Postmodern শব্দটীর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে উত্তরাধুনিক, উত্তর-আধুনিক, আধুনিকোত্তর, অধুনান্তিক শব্দের প্রয়োগ রয়েছে। এসব শব্দের বিভিন্ন মানে রয়েছে, শব্দের প্রয়োগকৌশল শব্দের মানে নির্দ্ধারণ করে দেয়। ফলে Postmodern শব্দেরও বিভিন্ন মানে বিভিন্ন জনের কাছে প্রতিভাত হয়। Postmodern শব্দটী সচেতনভাবে প্রথম প্রয়োগ করেন ফরাসী চিত্রসমালোচক ও শিল্পী জন ওয়াটকিন চাপম্যান ১৮৭০ সালে, তিনি এই শব্দটী ফরাসী ইম্প্রেশনিস্ট ধারার বাইরের নতুন ধারার (আভা-গার্দ) চিত্রের শৈলী বুঝাতে ব্যবহার করেন।[১]
সাহিত্যের ক্ষেত্রে Postmodern প্রথম শব্দটী ব্যবহার করেন লাতিন আমেরিকান কবী ফেদেরিকো দ্যা ওনিশ, তিনি স্প্যানিশ ভাষার তরুণ কবীদের কবিতা সংকলনে ব্যবহার করেন শব্দটী, প্রচলিত ধারার বাইরের এই নতুন কবীদের “উত্তর ঔপনিবেশিক পরিসর ও তার বাকশস্যের উপনিবেশবাদ-অতিক্রমী বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরতেই এই শব্দটীর প্রয়োগ করেন।”[২] ঐতিহাসিকভাবে Postmodern শব্দটী ফ্রাঙ্কো প্রাশিয়ান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ব্যবহার করেন আর্নল্ড জে. টয়েনবি ১৯৩৯ সালে তাঁর A Study of History, Volume 5 গ্রন্থে।
উত্তরাধুনিকতা শব্দটীর অর্থ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। এর প্রবক্তাদের মধ্যেই এর যথাযথ অর্থ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, এমনকি কারো কারো মধ্যে বিরোধ রয়েছে এর অর্থ নিয়ে! উত্তরাধুনিকতা মতবাদের প্রবক্তা হলেন জ্যাঁ লিওতার, ফ্রেডরিক জেমসন, রোলা বার্থ, জ্যাঁ বদ্রিলার, জ্যাক লাকা, জ্যাক দেরিদা, গিলে দ্যেলুজ, ফেলিক্স গাতারি সহ আরও অনেকে।
উত্তরাধুনিকরা প্রেরণা সংগ্রহ করেন নীটশের দর্শন থেকে, ঊনিশ শতকের আভাগার্দ থেকে। শুরুতে (১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে) উত্তরাধুনিকতা বুঝাত আধুনিকতা থেকে দূরত্ব। উত্তরাধুনিকতা বলতে আধুনিকতার পরের সময়কে বুঝায় ঠিক এমন নয়। উত্তরাধুনিকতা হল এমন একটা দর্শন যা আধুনিকতা প্রতিষ্ঠিত মৌলিক জ্ঞানকে প্রশ্ন করে, প্রশ্ন করে আধুনিকতার নীতিবোধ ও মূল্যবোধ সমূহকে। স্বভাবতই এতে অনেকে আধুনিকতার সাথে উত্তরাধুনিকতার বিরোধের আভাস পান, সেটা যে পুরোপুরি সত্য তাও নয়। উত্তরাধুনিকতায় মনে করা হয় আধুনিকতা মানুষকে অভীষ্ট মুক্তি দিতে সক্ষম হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবন দুর্ব্বিষহ করে তুলেছে! আধুনিকতার ফলেই ইউরোপীয় জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি হয়েছে প্রভূত, এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য এর ফলেই এশিয়ায় ও আফ্রকায় উপনিবেশিক শাসন চূড়ায় পৌঁছেছে, কোটী কোটী মানুষের জীবনে পরাধীনতা নিয়ে এসেছে আলোকায়নের নাম করে। আধুনিকতা যেহেতু মূলত পাশ্চাত্য প্রভাবিত আদর্শ তাই তাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ, জীবনদর্শন প্রাধান্য পেয়েছে আধুনিকতার মাপকাঠী নির্দ্ধারণে। ফলত: এশিয়ায়, আফ্রিকায়, লাতিন আমেরিকায় অধিবাসীদের সকল সংস্কার, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, জীবনবোধ ইউরোপীয়দের কাছে থেকে গেছে অসভ্যতা, নিম্নমানের বস্তু হিসেবে। তারা যেন উদ্ধারকর্ত্তা হয়ে এসেছে এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দ্দশা সরিয়ে জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নততর করে গড়ে তুলতে। এই করে তারা ধ্বংস করেছে সমাজকাঠামো, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম্ম ইত্যাদি। চাপিয়ে দিয়েছে পাশ্চাত্যের আদর্শ ও মূল্যবোধ। এই নতুন আদর্শের ছোঁয়া পেয়ে অনেকে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাব লালন করেছে, ফলে ক্রমান্বয়ে সে হয়েছে শিকড় বিচ্যূত।
এ হল আধুনিকতার উপনিবেশবাদী একটা দিক, আরো একটা দিকের প্রতি উত্তরাধুনিকরা মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে চান সেটা হল বিশ্বযুদ্ধ ও অগণিত মানুষের মৃত্যু, এই যুদ্ধের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়েছে মানুষর প্রচলিত সকল আদর্শের, পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছে এই পৃথিবী, দেখেছে নিমেষে কেমন করে মিলিয়ে গেল লক্ষ মানুষের জীবন! এটা তো আধুনিকতার ফল হিসেবেই এসেছে, উত্তরাধুনিকদের বক্তব্য অনেকটা এমন। যেহেতু আধুনিকতা গ্যাস চেম্বারে মৃত্যু, পারমাণবিক হামলায় লক্ষ মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি তাই আধুনিকতাকে নিরঙ্কুশ মান্যতা দেবার বিপক্ষে উত্তরাধুনিকরা, তারা বরং এর নানাদিক নিয়ে প্রশ্ন করে আরো ভাল কিছু মানবজাতীকে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাদের এই পথে সহায় বিভিন্ন তত্ত্ব ও দর্শন, যেহেতু উত্তরাধুনিকতা কোন নির্দ্দিষ্ট বিষয়ে ও আদর্শে স্থির নয়, তাই এর একটা সুবিধা হল নিজের সুবিধা মত বিভিন্ন জায়গা হতে জ্ঞান আহরণ ও তার প্রয়োগ। উত্তরাধুনিকদের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো যে যুক্তি কাজ করে সেটা হল আধুনিকতার নিগড় থেকে জ্ঞানকে অবমুক্ত করা, বিশিষ্ট উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিক ইহাব হাসান যাকে বলেন প্রকৃত জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব, তা প্রমান করা। [৩] মাতেই ক্যালিনেস্কু মনে করেন উত্তরাধুনিকদের লক্ষ্য হল “জ্ঞানতাত্ত্বিক অসম্ভাব্যতাকে” তুলে ধরা। [৪]
পোস্টমডার্ন ধারার তাত্ত্বিকদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, তার মধ্যে অন্যতম হল আধুনিকতার বিপর্য্যয় ও ধ্বংস। দুটী বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আধুনিকতার শেষ হয়েছে বলে মনে করেন এই তাত্ত্বিকেরা। উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিকেরা লেখক ও পাঠকের মধ্যে সাযুজ্য স্বীকার করেন না, তারা মনে করেন এই দুইয়ের মধ্যে কোনো যোগ নেই, একটা টেক্সট যতবার পড়া হবে ততবার তার অর্থ বদলে যাবে বা নতুন অর্থ পাঠকের কাছে প্রতিভাত হবে। তাই ভাষার একক আধিপত্যের বিরোধী পোস্টমডার্নিস্টরা, তারা ভাষাশৃঙ্খল ভেঙে ভাষার নির্দ্দিষ্ট অর্থবাচকতাকে শেষ করতে চান! ভাষার যে বাইনারি অপজিশন সেটাকে তারা একদমই স্বীকার করেন না (নারীর বিপরীতে পুরুষ সাদার বিপরীতে কালো একে বলে বাইনারি অপজিশন)। স্বভাবতই ভাষাশৃঙ্খলা অতিক্রম করে যায় পোস্টমডার্ন ভাবনায়।
