরূপ হতে বিচ্ছিন্ন। ধরের সঙ্গে দেহ আবার যুক্তও। ঘাড়ের ওপর বয়ে বেড়ানো যন্ত্রটা সব জানার ভান ধরে থাকে। লিখতে বসেছি চুটকী অথচ শব্দগুলো বান্দরগিরি করছে। অনেকদিন আপার সঙ্গে দেখা নেই। কোন্ আপা? যার মেয়েকে টগর পড়াত। টগর যেন কে? সত্তায় জন্ম নেয়া নতুন শেওলা। আপার মেয়ে কোন্ ক্লাসে পড়ত? ক্লাস সিক্সে। আপার নাম যেন কী? সূর্য্যা। সূর্য্যাপা প্রতিদিন টগরকে নাস্তা দিত। কখনো থাকত পোডিং। ঘনদুধ দিয়ে সেমাই। কাজু বাদাম ছিটিয়ে দেয়া পায়েস। স্পেশাল কিছু না থাকলে, লেবুর কোয়া ভেসে থাকা লাল চা, টোস্ট বিস্কুট। প্রথম প্রথম কনডেন্সড মিল্কের দুধ দিয়ে চা দিত। টগর একদিন বলে, সে দুধ চা খায় না এলার্জি আছে। তারপর থেকে এক কাপ রঙ চা থাকবেই। আপা একবার দুপুরে খেতে বলেছিল। টগরের অর্দ্ধেকটা মন যদিও বলছিল, খা। মনের বাকী অর্দ্ধেকটাকে সায় দেয়নি বলে সে খায়নি। সূর্য্যাপা দেখতে কেমন ছিল? সব সময়ের অষ্টাদশী। দুটো বাচ্চা আছে। বিয়ে হয়েছে ১০ বছর কিন্তু দেখতে সেই কলেজ ড্রেস পরা শান্ত সিগ্ধ। তার রূপ যেন থেমে আছে। হকার যেরকম এই কথা সেই কথা বলে তাবিজ কিংবা অচল মাল ধরিয়ে দেয়। তুমিও কিন্তু সেরকম শুরু করেছ। প্রশ্নটা কে করল? সত্তার বিরোধী। নিখুঁতভাবে বলতে গেলে অ্যান্টি টগর। গল্প না পড়লে কী হয়? হিন্দী একটা সিনেমার গানের চিত্রায়নে কত কিছু পাই। ধরো বিশাল একটা পুকুর। সেই পুকুরে একটা সোনালী মাছ। পুকুর সেচে মাছটা ধরতে গেলে কত সময়ের ব্যাপার— শ্রমের ব্যাপার, অর্থের ব্যাপার। ভেবে দেখেছ, ২ কোটি তরুণী যাদেরকে সুন্দরী মনে করা হয়। তাদেরকে ছুঁয়ে-ছেনে-বেছে-অনেকটা জাফরানের মত। তাদের একজনের নাম ঐশ্বরিয়া— তাল চলচ্চিত্রে রূপ দেখার আর বাকী থাকল কী? রূপ-দৃশ্য-সুর ত্রিবেণী ধারা রক্তের পারদে। পদ্ম ফুলের গোড়া কিন্তু মাটির সঙ্গেই থাকে। যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু টের পাওয়া যায় না। অখণ্ডই বোধ হওয়া উচিৎ। এই সৌন্দর্য্যবিদ্যাই বিভাজনের মূল অথবা সংযোগহীন সঙ্গমাকাঙ্খা। কোন ভালোবাসা নেই, মুহূর্ত্তের রূপ ঝলকে যে বারুদ জেগে ওঠে স্বর্ণরঙের মত মনে হলেও সে তো আগুন। সবকিছু ছারখার করে দেয়। আসলে রুচিবোধে যদি ক্যান্সার থাকে তাহলে তো কোলবালিশও রক্ষা পায় না। স্ক্রিনের পাশাপাশি কালো অক্ষরের বাগানকে ভুলে যেও না। এই যে অবারিত আলো আসছে সূর্য্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ মানেই তো অন্ধকার। সংযোগকারী রেখাটাই প্রজ্ঞাসুন্দর। তাকে দেখা যায় না। ছুঁয়া যায় না। অনুভব করা যায়। নিভৃত মানেই নিষ্ক্রিয় নয়। তাহলে? নেটওয়ার্ক না। দেখ, সৌন্দর্য্যবিদ্যা মুখস্থ করতে কোন বইয়ের প্রয়োজন হয় না। এবার বাস্তবে আসো বই কিনতে যাও— ১০০টাকার নীচে কোন বই পাবে না। কোন্ বই? আপাতত সৃজনশীল বইয়ে থাক। যদি বইটি তরুণ কিংবা তরুণীর হয়— যদি সে লিটলম্যাগওয়ালা হয়— তবে শুনবে ওই বই করতে গিয়ে প্রেমিকার শেষ চিহ্ন হাতঘড়িটাও বিক্রি করতে হয়েছে। তরুণীর জীবনও কয়লা হয়নি তা কিন্তু না। আবার ভিন্ন চিত্রও পাবে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে গেলে এই হল এক সমস্যা। গাছের এই ডাল থেকে ওই ডাল, সেই ডাল কখন যে অরণ্যে নিয়ে ছেড়ে দাও। তোমাদের বংশের নাম হওয়া উচিৎ ছিল টারজান। টগর টারজান। আরে মিয়া ছুঁই ছুঁই করলে তো হয় না। এত কেন মাছিগিরি। মৌমাছির মত হও। এবার তাহলে শোন চুটকী।

— বাঙালীর এক সময় বাসনা ছিল সুন্দরী বউ।
— যখন সুন্দরী বউ হল তখন তার বাড়ী লাগবে।
— যখন বাড়ী হল তার গাড়ী লাগবে।
— যখন গাড়ী হল তখন তার বই লাগবে।
অর্থাৎ বউ, গাড়ী, বাড়ী এবং বই।

সূর্য্যাপার সেমাইয়ের সঙ্গে চুটকীটার সম্পর্ক কী? আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্যন্ত ড্যাসের মাপটা ছোট হলেও তা কিন্তু অবেহেলার নয়। এত তাড়াহুড়ার কী আছে। এক পুকুরেই তো গোসল কর। আজকে না হয়, সাত পুকুরের জল ঢাললে— দিদির বিয়ের সময় দুলাভাই সৌদী থাকত। বেশ ঘটা করেই তাদের বিয়ে হয়। সেবার দুলাভাই ৬ মাসের ছুটি নিয়ে এসেছিল। বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। মরুর দেশে যাবার ১৫ দিন আগে আপার সঙ্গে বিয়ে হয়। দুলাভাই ছুটি বাড়াতে চেয়েছিল, পারেনি। তুমি যে মেয়েটাকে পড়াতে সে এই ১৫ দিনের মধ্যেই পেটে আসে। দুলাভাইয়ের ছিল একান্নবর্ত্তী পরিবার। ৭ ভাই ৫ বোন। উনি ছিলেন বড়। সংসারে বড় ছেলেদের যা হয়। একে একে ভাইবোনের লেখাপড়া। বোনদের বিয়ে। ভাইদের কর্ম্মসংস্থান সব এক হাতে সামলেছে। দুলাভাইয়ের এই দায়িত্ববোধ আপার যে খুব ভাল লাগত তা কিন্তু না। আপা আসলে নিজের নিজেরটাই করত। কে না চায়? সংসার হোক। সুন্দর একটা বাড়ী হোক। ছোট একটা বাগান থাকুক। একটা টয়োটা থাকলেও ক্ষতি কী? ছুটির দিনে বাগানে চায়ের আড্ডা। কিংবা জোসনারাতে বউয়ের কণ্ঠে দু-একটা রবীন্দ্রসংগীত। আপা তো বেশী কিছু চায়নি। দুলাভাই আপাকে বুঝাত— কখন যে কার কী হয়? কেমনে বলবা। দেখবা কী— তোমার পরিচিত কেউ কত নিষ্ঠুরভাবেই না সম্পদের স্তূপ জমা করে, আবার দেখবা কেউ ঘটের টাকা খরচ করে বনের মোষ তাড়ায়। আসলে কি জান জীবন হচ্ছে আনন্দে থাকার জন্য। কষ্টসাগরে আনন্দে ভেসে থাকতে হয়। সুখকে ধরতে হয়। তাকে পুষতে হয়। তুমি সকলের হক আদায় করে চললে এর মানে তোমার রোগ শোক হবে না। তা কিন্তু না। অনিশ্চয়তার সৌন্দর্য্যই জীবনটাকে মহৎ করেছে। প্রতিদিন যা বলি। প্রতি সপ্তাহে তো তাই বলি। হয়ত নতুন কিছু যোগ হয়। প্রতি সপ্তাহে যা বলি, প্রতি মাসে তো তাই বলি। নতুন কিছু যোগ হয়। প্রতি মাসে যা বলি প্রতি বছর তাই বলি। তার সঙ্গে নতুন কিছু যোগ হয়। মন আকাশে এই যোগ বিয়োগ চিন্তাখেলা চলতেই থাকে। চিন্তা, অচিন্তা, বিচিন্তা নিয়েই তো বেঁচে থাকা। হঠাৎ দুলাভাইয়ের কী জানি হয়। আরবে বেশ কয়েক জন ডাক্তার দেখানোর পরও সুস্থ না হলে চিকিৎসা করাতে দেশে আসে। বড় বড় ডাক্তার দেখানো হয়। এত এত টেস্ট। এত এত ডাক্তার ফি। দুলাভাইয়ের ভাইবোন সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করে। তিনি যে সাহায্যের জন্য ওৎ পেতে ছিলেন তা কিন্তু না। শেষ পর্য্যন্ত কোন রোগ ধরা পড়ে না। দুলাভাইয়ের কষ্ট হচ্ছিল। বুক চেপে আসা অসুখ। দম নিতে কষ্ট হয়। কী যেন একটা বুকে লক লেগে আছে। স্বামীর অসুখে আপাও বিধ্বস্ত। লোকের কথা শোনে আপা এই জায়গায় যায় ওই জায়গায় যায়। এক আলুথালু সময়। আপা শোনেছে, অমুক খানকায় আধ্যাত্মিক চিকিৎসা হয়। বিপদে পরলে যা হয়। আপা সেখানে যায়। রোগমুক্তির ব্যাপারে আপাকে বলা হয় ৯ লাখ টাকা লাগবে। শর্ত্ত থাকে এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলা যাবে না। সূর্য্যাপা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। সেটা দুলাভাইও জানে না। আপা বিয়ের গহনা বিক্রি করে, ধারদেনা করে, দুই দিনের মধ্যে ৯ লাখ টাকা ফকিরকে দিয়ে আসে।

