মেহেদি হাসান তন্ময়ের একশো হাইকু

3

মেহেদি হাসান তন্ময় ১৯ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন । লেখালেখি শুরু করেন ২০১৩ থেকে ।

১.
বসন্ত কলি
ঝরে যাবার পূর্বে
প্রস্ফুটিত পুষ্প।

২.
বর্ষারাতে স্নান
মৃত্যুর কিছু আগে
ঘোরে বেঁচে আছে।

৩.
হলুদ হেমন্ত
সঙ্গমের খানিক বাদে
সহাস্য পুতুলবউ।

৪.
স্বভাবী শরৎ
বৃষ্টি রোদ্দুর হুটহাট
খেঁকশিয়ালের মৃত্যু।

৫.
গ্রীষ্মে সহ্যশক্তি
ছায়াঘন পথে হবে
আমাদের আলিঙ্গন।

৬.
পনের দিনের প্রচেষ্টা
চাঁদ প্লেট পূর্ণ হলো
অতঃপর অমাবস্যা।

৭.
দাঁড়িয়ে বৃক্ষতলে
পাতা ভিজছে দুলছে
আকাশ পরিষ্কার।

৮.
সৈকতে গোধূলি লগ্ন
ধর্ষণ ও হত্যাপন্থী
রক্তে রক্তে একাকার।

৯.
লেপমুড়ি দিয়ে আঁধার
বাহিরে শীতল ভেতরে উষ্ণতা
কৈশোর স্বপ্নজাল।

১০.
শাপলার মুখ
ফুটেছে আভিজাত্যে
আকাশী তাকায়।

১১.
বর্ষার পরে গ্রীষ্ম
ঘুমের অভাবের পরে
ঘুমহীন রাত।

১২.
ঋতুচক্র বদল
হাইস্কুলের দীর্ঘ ক্লাস
দূর থেকে উঁকি।

১৩.
বর্ষার রাত
জলে ঝাঁপ দিলো
মাছ ও চাঁদ।

১৪.
তুই সংক্রান্তিতিথি
তুমি
নতুনত্বে পুরোনো।

১৫.
উঁচুতম পাহাড়
চলে পাতালট্রেন
উষ্ণ কুয়াশার নকশা।

১৬.
জল স্পর্শক
কিছু না পেয়ে
খরায় মন্বন্তর।

১৭.
শুভ্রমেঘের সকাল
মাঠেঘাটে রক্তারক্তি
আল্লাহু আকবর।

১৮.
নয়া বসন্ত
অভিমানে তুমুল ঝড়বৃষ্টি
মাঝে গ্রীষ্মকালীন খরা।

১৯.
ছোঁয়াচ বসন্তরোগ
পূর্ববর্তী পঁচা লাশ
উঠে দাঁড়ালো।

২০.
ধরাধামে বৃষ্টি
ভেজা ছাতায় দাঁড়িয়ে
ঘুমন্ত অসাম্য।

২১.
ফুটেছে বৈশাখী ফুল
টিএসসি মাতোয়ারা
বুড়ো শিশু বাকিরা।

২২.
পাহাড়ের কাছে অগ্নি
খিলখিল করে হাসে
পর্বতে জলোচ্ছ্বাস।

২৩.
আকাশে নিযূত তারা
জ্বলছে আড়াল খসছে
ধ্রুবতারা এক।

২৪.
রামধনুর বলয়
বাতাসী কলতানে জাগে
মহাকালে প্রণয়!

২৫.
ঠোঁটে আগ্নেয়গিরি
ব্যস্ততম দস্তখতে নিভছে
ভেতরের আগুন।

২৬.
সকাল থেকে রাত
প্রত্যক্ষদেবতা জাগ্রতচিত্তে
আঁধারি মহাবিশ্বে।

২৭.
রোদেলা চাঁদে
মানবছায়ার খেলা
দিবারাত ভর।

২৮.
একটি নির্জনতা
নাগরিক জনঅরণ্যে
উভয়কে চুমো দিচ্ছে।

২৯.
শেষরাতে ঝড়
একটি শালিক ও ঘুঘু
মিশে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়।

৩০.
বৈশাখী শাস্তি
শেষ থেকে শুরু হলো
তাবৎ সংসার।

৩১.
সন্ধ্যানদীর পার
উভয়ে হাতরেখে হাঁটছি
তুমিও দেখছো ভ্রম।

৩২.
আকাশ মেঘে বিদ্যুৎ
চমকিয়ে শেষ ডাক
বৃষ্টি ঝরবে চোখে।

৩৩.
বুকে এক পকেট
মিঠেপানি রেখেছি
তবু লবণাক্ত সায়র চাই?

