প্রজাতি ও পৃথিবী
সাতশ কোটি মানুষের স্বেদ বিষ্টায়
ভেসে গেছে অপমানিত এই পৃথিবী
সুশীল প্রজাতির জয়তু গেয়ে গেয়ে
বাঘের গলায় বাঁধি রেডিও কলার
জেগে ওঠে নগর, মানুষের ক্ষুধারা
তিমির উদরে জমে শিল্পিত প্লাস্টিক
অনূঢ়া আলো সভ্যতায় নোংরা হলে
‘মানবাধিকার’ বলে সদর্পে পালাই।
দুর্মুখ
জেগেছি যেন বিজলি খচিত বিপ্লব হয়ে
নিগড়ের সন্ধ্যা নেমে এলে চতুর পায়
ফুলকি হয়ে জ্বলে উঠি চেতন প্রদীপ
দারুণ ঝড় আসে, হায়েনার মুখ হয় কালো
অনির্ব্বাণ নেভানো কোন বিদঘুটে গ্রাস
যদি ঠেকাতে না পার দিব্যদর্শী বলছি
তোমাদের ঝুলীতে যোগ হবে নিশ্চয় জেন
আরো একটা ব্যর্থতার পদকভার
একে একে চূর্ণ হলে আলোর আধার সব
থেমে গেলে কিছু ফেনিল দ্রোহ, রক্তমুখ
বিদীর্ণ হবে না তমসার পাথর বুনন
সূর্য্য স্বয়ং রাত্রীতে জেগে ওঠলেও।
শাশ্বতিক গর্ভ
বিপ্লবী থাকে না সৌন্দর্য্যের নিঝুম অন্ত:পুরে
দেখে না বিগত বিজয় আনন্দোৎসব মিছিল
স্বেদ ও রক্তে জন্মে নতুন সূর্য্য, বৈভববৃত্তান্ত
নতুন ময়দানে ফোটে সবুজের শান্তি, নিস্তার
আসে অনপেক্ষিত কীট, বসন্তে অলস বালাই
সৌর ফিউশনে দারিদ্র, অন্ধকারে বাড়ে আগাছা
ওদিকে তপ্ত গর্ভে বাড়ে বিদ্রোহী ভ্রুণায়মানতা
সময়ের বাঁকে বাঁকে আলো-আঁধারী জোয়ার ভাটা।
বাণিজ্যিক
হয়ত ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছেন, তবুও বলি, দেখুন না
সবকিছু কেমন বিক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে যাচ্ছে দিন দিন
সারোগেট মাদারের গর্ভ ধারণের মত চুপেচাপে, ধীরে
বিক্রয়যোগ্য হয়েছে মেয়েদের উষ্ণ হাসি ও কপট লজ্জা।
সংসদ ভবনকে রাজসভাপুরী বলে ভ্রম হয় আজ
পকেটে মুদ্রার ঝনঝনানি ঠিকমত উচ্চগ্রামে পৌঁছলে
তবেই বুঝি দরবারী হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে টেকা যায়
ওদিকে, সাহিত্য পুরস্কার বিকিকিনির হাট জমেছে খুব!
এভাবে, কবী যখন মেনে চলেন চাহিদা ও যোগান নীতি
কবিমন যেন হয়ে যায় সার-আসক্ত কোন ফসলিজমী
কবিতার গায়ে পড়ে ফরমালিন বা কার্বাইডের আস্তর
কবিতাও তখন পণ্য হয়ে যায়, গণিকার দেহের মত।
সেঁজুতি শুভ আহমেদ
কবী, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
Quora Top Writer 2018।
একাডেমিক শিক্ষা: বিএসএস, এমএসএস (ঢাবি)। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: তুমি কাঁদলেই আমি পরাজিত হই (২০১২)।
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{সেঁজুতি শুভ আহমেদের ‘‘চারটী কবিতা” [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}