স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আমি চাইব এখন খোলা না হোক।
যারা খোলার কথা বলতেছেন, তাদের প্রধান যুক্তি হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভারসাম্য হারাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বের পরিবর্ত্তন হচ্ছে। এতে তারা বড় ধাক্কা খাবে এবং অনেকের শিক্ষার পরিসমাপ্তী ঘটবে।
বেশ!
তাদের সমস্ত যুক্তি এবং কথাবার্ত্তা-ই যদি সঠিক বলে জ্ঞান করি তাহলে ধরে নিতে হবে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেই আমরা শুদ্ধ কিশোরসমষ্টি পাব, শুদ্ধ সুনাগরিক পাব। তাহলে ‘৭১ থেকে আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চালু ছিল।’ ৭১ থেকে আমাদের দেশে যতই ডিগ্রিধারী মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেড়েছে ততই সাব-অলটার্ন শ্রেণীর সংখ্যাও বেড়েছে। যতই আমরা পাতিবুর্জোয়া নির্দ্ধারিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়েছি ততই আমরা একটি নৈরাজ্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার হেজিমনিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছি!
মূলতঃ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সুস্থ প্রজন্ম তৈয়ার করে না। কেননা এখানে বিদ্যাচর্চ্চা বা চিন্তাচর্চ্চা মুক্ত নয়। কোন না কোন ভাবে পূর্ব্বনির্দ্ধারিত একটা উৎস থেকে আমাদের নিকট জ্ঞানের যে প্রবাহটা আমরা পেয়ে থাকি, সেটাকেই আত্মস্থ করতেছি। এটিই হয়ত গ্রামশীর হেজিমনির রুপায়ন!
এইক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য যে আন্দোলন, তা একপ্রকার কোন কোন বুদ্ধিজীবীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী।
বরং এখন চুপ থাকা জরুরী। বিশেষত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে। কেননা আপনাদের যুক্তি হল, স্কুল কলেজ না খুললে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহলে যে জায়গাটাতে আপনাদের ফাঁক থেকে যায় তা হল, কোন্ শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা বাঁচাতে চাচ্ছি?
এই যে করোনার কারণে যখন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল একযোগে, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী বা কোন ইন্সট্রাক্টর কি আদৌ শিখতে বা শেখাতে পেরেছে, সেই গুমোটকালীন সময়টাকে আনন্দময় করে তুলতে?
আপনি কোন্ শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে চাচ্ছেন যে শিক্ষাব্যবস্থায় অজস্র শিক্ষক তৈরী হয়ে বসে আছে দেশে অথচ তারা কোনভাবেই যথাযথ পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না।
আপনি ঠিক এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে চাচ্ছেন যা আপনাকে ক্ষুদ্র করে তুলেছে।
এই যে আজকে আমরা এত এত যুবক ভয় পাচ্ছি অনিশ্চয়তায়, দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়তেছে ক্যারিয়ারের কথা ভেবে— আমাদের এই সংকুচিত ভাবনা কিন্তু এই শিক্ষাব্যবস্থারই ফলাফল।
বরং আন্দোলন করুন এই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সবগুলোই এই পর্য্যায়ে বন্ধ থাকুক। বরং একটা বিপ্লব ঘটুক। এই আধমরা, মরাপঁচা শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটা ভেঙ্গে পড়ুক, পা থেকে মাথা পর্য্যন্ত।
বরং উপভোগ করুন এই শিক্ষাব্যবস্থার করুণ এই সময়টাকে!
অপেক্ষা করুন বরং, দেখুন কতটুকু ভেঙ্গে পড়লে একটা বিপ্লব হয়। একটি জাতীর নবজন্ম হয়!!! ……………
রিজবাহ রিজবী
জন্ম—
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। বর্ত্তমানে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত …
Co- Founder
দিয়াশলাই অনলাইন বুকশপ।
মেইল: rijbahrizbi@gmail.com
করোনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান || রিজবাহ রিজবী
0শেয়ার করুন