৩৪.
স্বপ্ন শেষে
উঠে দাঁড়ালো
মধ্যবিত্ত বাস্তবতা।

৩৫.
কী গভীর ডাক
চিনচিন না ঝিম
নিষ্পাপ নৈঃশব্দ্য।

৩৬.
নিংড়ে বাঁধা
হতচ্ছাড়া মনের নিয়ম
সামাজিকতা।

৩৭.
দারুন শরৎকাল
মেঘ চাঁদ নিভালেও
প্রতিমা উজ্জ্বল।

৩৮.
শিমুলের লাল ওড়না
কোকিল সুর
বসন্ত এসে গেল।

৩৯.
নির্জনে বৃষ্টিপ্রহর
শুধু শকুনের মন
নিষ্পাপ।

৪০.
মুক্ত বিহঙ্গে
দাঁড়িয়ে আছি
রাস্তাবন্ধ।

৪১.
মৃত্তিকায় দণ্ডায়মান
সরু বৃক্ষ
আকাশ ছুঁয়ে

৪২.
পিচঢালা রোড
চাকায় সময়ের গতি
জানে কে? কে আগে যায়!

৪৩.
জলে ডুব
চারিদিকে তরঙ্গ
ঘূর্নিপাকে বৃত্ত।

৪৪.
জোছনার আলো
থুতনি বেয়ে শরীরে
মেঘস্তূপে বিদ্যুৎ।

৪৫.
রাতভর জেগে
ভর্তি খাতা ও টুসকি
উপহার কাকে?

৪৬.
ছুটছে বড়রাস্তা ধরে
পেছনে অনাবিল প্রান্তর
সঙ্গী ধ্রুব চাঁদ।

৪৭.
ফুটেছে গোলাপ
এবার সাবধানতা পাপ
চলতি আলাপ।

৪৮.
জলে ধর্মজাল
উঠেছে চ্যালা মাছ
খায় ইলিশের ডিম।

৪৯.
দর্শনীয় মোড়
সাইনবোর্ড না টাঙ্গালেও
দুর্ঘটনাপ্রবণ।

৫০.
সেকেণ্ডে ঘড়ির সুর
ব্যাটারি ফুরাতে
এক সেকেণ্ড!

৫১.
ছোটোর কাঁধে ওঠা
অভদ্রতা-
জীবিতের কাঁধে?

৫২.
ব্যস্ত নদী
ভাসে- চলে যায়
পড়ে থাকে বালুকণা।

৫৩.
গোলাপ মাফ করো
হাতে তোলা হয়নি
ফুটেছো বুক গেঁথে।

৫৪.
শ্যামল বন
ছুঁয়ে ঝড় ওঠে
তৃষ্ণা সমুদ্রে।

৫৫.
সূর্য ছুঁয়ে চিল
ছায়া ফেলে কি?
চোখে ঝিলমিল।

৫৬.
একভাবে উড়ে যায়
বক ও কাক
সংকুচিত অবাক।

৫৭.
বুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ
বিভক্ত ফলাফল
হিমানী ও সাগরমাতা।

৫৮.
জরুরী আইন
মিছিল শ্লোগান
বৃষ্টির রং লাল।

৫৯.
ঘরের সুঘ্রাণ
রাস্তাভরা আবর্জনা
জরুরী রাস্তায় সাঁতার।

৬০.
তুমুল বর্ষা
জুতা হাতে হেঁটে চলে
মাটির পুতুল।

৬১.
বাসন্তীর চিরকুট
দেখতে দেখতে
দেখা হবে?

৬২.
ধুলোবালিময় জনঅরণ্য
সবাই দেখছে
কেউ কাউকে দেখছে না।

৬৩.
জোছনা রাত
হাওয়ার আদরে
শুণ্যে ভাসছো?

৬৪.
মানুষই আপদ
তবুও বুক উঁচিয়ে বলে
সর্বসেরা তাবৎ!