পোস্টমডার্ন ভাবনায় কোন একক সত্য, বাস্তব, মতবাদ আদর্শ নয়; বহুত্ববাদ ও বহুরৈখিকতায় বিশ্বাসী পোস্টমডার্নিস্ট ভাবুকরা। তারা মার্ক্সবাদী কতৃত্বের বিরোধী, বিরোধী আধুনিকতার নামে আলোক দেবার নামে উপনিবেশ স্থাপনের। বিপরীতে তারা “বহুর সম্মিলন” এই মতাদর্শে আস্থাশীল। রতনতনু ঘোষ এ সম্পর্কে বলেন— “উত্তরাধুনিকতা কোন মতবাদ নয়, বরং মতাদর্শ।”[৫]
পোস্টমডার্ন ভাবনায় যে দিকটী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা হল মহাআখ্যান বিরোধিতা, বর্ত্তমান সমাজবাস্তবতায় ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে মহাআখ্যান লোপ পেয়েছে ও এর প্রয়োজনও ফুরিয়ে গেছে এমনটাই মনে করেন পোস্টমডার্নিস্টরা, তারা পরিবর্ত্তন চান, সে পরিবর্ত্তন যাবতীয় ডিসকোর্স, টেক্সট ও বয়ানের। সবকিছু নতুন করে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী তারা। এতে মনে হতে তারা সম্পূর্ণভাবে নৈরাজ্যবাদী, প্রকৃতপক্ষে তারা এমনটা নন, আধুনিকতার নানা সীমাবদ্ধতা দেখে ও পারিপার্শ্বিক পরিবর্ত্তনের জন্যই তারা নব মূল্যায়ণে আগ্রহী। সমালোচকের মতে— “বাচনের পাল্টা বাচন গঠন করা, অবয়ববাদ পেরিয়ে অধুনান্তিক নারীবাদে পৌঁছানো, আন্তর্জাতিকতা পেরিয়ে বিশ্বায়নের পথ ধরা, মাস্টার টেক্সটকে ভেঙে ইন্টারটেক্সটে রূপায়ণ, প্রচলিত সংস্কৃতিকে সংকর সংস্কৃতির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, বহুজাতিক সংস্থাকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করা ও বৈশ্বিক ইস্যু, এজেন্ডা ও এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতাগুলো অতিক্রমের প্রয়াস চালায় উত্তরাধুনিকতা।”[৬]
বিশিষ্ট উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিক ফ্রেডরিক জেমসন মার্কসবাদী আদর্শে আস্থাশীল, তাই তিনি মনে করেন এই পন্থার সর্ব্বশেষ ধাপই উত্তরাধুনিকতা, লিওতার মনে করেন নতুন প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে আর কোন “গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ বা মেটা ন্যারেটিভ” সৃষ্টি হবে না, যা হবে সব বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ন্যারেটিভের সমন্বয়, তাই তিনি মনে করেন এমন সমন্বয়ের মধ্যেই রয়েছে প্রগতির মূল। উত্তরাধুনিকদের মধ্যে সংশয়বাদী ধারার চিন্তকদের অন্যতম জ্যাঁ বদ্রিলার, তিনি স্যামুয়েল বেকেটের অ্যাবসার্ড নাটকের মতই জীবনকে দেখতে আগ্রহী, তাঁর মতে জীবন হল ক্ষুদ্র, অসংলগ্ন, অর্থহীন, ক্লান্তিকর ও নিঃশেষের দিকে ধাবমান। তাই তিনি ঘোষণা করেন উত্তরাধুনিক জীবনে কমপক্ষে তিনটী জিনিসের মৃত্যু হয়েছে— আধুনিকতা, বাস্তবতা ও যৌনতা। প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতিতে মানুষের জীবনে বাস্তব আর অবাস্তবের ব্যবধান ঘুচে গেছে অনেকটাই, মানুষ চাইলেই এখন ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করে নিজের ইচ্ছেমত বিনোদন লাভ করতে পারে, যা বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চাইতেও বেশী বাস্তব রূপে প্রতিভাত হয়। যৌনতার মৃত্যু হয়েছে কারণ, বর্ত্তমান পৃথিবীতে প্রেমের যে রূপ তা যেন