সব্যসাচী সান্যালের জন্মঃ ১৯৭৩, আগরতলা, ত্রিপুরা। বেড়ে ওঠা, ইটানগর (অরুণাচল প্রদেশ), হাজারিবাগ, বোলপুরে। ১৯৯৭-২০০২ দক্ষিণ কোরিয়ায় সপ্তাহে ১০ মিনিট বাংলা ভাষায় কথা বলে বেঁচে থাকা। ২০০২-২০০৭, স্টকহোম, সুইডেন। ২০০৭ থেকে লখনৌ-এর বাসিন্দা। পেশায় মলিকিউলার বায়োলজিস্ট। কৌরব পত্রিকার সাথে যুক্ত গত এক যুগ। প্রকাশিত বইঃ নীল গ্রামাফোন, হরিপদগিরি, এপ্রিলতা/পানুর ইচ্ছে, ব্র্যাকেটশহর (কৌরব), ডুবোপাহাড়ের লগবুক (সৃষ্টিসুখ)।
“বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো”
– স্বদেশ সেন
স্বদেশ থেকে …
১
বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি একটেরে
ভাষার আদল থেকে স্পেস থেকে
এমন কী পার্থক্য থেকে
হে ক্রমাগত দেদার অঘ্রাণ
শকুনের স্পৃহা পর্যন্ত উড়ে যাচ্ছে
ডেড লেটার অফিস
ধাতুর তকমা থেকে খসে পড়ছে
কাঠের করুণা
একটা মীমাংসা থেকে বিচ্যুত খুব হয়ে আছি
তামার ইন্দ্রিয় নিয়ে আলগা হয়ে আছে
প্রকাশ ও প্রকাশের অন্ধকারটুকু
২
তুমি এলে,
ইন্দ্রিয়’র ভ্রান্তি থেকে এলে
ঘর দোর শিরা ও মগজ
গুছিয়ে তোলার কালে
আমাকে দেখালে সংশয় কীভাবে
ম্যাচিওর করে তোলে মদ ও মানুষ
জন্মের স্ট্রাকচার ফাটিয়ে এসে অর্জন করে
ব্যথা ও সংবেদ
বিশ্বাসীর সব আছে– প্রত্যয় আছে
প্রতিক্রিয়াও আছে
শুধু–
ব্যথা নেই
অতিক্রম নেই
ঈশ্বর নেই
৩
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
শীতের প্রাক্কালে ঘুঘু ডাকছিল –টারটল ডাভ
ওদিকে কিছুটা তো
ফাঁদও ডেকেছিল
মাতমে কাতানে বেনারস থেকে আলগা ডেকেছিল
ঘুণ ও চলন আর মলিন মলম
আমি তো ইমোশানে গুটিয়ে গেলাম
এমনকি শিশ্নসমেত বাতাবরণে
ঘামে মোটা হাওয়া বসল অকস্মাৎ
রূহ আর রূহ
আর মানে ঘিয়ের চাপাটি
কাঁচা অরহড় দাল – রসুনে রসুনে
খিদে পায় বাঞ্চোত বসন্তবনে
ডাগর বসন্ত আমি
শীর্ণতার ভেতর নামিয়ে দেখছি পা
গভীরতা কতটা ডিসেপ্টিভ
ভাবনার ইকোগুলি
ফিরে আসছে
দুপুর গড়িয়ে ক্ষীণ বসন্তপর্যায়
সেও স্নান ফান সেরে উঠে আসছে
ফাঁদ থেকে
৪
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
সিল্যুয়েট থেকে নেমে গেলে
কাঁড়ি কাঁড়ি ছায়াতে নেমে গেলে
মাচান থেকে ছিটকে পড়ল শসা
সালাদ অয়েলে লেবুর নির্যাসে
সেখানে মেধার জিভ ফুটে আছে
আর খুব অধরা বাজারে কৃতি ও কার্পণ্য
ত্রাসে ত্রাসে জোকার হিলছে
ফণাখানা নিমজ্জ রেখে
আমাকে তো ঘুরে তুমি দেখলে না
আমার পিঠের দাগ তোমার সুমুখে তাই
চক্কর কাটল হে কানপুরে দেবা শরীফের
কাঁচা রাস্তায় কত প্লব হয়েছে প্রকৃতি
তরই ফুলের পাশে সারাটা ছায়ায় তুমি
বসিয়ে রাখলে
বেখেয়াল
সিল্যুয়েট থেকে নেমে গেলে আমার
নির্যাস থেকে খুব নেমে গেলে…
৫
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
একটা কমলা পারা ডাক
দিলে জলে ও বিন্যাসে
ধবধবে বিছানায় লাল অন্ধকার
আয়ত পর্ণমোচী আর নিমেষের মত ঝরে পড়া
করলে না ভালো তুমি চেয়ে তো
দেখলে না নিসর্গে অতীতে যেটুকু ছিল না
অস্বীকারে ঠিক রয়ে গেছে
অবসর থেকে মুখ ফেরা নেমে গেলে
চিড়িকপতিংগা
আঙ্গুলের খুরাফাত থেকে ভেজা
বিস্তার থেকে জরা
থেকে চর্চা ও ছই
থেকে নদীর কাঠামো
থেকে
পিস্তল শানিয়ে
নেমে গেলে…
৬
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
মোমের ভেতর তুমি গালার ধারণা নিয়ে
অভিজ্ঞান হলে নাখুন নাড়লে
একটা হলুদ লোকগানে ঝাঁপ দিয়ে
অস্পষ্ট হলে অথচ শীতকাল চলে এল আর
ভাস্কর হল না তিনমাস তন্দ্রায় কেটে
গেল নিজের ছায়ার সাথে করমর্দনে
কেটে গেল
একটা সংস্থাপন থেকে অন্য আচরণে
নতি গেঁথে চলে গেল
ভালো লাগিল না ভালে কেবল
কপাল থেকে এক বিন্দু
জ্বালা করে ওঠে
৭
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
মস্তক থেকে নীচু উঠে গেলে রোদ ও প্রখর
জ্বর এল ৯৯.৫ অব্দি নব ঘুরল আর ঘুরল না
সড়াইলা কুকুরের মত স্রেফ জেদে জেদে বিলুপ্ত
হলে এমন কী বিতরণ ব্যবস্থাও আর ভ্যালিড
থাকল না জলে সমতলে পাহাড়ে প্রাকারে
ক্রাইসিস থেকে অদম্য শিস দিল আর বলতে কী
আমার কবিতাও বড় নিরুজ্বল কিছুটা অনচ্ছ
বড় জোর তম্বুরা বড় জোর ঠেকা
এর বেশী প্রকৃতিও জানে অরণ্য থেকে
শহরে চারিয়ে যাওয়ার ঝানুতর মেমে
বাকী থাকে গিমা শাক বাকী থাকে ক্যাসারোলে
গতরাতরুটি আর কিছুটা নির্লিপ্তি যা
সকালেরই ঠিক সকালেই বেড়ে চেড়ে ওঠা
৮
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
সাদা ভাতে খয়রা মাছের ঝোলে ডুব
দিলে একটা অনিচ্ছায় মাছেরই মতন
সাঁতারে বেড়ালে ঘুলঘুলি ফাঁক করে ফুটল কুসুম
কুসুম ডিম আর বেড়ালের অনিশ্চয়টুকু
যেটুকু পার্থিব আর মিসেস পারেখ
আর বেহালার ছড়ে রজনের বাস
দাম্পত্যদানি থেকে
সলিউশানের দিকে বিভাজন রেখে…
কিছুটা শান্তি তবে রেখেছিলে রিজার্ভ
ফরেস্টে… ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলে
বনের নীবার ধান
অঘ্রাণের ডাল থেকে
উড়াল দিচ্ছে চৈত্রের মত পেটিকোট
৯
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
কিছুটা সুজলা হলে, বাকী তো বিফলা
ধীরত্ব অর্জন করে তবে গিয়ে প্রত্যয় হলে
এখানে তো ছবি ঝাঁপ দিল
জলে
অবতলে
ছায়া থেকে বিচ্যুত ছবি
ছবির এককগুলো একে অপরের থেকে
সরে গেলে ছাঁট নামে ছাদে ও পলকে
মুখরের থেকে একরোখা দূরে
ভাদরের থেকে অতর্কিত দূরে
যেন কোকুনের কন্দরে এক
মথের অন্তর স্থল খুঁজে পেল
লাইনের ওপর এমন আছড়ে পড়ছে
কবিতার ম্যানিকিন-গুলো
সম্পর্ক নয় যেন
দূরত্বটুকুই শুধু যত্নে রাখা যায়
১০
বসন্তপর্যায় গেলো, আমাকে করলে না তুমি ভালো
গাঢ় হল একটা অনুপস্থিতি
নিবেশের কাছে নিকেশ হয়েই থেকে গেল
লাইনের থেকে চুঁইয়ে নামছে কালি
হাড়ের ভেতর ব্রেকের ভেতর
খাড়ি মুসুরির ডালে, বুঁদির রায়তায়
আর
খিলানের পায়ে বড় হচ্ছে
ইতস্ততা
অমনোযোগের পাশে
দাগের আঁচড়