৬৫.
প্রথম রাত
রিখটার স্কেল ভেঙ্গে
মৃৎকম্পন।

৬৬.
প্রেম কিছু নয়
নতুন বোতল
পেগ পুরোনো মদ।

৬৭.
সিংহাসনে রাণী
মন্ত্রীসভার গবেষণা হয়
মন্ত্রীত্ব নিয়ে।

৬৮.
নীরব বৃষ্টিতে
ভিজে চুপচুপ
কাঁচ ও মণি।

৬৯.
ভিজছে পাতা
ধুয়ে যায়
জমাট ধুলো।

৭০.
ঘুম ঘুম ভাব
হটাৎ চেতনা
মনে পড়ার গান।

৭১.
গোধূলি লগ্ন
খোলা প্রান্তর
আকাশে কালাপাহাড়।

৭২.
বদমেজাজী শরৎ
বৃষ্টির ধাওয়া
উল্টাপাল্টা হাওয়া।

৭৩.
হলুদ বিকেল
সরল স্বাভাবিকে
কিশোরী হৈমন্তী।

৭৪.
বসন্তের উচ্ছাস
স্নিগ্ধ দুইমাসে
মৃত্যুর আশংকা।

৭৫.
গ্রীষ্মের ইশারা
এক পলকে পুড়ে
ছাইভস্ম।

৭৬.
কুয়াশা মাখা রাত
বুক কেঁপে ওঠে
বিনা আঘাতে।

৭৭.
নবান্ন উৎসব
শর্তহীন চুক্তিনামায়
চিরায়ত চঞ্চল প্রাণ।

৭৮.
চাঁদের চোখে চোখ
দিগন্তে নিরবধি পথ
হাঁটে হাওয়া।

৭৯.
ফাগুনে ওঠো পিতা
প্রেম এবং ঈশ্বর
উভয়েই তিতা!

৮০.
চাঁদনিরাত
নাকগলিয়ে বৃক্ষ
পিছিয়ে সাথে চলে।

৮১.
গ্রামীণ রাত
চাঁদ গলে পড়ে
টিনের চালায়।

৮২.
মৃত্যুতে অন্ধ
ঈশ্বর তবুও রেখেছে
ক্ষুধাতুর কামান্ধ!

৮৩.
প্রতিচ্ছবির দর্পণ
দেখা যায়না
স্ব-চরিত্র।

৮৪.
আঁধারে আপোষ
কবি-রাজ সাজে
হেমন্তী তাপস!

৮৫.
সমতলীয় লাল পথ
কিছু মানুষ হেঁটে চলে
খুব গভীরের মনে।

৮৬.
জোছনার রাত
মাছ লাফ দিলো
সোনালী চাঁদে।

৮৭.
শরৎকালীন দুপুর
স্থির কচুরিপানা
শ্যামল বন।

৮৮.
গাঢ় অন্ধকার
পুড়ে যাচ্ছে
গোটা পৃথিবী।

৮৯.
চাঁদনি রাত
জলচে পোকা
সোনালী ঝিরঝির।

৯০.
বর্ষার বৃষ্টি
মরে যায়
হিম ফাঁকতালে।

৯১.
হেমন্ত ও বসন্ত
মাঝে দ্যোতিত
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল।

৯২.
নৈঃশব্দের রাত
আকাশের ব্যস্ত পায়চারী
বর্ধিষ্ণু আঁধার।

৯৩.
কোমলাঙ্গ রুমে
ঈশ্বর এবং প্রেমিকা
উভয়েই ঘুমে।

৯৪.
ভেজা মাটিতে
উজ্জ্বল হলো
ভরাট দধির খুটি।

৯৫.
চাঁদের প্রতিচ্ছবি
নদীর জলে- স্রোত
ফুটো হয়ে ফোলে।

৯৬.
বর্ষায় স্থলে কৈ
দেখে পৃথিবী নাচে
তাথৈ তাথৈ!

৯৭.
বিবেকের দীক্ষা
ঈশ্বর নয় প্রেম নয়
ন্যায়ই তিতীক্ষা!

৯৮.
বসন্তে প্রেমের দাস
দুইমাসে নাশ নয়
দ্রুততম সর্বনাশ!

৯৯.
স্থলে ব্যাঙ লাফায়
নিচুতে দাঁড়ায়
অর্ধচন্দ্র।

১০০.
সংযুক্ত ডালপাতা
কষ সেঁচছে
পুষ্প সৌরভে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

শেয়ার