তারপর = ?

[সতর্কীকরণ : এটা জানার জন্য আপনাকে গল্পের শেষ পর্য্যন্ত যেতে হবে। যেহেতু পীর ফকীরের কথা ওঠেছে। টগরের এ সংক্রান্ত আর একটি ঘটনা আছে। এই ঘটনাটাকে বেশ কয়েকবার বাইপাস করার চেষ্টা থাকলেও ঘটনাটাকে উচ্ছেদ করা যায়নি। ইচ্ছে করলে পাঠক আপনি এই অংশটাকে বাদও দিতে পারেন]

— তুমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়তে— তোমাদের পাঠ্য ছিল, “একটি তুলসী গাছের কাহিনী”
— হ্যাঁ। গল্পটা আমি বুঝতাম না। কঠিন লাগত। এই গল্পের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর গল্পের সম্পর্ক কী?
— আছে। যেই গল্পটা বলা হচ্ছে, সেটার মধ্যেও মাজার-বাস্তবতা আছে। তুমি কি জান, যে লোকটা মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বেতন সমুদয় মুক্তিযুদ্ধের ফাণ্ডে দিয়েছিলেন। যিনি বাংলা সাহিত্যে অগ্রগণ্য। এখন পর্য্যন্ত তিনি স্বাধীনতা পুরষ্কার পাননি। অথচ ওই লোকটা, যিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিল—লালসালু কী? মজিদের উচ্চতা কত?
— বলেছিলাম, মজিদের উচ্চতা পাঁচ ফুট ৯ ইঞ্চি। পাল্টা জিজ্ঞাস করেছিল?
— মজিদের উচ্চতার কথা লালসালুর কোথাও আছে?
— বলেছিলাম, রাইসুল ইসলাম আসাদের উচ্চতা আমার কাছে পাঁচ ফুট ৯ইঞ্চি মনে হয়েছে।
সেই পরীক্ষক সেই ঔপন্যাসিক শুধু বাংলা একাডেমী নয় একুশে পদকও পেয়েছেন। স্বাধীনতা পুরস্কারের দিকে হাঁটছেন… যেন আপস ছাড়া কোথাও বেঁচে থাকার সুযোগ নেই।
— বউয়ের সঙ্গে আপস কর।
— বসের সঙ্গে আপস কর।
— বন্ধুদের সঙ্গে আপস কর।
— ভাইবোনদের সঙ্গে আপস কর।

কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়।

ওই ঔপন্যাসিকের সাহিত্যজীবন যেভাবে শুরু হয়— একটা কিতাব লিখে জনপ্রিয় পত্রিকার পুরস্কারের বিবেচনার জন্য পাঠান।

সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী ওই শিক্ষকের উপন্যাসটি পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করেন। কিন্তু পুরস্কার কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্যের তৎপরতায় তালিকার বাইরে থেকে একজনকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য বিচারকমণ্ডলীকে চাপ প্রয়োগ করে। পুরস্কারের জুরিবোর্ডের প্রধান ছিলেন একজন শিড়দাড়া বিশিষ্ট কবি এবং অধ্যাপক। বিচারকমণ্ডলীর প্যানেল থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এবং এই পুরস্কারের তীব্র বিরোধিতা করেন। লিটলম্যাগওলারা যখন জানল তারাও সরব হল কিন্তু যার জন্য চুরি সে চুপ মেরে যায়। সরকারি চাকরিজীবী ওই ঔপন্যাসিককে পুরস্কার কর্ত্তৃপক্ষ বলল, এ বছর অনিবার্য্য কারণে আপনাকে পুরস্কারটি প্রদান করা হবে না। সামনের বছর আপনি পুরস্কার পাবেন। তবে, আপনার মুখ বন্ধ রাখতে হবে। অতএব, অধ্যাপক মহাশয়— গরম দুধ মাটীর হাড়ীতে রাখলে যেরকম দই হয়ে যায়। তিনিও পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়ে গেলেন। জনাবের ছবী বহুল প্রকারিত দৈনিকে ছাপা হয়। টেলিভিশনেও দেখানো হয়। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে উনার নাম ১২ ফন্টের সুতন্বী অক্ষরে বোল্ড করা থাকবে। তার সাক্ষাৎকারের জন্য পত্রিকা অফিসে হাহাকার পড়ে যায়। তার পরবর্ত্তী বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকরা দলে দলে লাইন ধরে মিষ্টি নিয়ে যায়। যদিও এক লিটলম্যাগ সম্পাদক তাকে পুরস্কার পাওয়ার পর— সুরম্য মোড়কে এক টাকা দামের বলাকা ব্রেড উপহার দিয়েছেন। সঙ্গে একটা চিঠিও। চট্টগ্রাম নিবাসী সেই লেখকের উড়োচিঠিতে একটা মাত্র শব্দ ছিল। বাল।

মিডিয়া হল নতুন যুগের ধর্ম্ম। Media>Air>এয়ার>ইর>সমীর>ঊনপঞ্চাশ বায়ু = সবকিছুর সংজ্ঞা নির্দ্ধারণ করে দিচ্ছে। চুদির ভাইরা গুকে মাখন বানাতে পারে আবার মাখনকে গু বানাতে পারে। সত্যমিত্যার ঘূর্ণিপাকে জনতা হচ্ছে ভেড়া। গড্ডপ্রবাহলিকা থামার কোন নাম নেই।

