চষতে এসে নাও কেন কেড়ে
জীবনের জাহাজ বয়ে বেড়িয়ে কাঁধে ফলাতে এসেছ সোনা,
এমন মৃত্যু আশা করেছিলে কি চাষী কাকা? এমন পরিণাম?
আকষ্মিক আঘাতের চিহ্ন লেপ্টে থাকবে গায়ে মরণেরও পরে!
এমন অসতর্ক মুহূর্ত্তের জনম কয়বার দিয়েছ জীবনে,
আছে কি মনে? লাঙ্গলের তলে জীবন নিয়েছ রাশি রাশি
না কি করেছ তুমি পণ; লাঙলের তেজে চাপা দেবে অবিরত
ইঁদুরখেকো হাজারো গোখরার জীবন! গোখরাছানা
আর তুলবে না ফণা। এবার তো হলে খুশী! এবার চল
মৃতদের নিয়ে শ্মশানের পথে চলি। দেখতে এসে যদি তখন কেউ
দিতে চায় স্বান্তনা, নেবে না তা জানি নেবে না।
নিজ হাতে পুড়াবে গোখরা, চেয়ে নাও মৃত হতে মার্জ্জনা।
আমি চুপ আছি। আল্লা মালুম। কেউ জানবে না! কেউ জানবে না!
ফুঁ দিলে দমে না আগুন
ভেবেছ টেষ্টোরেনের প্রভাবে উত্তেজিত জনতা
ফুঁ দিলেই দমে যাবে চিরতরে শব্দহীন অনুভূতির মত। কিন্তু দমেনি কেউ।
লাঠী, দা, কোদাল অথবা পশু জবাইয়ের কিরিচ হাতে সবাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে।
পূর্ণিমার আলোয় চকচকানো প্রাসাদে ঢুকবে তারা।
গোপন কক্ষের—
বিলাসবহুল সব আসবাব তছনছ করে দিয়ে
দামালের মত উঁচুস্বরে বলবে, “শালী, রাক্ষসী!”
কলাপাতায় শরীর ঢেকে তুমি হয়ত মাফ মাগবে হাঁটু গেড়ে।
শিউরে উঠে বলবে,
“আমি রাক্ষসী, রাক্ষস হয়ে মানুষের ভাল করতে নেই।
আমায় ক্ষমা কর।”
তখন, উত্তেজিত জনতাকে দমাবে কে?
ক্ষমা, তা তারা করবে না নিশ্চিত।
বরং চলবে শলা পরামর্শ—
কেউ কেউ নিষ্ঠুর প্রস্তাবও দিয়ে দিতে পারে।
আচ্ছা, তখন তোমার মান কে বাঁচাবে?
রাষ্ট্র? বিরোধী দল? নাকি বরাবরের মতোই আমাকে ডাকাবে! …
আলোকবিন্দু
কেউ কি দেখেছে তোমার চোখের ফোঁটা?
যেমনটি ইলশেগুঁড়ির—
যা ঝরে নীরবে, অতি যত্নে।
সাদরে গ্রহণ করে সেই ফোঁটা
লতা, গুল্ম ও দ্বিবীজপত্রী আর ফ্লায়িং সর্স।
তবে হোমো-এর আধুনিক সংস্করণ
তা গ্রহণ করতে নারাজ!
হেতুখানা অবশ্য যুক্তিসংগত,
এই তো মেঘ নয়।
সুতরাং গ্রহণ করার মানে কী হয়!
ফোঁটা মানেই ইশ্বর,
এর না আছে আকৃতি না আছে আকার,
আছে শুধু আলোকরেখা।
ব্যক্তিগত জিঞ্জিরে আবদ্ধ সম্প্রদায়
কীভাবেই বা বুঝবে তারা ঐশ্বরিক ফুলের ঘ্রাণ
কিংবা ঝরে পড়া ফোঁটার মর্ম্মকথা!
সায়েম উদ্দিন
(কবিতায় ডুবে গেলে সে ভুলে যায় প্রকৃতির যাবতীয় পরশ।)
জন্মঃ ১৫ মে, ১৯৯৭, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়।
শঙ্খনদী ঘেঁষা বৈলতলী গ্রামেই কেটেছে বাল্যবেলা। গণিতে স্নাতকরত, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। সম্পাদনা করেন “সমসাময়িক” নামে সাহিত্য ম্যাগ। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের মূল কর্ম্মকাণ্ডে।
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{আলোকবিন্দু ও অন্যান্য কবিতা [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}