চক্রের সিলেবাস
অনুভবের সঠিক অনুবাদ নিয়ে কেউ জন্মায় না
বরং
মহাসাগরীয় প্লেট উলটে প্রশ্নের সম্মুখীন হলে
মানুষ ফিরে আসে নিজের কাছে
ভূত্বক ফুঁড়ে অতীতকে স্মরণ করে
বৈধ নথিপত্র জমা পড়লেই
বুলি কপচিয়ে সে পায় মাটির স্পর্শ
চেনা গন্ধে পুরাতন বিশ্ব খুলে
যদি মিশরীয় ভুলের সম্মুখীন হয়
তাহলে অমাবস্যা গায়ে মাখে
কারণ অংশিক ক্ষয়ের যাপন নিয়ে
যত মানুষ জন্মক্ষণ ভুলে গেছে
তাদের আয়োজন ছিল কেবল দুঃখী হবার
পালটে গেলে আবার পালটানো যায়
প্রবাদের ভূমীতে যখন কথার পৌরাণিক আলাপ জেগে ওঠে
শুয়ে থাকা বিষাদ তখন
প্রবচনের বালিশে ঢেকে দেয় নিজের ছায়া
কারণ—
খসে পড়া সব কাহিনীর বনঝোপ
বিকালের শৈশবকে করেছিল সন্ধ্যামুখো বালক
গোধূলীর এক পাশে
তার ফেলে রাখা গল্প কেউ পড়েনি
ভুল অলংকারের বাক্স ভারী হলেই
মনে হয়—
বৈদান্তিক জোছনার আলোতে
আমাদেরো শব্দ আছে
অবজ্ঞার পাতায় লেখা কিছু গদ্যের মর্ম্মাহত ডাক
আমরা কি বুঝিনি?
না কি নীরব উপত্যকার দৃশ্য
আমাদের দেখায়নি বাড়ী ফেরা পাখীর কোলাহল? …
যে বহু সে বিচারক নয়
একেবারে শূন্য করা ঘরবাড়ী,
আর বাতাসের তীব্র তৃষ্ণা আঘাত করলে
যত্ন করে বসতে দিই
পাশে যজ্ঞিডুমুরের অভিমান
সাইকেল চালিয়ে খবর দেয়
মোহের গর্তে পড়েছে একই পালের পাখী
ষড়ঙ্গ ভঙ্গের বেদনা নিয়ে
তারা মেলেছে নান্দনিক চরিত্রের ডানা
বোধের নৌকা উলটে গেলে যেমন
ঝাপসা আলোচনাকে অস্বীকার করা যায় না
তেমন করেই মনের ভেতর তালা ঝুলিয়ে বলতে হয়—
এইবার বিচার করুন
ওই যে ওসব লেখাপত্রের অভিনয়
মুহূর্ত্তবন্দী দৃশ্য
তারপর শিউলী ফুলের রসের মত
শত শত সময় ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের
সেসব কিভাবে মিথ্যাবাদী হয়েছে?
উৎসুক ভয়
তোমার কি সময় হবে?
যদি থাকে ঠিক করে দাও
নষ্ট হয়েছে প্রশ্নের সম্মুখীন জবাব
জনস্রোত পেরিয়ে অন্য কোথাও
গাছের ডালপালায় কিংবা
তলপেটের ব্যাথায় লুকিয়ে নেই কোন প্রশ্ন
কানের পর্দ্দা ছিঁড়ে ফেলছে
ক্ষুধার্ত্ত জ্ঞানের হুমকি ধামকি
বাজারে তার দাম নেই বলেই শুনেছিলাম
তারপরও জিজ্ঞাসার দোকানে
একই রকম তত্ত্ব তামাশায়
আমার তামাক বাগানের হাঁস হতে ইচ্ছে করে
চুপ্চাপ্ ঘাপটি মেরে হাতঘড়ী দেখার মত
আবার জিজ্ঞেস করি
কিন্তু তখন কিছু শোনা যায়নি
একই রকম ভান নিয়ে
তুমি রাস্তার সাদা টগর দেখছিলে…
জবা রায়
জন্মস্থান: ধোবাউড়া, মৈমনসিংহ।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা:
অনার্স, চতুর্থ বর্ষ, চারুকলা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, মৈমনসিংহ।
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{চক্রের সিলেবাস ও অন্যান্য কবিতা [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}