বটতলার বয়ান : ধন ও ধনুক || আরণ্যক টিটো

0

ছবি : ইণ্টারনেট থেকে

‘দ্’ যখন পূর্ণ হয় তখন সে ‘দ’,
‘দ’ যখন স্থিত হয় তখন সে ‘ধ’ রূপ পায়।
বাঙলা বর্ণমালায়
দ্-এর ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক মান হল দান, দ-এর মান দাতা, ধ-এর মান দানস্থিত।
দানস্থিত-মানবাহী বর্ণ ধ-এর সাথে ‘ন’ বর্ণের যোগসাধনে সৃজন হয় ‘ধন’ শব্দের।
‘ন’ বর্ণের ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক মান হল না-করণ/অন-করণ।
দানস্থিতের না-করণ/অন-করণ হল ধন। যেমনঃ দানস্থিত + না-করণ/অন-করণ = ধ + ন = ধন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে আহরিত গোরু, ছাগল, হরিণ… এইসব প্রাচুর্য্য/সম্পৎ কীভাবে ধন হয় তাহা দেখা যাক—
প্রকৃতির দান স্বরূপ যে হরিণটী বনেবাদাড়ে জীবনধারণ করছিল, আপনি তাহাকে ধরে আনলেন গৃহে।
ফলে প্রকৃতির দান হরিণটী দানস্থিত ‘ধ’ হয়ে গেল,
কারণ, হরিণটী ধরেছেন, হরিণটী দিয়েই জীবন ধারণ করবেন, আপনি।
হরিণটী এখন ধ, যাহা ধরা ও ধারণ, এই ধরা ও ধারণ না-করণ/অন-করণ হচ্ছে—
প্রথমত
হরিণটী এখন আর প্রকৃতির দানে বনের হরিণ নেই। বনের হরিণ না-করণে এখন সে মনের হরিণে অন-করণ।
আবার,
দানস্থিত হরিন (ধ) না-করণ হয় আপনার প্রতিদিনের শিকারের ফলে দানস্থিত হরিণের বৃদ্ধির কারণে, যাহা অন-করণ।
সহজ কথায়,
আপনার (দান মারা) ‘ধ’-এর না-করণ আর অন-করণ হল, ধন।
যাহা দেখে অন্যরা বলাবলি করবে, আপনি ভালই দান মেরেছেন।
এই দানমারা ধন বৃদ্ধি পাচ্ছে—
গানিতিক পরিভাষায়
যাহা হল, (দানস্থিত) ৫ টাকার সাথে (দানস্থিত) ১ টাকা যুক্ত হয়ে ৬ টাকায় অন-করণ হয় (দানস্থিত) ৫ টাকার ধারণাকে না-করণ করে।
ধনের কারবারে
ধন (নবরূপে) উত্তীর্ণন করে যাহা, তাহা ধনুক!
ধন হল প্রাচুর্য্য/সম্পৎ।
ধনুক শব্দটীর উৎপত্তি শিকার যুগে।
যখন শিকার করেই জীবিকা নির্ব্বাহ করত মানুষ।
তার শিকারের তালিকায় ছিল বন্যপ্রাণী। যেমন— গোরু, ছাগল, হরিণ …
এইসব বন্যপ্রাণী ছিল মানুষের কাছে প্রাচুর্য্য/সম্পৎ, অর্থাৎ ধন।
এই ধন (জীবন জীবিকার প্রয়োজনে) যখন শিকার করতে হয়, তখন প্রয়োজন হল, অস্ত্রের।
পাঁজরের হাড়ের মতন কিংবা উদয়কালের চাঁদের প্রথম কলার মতন বাঁকানো যে অস্ত্র বানানো হল
তাহার নামকরণ হল ধনুক।
কারণ, এই অস্ত্রটী বানানো হয়েছে ধন (নবরূপে) উত্তীর্ণন করণে, তাই
এই ধনের সাথে (নবরূপে) উত্তীর্ণনের ‘উ’ এবং করণকারীর ‘ক’ যুক্ত করে ধনুক শব্দটী নির্ম্মাণ করা হয়! শব্দ বানানোর এই পদ্ধতির নাম, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ বিধি।
ধনুকের ব্যাবহারিক ইতিহাসে আছে অনেক মহারথীর নামকীর্ত্তন। মানুষের ইতিহাসে ধনুকের ব্যাবহার (প্রাথমিকভাবে) ছিল বন্যপ্রাণী শিকারে।
তখন মানুষ ছিল ঝাঁকবদ্ধ জীব, হিংস্র প্রাণীর ভয়ে সদা বিচলিত, তাই সবাই ছিল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যেহেতু তার প্রতিপক্ষ ছিল হিংস্র প্রাণিকুল।
সময়ের পরিক্রমায় হিংস্রতাকে জয় করে মানুষ নিজেই যখন হিংস্র হয়ে একক একক ঈশ্বর হয়ে ওঠল। ক্রমাগত ভেঙে পড়ল ঝাঁকতত্ত্ব, তখন তার প্রতিপক্ষেরও পরিবর্ত্তন হয়ে গেল, শিকারের পরিধি বিস্তৃত হয়ে মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠল মানুষ, মানুষ মানুষের ধন নবরূপে উত্তীর্ণনে মানুষকে শিকার করে, করছে …

ছবি : ইণ্টারনেট থেকে

যার ইতিহাস কিছুটা জানে অর্জ্জুন, কর্ণ, একলব্য, সিধু, কানু…-এর ধনুক, যাহা রুপান্তরিত হয়েছে আজকের ক্ষেপনাস্ত্রে— মিসাইল, রকটে লাঞ্চারে …
দ্রোনাচার্য্য দেখছে,
ধন ও ধনুকের ব্যাবহারিক আবর্ত্তনে
এই মূহুর্ত্তে
ক্ষেপনাস্ত্র— মিসাইল, রকটে লাঞ্চার … এইসবের কার্য্যকারিতা কী, তাহা দেখছে, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন …
আমরাও দেখছি, দূর থেকে … দূরে দূরে সুরে সুরে …

 

 

 

 

আরণ্যক টিটো
জন্ম : জুন, ০৬, ১৯৭৭।

জন্মস্থান : উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
(শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে।
প্রকাশিত কবিতার বই :
ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)।
প্রকাশিতব্য বই:
অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাবিষয়ক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)।
সম্পাদক : চারবাক।

প্রচ্ছদ : মেহেরাজ হাসান শিশির

{বটতলার বয়াণ : ধন ও ধনুক নিবন্ধটি প্রথমে প্রকাশ করে অকালবোধন । [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে পুনঃপপ্রকাশিত হল। পূর্ব্বে প্রকাশিত নিবন্ধটির সূত্র— বটতলার বয়ান : ধন ও ধনুক
— সম্পাদকীয়}

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার