কখন মোরগ ডাকবে – আমি ঘরে ফিরে যাবো ।
কান্তারে সমস্ত রাত শস্য-পাহারার ছলে জেগে আছি
এবং অলৌকিক জ্যোৎস্নায় এই রণভূমি ফসলে,সংগ্রামে,গানে
ভরে গেছে – বুঝি মনে হলো সুদূর আলোর পথে তোমাদের অপস্রিয়মান ছায়া
আবার উঠেছে জেগে। দীপ্ত নখর মেলে, হা হা শব্দে
রক্তের তৃষ্ণায় যারা উড়ছ – বুঝি ভেবেছ সহসা
প্রান্তরে একাকী আমি বধ্য আছি। বুঝি জেনেছ গোপনে
এ-কাহিনী সকালের রৌদ্রের পালক দিয়ে ঢাকা যাবে।
-উৎপলকুমার বসুর গুপ্তচর কবিতা থেকে
ভারতীয়—বাংলা ভাষার শক্তিমান কবি উৎপলকুমার বসু (জন্ম আগস্ট ৩, ১৯৩৯) আর নেই । শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৭৬ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয় ।
ষাটের দশকে হাংরি আন্দোলনে সক্রিয় খ্যাতনামা এই কবি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন । ১৯৬১ সালে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটতেই তাতে যোগ দেন, এবং কবিতা রচনার ধারায় বাঁকবদল ঘটান । হাংরি আন্দোলনের কারণে ১৯৬৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল ।
সেকারণে যোগমায়া দেবী কলেজের অধ্যাপনা থেকেও বরখাস্ত হন। ১৯৬৫ সালে উৎপল লন্ডনে চলে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন । লন্ডনেও তিনি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেখানে বসবাসকালেই তিনি বিবাহ করেন এবং কবিতা লেখা থেকে সাময়িক বিরতি নেন ।
দুই দশক পর কলকাতায় ফিরে উৎপলকুমার বসু পুনরায় কবিতা লিখতে শুরু করেন । সমসাময়িক, এমনকি তরুণতর কবিদের তুলনায়ও তাঁর কবিতা ছিল সম্পূর্ণ নতুন । নিরাসক্ত ও নির্লিপ্তভাবে বস্তুস্বভাবের যথাযথ বর্ণনা তাঁর কবিতার মুখ্য বৈশিষ্ট্য ।
বস্তুর অভ্যন্তর সত্যের অভিমুখে কবিতাকে চালনা করেছেন উৎপল। তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা জীবন প্রকৃতি কোনো রহস্যভূমি রচনা না করেই তাঁর কবিতাতে মেলে ধরে বর্তমান সমাজবাস্তবতা ।
উৎপলকুমার বসুর মৃত্যুতে চারবাক পরিবার গভীর শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছে ।
ভুলে যাই নিজের ঠিকানা।
ছোট একটা বাড়ি ছিল। কিছু দূরে নীলকুঠি।
গুটিকয়েক তালগাছ আর কিছু লতাপাতা
জড়িয়ে আমার স্থাপত্যের দক্ষিণী ঘোষণা।
ছিল হাঁস। ভূগোলের পাঠ্যবই থেকে
নেমে আসা উট ও বিদেশী গাধার দলে
আমি একা ক্রীতদাস।
আপাতত স্থলপদ্মের বনে ঘুমিয়ে রয়েছি।
– উৎপল কুমার বসু