অনেকটা নতুন ধারার প্রেম, প্রেমে থাকে ছলাকলা ও যৌনতা। ছলাকলায় থাকে— “চোখের ইসাড়া, ইঙ্গিত, চিঠিপত্রের আদানপ্রদান, প্রেমের কবিতার আদানপ্রদান, গুরুজনের দৃষ্টির আড়ালে কপোল রক্তিম হওয়া, ফিসফাস কথাবার্ত্তা ইত্যাদি।” [৭] এর পরের ধাপ হল যৌনতা, যেহেতু ছলাকলা নেই তেমনভাবে, যৌনতা সরাসরি এসে পড়ে প্রায়ই, এতে যৌনতা তার কাঙ্ক্ষিত আবেদন হারিয়েছে, কারণ, এতে আগের মত উত্তেজনা ও আনন্দ নেই। তাই বদ্রিলারের মতে প্রকৃত যৌনতার মৃত্যু ঘটেছে। বদ্রিলার মনে করেন উত্তরাধুনিক যুগ প্রকৃতপক্ষে “সায়েন্স ফিকশনের যুগ।” বদ্রিলার ও উত্তরাধুনিকতা সম্পর্কে বাংলা ভাষায় উত্তরাধুনিক তত্ত্ব নিয়ে কাজে অগ্রগণ্য তাত্ত্বিক মলয় রায়চৌধুরী বলেন— “ফ্রাঙ্কফার্ট স্কুলের ভাবুকরা, এবং বদ্রিলার, বলেছেন যে, এখনকার আমলাতান্ত্রিক, গণমাধ্যম-প্রদূষিত, ভোগবাদী ভিড়ের চাপে ব্যক্তি নস্যাৎ হয়ে গেছে, উবে গেছে। এইরকম সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অহং ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে রূপান্তরিত হয়েছে হইচইপূর্ণ অস্হিরতায়, অসংলগ্নতায়। আধুনিকতার উদ্বেগের জায়গায় এসেছে পোস্টমডার্ন হিস্টিরিয়া।”[৮]
সবশেষে একটা কথা স্পষ্ট বলা যায় যে, উত্তরাধুনিকতা হল জীবনকে সম্পূর্ণভাবে নতুন রূপে উপস্থাপনের একটা প্রয়াস। এর যথার্থ সংজ্ঞা নির্দ্ধারণ হয়ত সম্ভব নয় কিন্তু বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের লেখায় এর বৈশিষ্ট্য ও আদর্শ সমূহ ওঠে এসেছে। তাই এটা দুর্বোধ্য এমনটা বলার উপায় নেই সম্ভবত! উত্তরাধুনিকতা নিয়ে যারা লিখে চলেছেন তাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য সত্ত্বেও মূল বিষয়গুলোতে তাদের মধ্যে বেশ মিলই লক্ষ্য করা যায়। উত্তরাধনিকদের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হল তাদের প্রশ্ন করা, তারা বহুল প্রচলিত ও চর্চ্চিত বলে কোন জ্ঞান বা বিশ্বাসকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন না, আধুনিকতার যে পাশ্চাত্য স্বভাব যা বাকী পৃথিবীকে করেছে “অপর”, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে উত্তরাধুনিকতা। পাশ্চাত্যের সভ্য করার নামে যে উপনিবেশ স্থাপন করার ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছে, সে জায়গাটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে উত্তরাধুনিকতা। “উত্তরাধুনিকতা, আদর্শবাদের নামে যে বিচলন দেখা দিচ্ছে তাকে এবং ইউরোকেন্দ্রিকতাকে প্রশ্ন করছে। প্রতিষ্ঠানের নামে চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন যুক্তিতর্কের কাঠামোগুলোকে প্রশ্ন করছে। অর্থাত্ excesses of modernism অথবা আধুনিকতার নামে যে অতিরঞ্জন হচ্ছে, অতিশয় উক্তি হচ্ছে— এগুলোকে প্রশ্ন করছে। কাঠামোকে প্রশ্ন করছে— কেন্দ্র কার? আপনি যে সভ্যতা ছড়াচ্ছেন তা কার সভ্যতা? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়াটা হচ্ছে উত্তরাধুনিকতার ইতিবাচক দিক।”[৯]
বস্তুত, উত্তরাধুনিকতা এখনও আমাদের দেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশের কাছে ততটা পরিস্ফুট নয় যতটা ইউরোপ ও আমেরিকায়। স্বাভাবিকভাবেই একটা দূরত্ব আছে মূল চিন্তায় ও আমাদের চিন্তায়, সে দূরত্ব ঘুচানোর কাজে ব্রতী আছেন অনেক গবেষক ও প্রাবন্ধিক। তারা তাদের মত করে ও আমাদের দেশকাল অনুযায়ী ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছেন উত্তরাধুনিক তত্ত্বের। এই তত্ত্ব এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ততটা আলোড়ন তোলেনি প্রাচ্যে যতটা হয়েছে পাশ্চাত্যে। সময়ের সাথে এর বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা যায় ও এর লক্ষণগুলো আরো স্পষ্ট হবে স্বাভাবিক মানুষের জীবনে এটা বলা যায়।
তথ্যনির্দ্দেশ:
১. The postmodern turn: Essays in postmodern theory and culture, Ihab Hassan, Ohio University press, 1987, page no 12.
২. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা, রুদ্র কিংশুক, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃষ্ঠা ২৩।
৩. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা: অথর, রিডার, টেক্সট, হুমায়ুন কবির, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৮৮।
৪. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা: অথর, রিডার, টেক্সট, হুমায়ুন কবির, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৮৮।
৫. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা: প্রবণতা ও গন্তব্য, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৩০।
৬. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা: প্রবণতা ও গন্তব্য, কথাপ্রকাশ,২০১৭, পৃষ্ঠা ২৯।
৭. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, উত্তরাধুনিকতা, আনন্দ ঘোষ হাজরা, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৬।
৮. মলয় রায়চৌধুরীর প্রবন্ধ
৯. https://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref= ‘উত্তরাধুনিকতা প্রান্তজনের শিল্পকেতুলে ধরছে’ — সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
সহায়ক গ্রন্থ :
১. উত্তরাধুনিকতা, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত, কথাপ্রকাশ, ২০১৭।
২. আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতা, সালাহউদ্দিন আইয়ুব, মাওলা ব্রাদার্স, ২০১০।
৩. পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্যভাবনা, নবেন্দু সেন সম্পাদিত, রত্নাবলী, ২০০৯।
৪. Post-modernism : A very short introduction, Christopher Butler, Oxford University Press, 2002.
৫. Postmodernism, or, The Cultural Logic of Late Capitalism, Fredric Jemeson, Duke University press, 1991.
৬. The postmodern turn: Essays in postmodern theory and culture,Ihab Hassan, Ohio University press, 1987.
চলন্ত সরকার
জন্ম : ১ এপ্রিল ১৯৯২, মৈমনসিনংহ।
আগ্রহের বিষয় : মিথলজী, তুলনামূলক সাহিত্য, পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব।
পড়াশোনা : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল। বাংলা ভাষা সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{পোষ্টমডার্ণিজম ও এর বৈশিষ্ট্য [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}