এতক্ষণ টগর তোমাকে তুমি তুমি বলছি। এখন কিন্তু তুই বলব। গালিও দিতে পারি। বোকাচুদা সূর্য্যাপার সঙ্গে অধ্যাপকের সম্পর্ক কী? আরে মিয়া। তুমি কি শুধু মাছ দিয়া ভাত খাও? খাও না তো, মাছের সঙ্গে তরকারী খাও। মাছের ঝোল কি শুধু পানী দিয়া হয়? অনেক কিছু দিতে হয়। এই ধর মাছ ভুনা খাবা। যদি রাধতে যাও তোমার কী কী লাগব? কড়াই, আগুন, তেল, পানী, নুন, মশলা, শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিকতা। লগে দুইটা টমেটো দিলে খারাপ হয় না। বুঝ না কেন? সূর্য্যাপার গল্পটা শুধু মাত্র উনারে নিয়া না, লগে আরও অনেকে আইসা পড়ে। বুঝ না কেন? বিয়ে বাড়ীতে উপলক্ষ্য তো দুই জন। আনন্দ বাকী সবার। আচ্ছা ঠিক আছে। তুই আগে বাড়— সূর্য্যাদির স্বামী আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে পুনরায় মরুর দেশে যান। তিনি সেখানে গাড়ী চালাতেন। আপা বছর খানেকের মধ্যে যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করে, স্টেটাসসমৃদ্ধ ভাড়া বাসা খুঁজেন। তখনই আপার সঙ্গে টগরের পরিচয় হয়েছিল। টগরের সুবাধে আমারও। জুলেখা ইউসুফের প্রেমে যখন হাবুডুবু। প্রতিবেশী মহিলারা নিন্দা। জুলেখা একদিন প্রতিবেশী বান্ধবীদের ভোজসভায় আমন্ত্রণ করল। তারা প্রত্যেকেই ছিল বিবাহিত। ইউসুফ তো সে বাসায় লজিং থাকে। জুলেখা তার বান্ধরীদেরকে বলল, তোমরা যে আমাকে নিন্দা কর। আজকে তোমাদের একটা পরীক্ষা দিতে হবে? তারা বলল কী পরীক্ষা? খাবারের পর একটা আপেলের ঝুড়ী তাদের সামনে আনা হল। কেউ কেউ বলে তারা সংখ্যায় ছিল ৫ জন। কেউ কেউ বলে তারা সংখ্যায় ছিল ৯ জন। কেউ কেউ বলে তারা সংখ্যায় ছিল ৭ জন। জুলেখা প্রত্যেকের হাতে ধারালো ছুরী আর একটা করে ফ্রেশ আপেল দিল। জুলেখা বলল, বন্ধুরা তোমরা এখনই আপেল কেঁটে খাও— এ কথা বলে ইউসুফকে ডাকল। ইউসুফের দিকে তাকিয়ে জুলেখার বান্ধবীরা প্রত্যেকে কখন যে আপেলের পরিবর্ত্তে নিজের হাত কেঁটে ফেলেছে। তারা কেউ বলতেই পারবে না। টগর আর আমার যেন অনেকটা সেই দশা। সূর্য্যাপা প্রায়ই তার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার কথা জিজ্ঞেস করতেন? আমাকে বলতেন, ছেলেটা একদম পড়াশোনা করে না। সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা। ওর থ্রীতে থাকার কথা ছিল। এ বছর টুয়ে রেখেছি ভিত্তিটা মজবুদ হোক। কথায় কথা বাড়ে। এই কথা সেই কথার ফাঁকে সূর্য্যাপা করলেন কী এক জেন গল্পের চরিত্রে অভিনয় করে বসেন। একবার জেনগুরু তার শিষ্যদের প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে যে একটা অসম্ভব গল্প বলতে পারবে— সে বোধী লাভ করবে।

সঙ্গে সঙ্গে একজন ছাত্র দাঁড়িয়ে বলল :
গুরুজী দুজন মহিলা পাশাপাশি বসে আছে। ৩ ঘণ্টা ধরে কেউ কারও সঙ্গে কোন কথা বলছে না।

মঠের ওই ছাত্র বোধী প্রাপ্ত হলেও সূর্য্যাদি শর্ত্ত ভঙ্গ করল। আধ্যাত্মিক চিকিৎসার গোপনীয়তা টগরকে বলেছে। সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে, সূর্য্যাদি গল্পটা না বললেও পারতেন।

প্রিয় অথবা অপ্রিয় পাঠক ভোটের বাক্সের সিলের মত যে কোন একটিতে টিক (√) চিহ্ন দিন।

0 শর্তভঙ্গের পর গল্পটার পরিণতি কোন্ দিকে গড়ায়?

    [ ]     সূর্য্যাদির স্বামীর পারিশ্রমিক বেড়ে যায়।
    [ ]     সূর্য্যাদির স্বামী চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে চলে আসেন।
    [ ]     সূর্য্যাদির স্বামীর কিছুই হয়নি, তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন।
    [ ]     সূর্য্যাদির স্বামীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, কোন এক সন্ধ্যায় তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত
মনে স্বামীর কফিনের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন।

 

 

খালেদ চৌধুরী
জন্ম : কুমিল্লার চড়ানলে, ৯ নভেম্বর ১৯৮৫। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। পেশা : বেসরকারি অফিসের কামলা। প্রকাশিত বই : ‘পাস নম্বর ৩৩’ (কাব্য ২০১৭), ‘লাল জিহ্বার নিচে’ (গল্প ২০১৯), ‘+চিহ্ন’(কাব্য ২০২১)

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার