ধর্ম্ম শব্দের অর্থ কী?
১) ব্যুৎপত্তি নির্ণয়— ধৃ + ম (মন্)— কর্তৃবাচ্যে। (বঙ্গীয় শব্দকোষ, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়— সংক্ষেপে ‘ব.শ.’।)
২) ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক অর্থ— ধর্ মিতি মিত যাহাতে। (বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তী— সংক্ষেপে‘ব.শব্দা.’)। শরীরসাধন যে কর্ম্মের অপেক্ষা করে। (অমরকোষ)। লোকধারণ করে যে। (ব.শ.)।
৩) অভিধানাদিতে প্রদত্ত প্রতীকী অর্থ — বঙ্গীয় শব্দকোষ অনুসারে : শ্রেয়ঃ, শুভ অদৃষ্ট, পুণ্য, চতুর্ব্বর্গের একতম, আচার, শাস্ত্রদৃষ্টকার্য্যমাত্র, সম্প্রদায়বিশেষের শাস্ত্রবিধি, ন্যায়, নীতি, স্বভাব, অসাধারণ গুণ, উপমা, অভিধেয় বস্তু, অহিংসা, যজ্ঞাদি, উপনিষৎ, ঈশ্বরে অনুরাগ, আত্মা, সোমপ, যম, অর্হদবিশেষ, যুধিষ্ঠির, ব্রহ্মার দক্ষিণস্তনজাত দেবতাবিশেষ, জীবাত্মা, সৎসঙ্গ, ধনুঃ, তপঃশৌচাদিপাদচতুষ্টয়যুক্ত ধর্ম্মের বৃষরূপ, লগ্ন হইতে নবম স্থান, গ্রাম্য দেবতা ধর্ম্মঠাকুর। (পাঠক, অন্যান্য অভিধান ও শব্দকোষ দেখে নিতে পারেন)। …
৪) শব্দটী religion অর্থেও ‘ধর্ম’ বানানে প্রচলিত।
৫) কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ:
… … … কৃষিকাজ করে শস্য উৎপাদন করা কৃষকের ধর্ম্ম । ধরবার যত প্রক্রিয়া আছে, তার ভিতর থেকে কৃষক কেবল শস্য-উৎপাদন প্রক্রিয়াকেই বাস্তবায়িত করার কথা ভাবেন। আর, তা যখন তিনি বাস্তবায়িত করে আত্মীয়-পরিজনের খাদ্য রূপে উপস্থিত করে দেন, তখনই তাঁর ধর্ম্ম রক্ষিত হল। এক্ষেত্রে ‘বিশেষ প্রক্রিয়া’ বা ধৃ-মিতি হল ‘শস্য-উৎপাদন প্রক্রিয়া’; আর তা যে ‘বিশেষ এলাকা’য় মিত হল, সেই এলাকা কৃষকের ক্ষেত্র ও আত্মীয়-পরিজন। এইভাবে কৃষকের এই সমগ্র আচরণটীর দ্বারা তাঁর ধৃ-মিতি মিত হল বলে একে কৃষকের ধর্ম্ম বলে।
তার মানে, ‘ধর্-এর মিতি মিত যাহাতে, যে স্থানে, যে কর্ম্মে, যে আচরণে…’, সে সবকে ধর্ম্ম বলে। সেই হিসেবে সমাজকে (তদ্রূপ সমাজরূপে) ধরে রাখে তার যে বিশেষ প্রকারের ক্রিয়াকলাপ, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, তার সুনির্দ্দিষ্ট এলাকাকে সমাজের ধর্ম্ম বলে। মানুষকে (তদ্রূপ মানুষরূপে) ধরে রাখে তার যে বিশেষ প্রকারের ক্রিয়াকলাপ আচারাদি, তার সুনির্দ্দিষ্ট এলাকাকে মানুষের ধর্ম্ম বলে। বস্তুকে (তদ্বস্তুরূপে) ধরে রাখে তার যে বিশেষ প্রকারের ক্রিয়াকলাপ, তার সুনির্দ্দিষ্ট এলাকাকে বস্তুর ধর্ম্ম বলে।
এই যে ধর্ম্ম, এর দুটী দিক রয়েছে— অন্তর্দেশীয় ও বহির্দেশীয়, অর্থাৎ, ঘরের ধর্ম্ম এবং বাইরের ধর্ম্ম। বস্তু, মানুষ, সমাজ … প্রত্যেকেরই আভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ স্বতঃই প্রচলিত থাকে, এবং সেই ক্ৰিয়াকলাপই তার অস্তিত্বের পরিসীমার মধ্যে তাকে ধরে রাখে; তাই সেই ক্রিয়াকলাপই তার ধর্ম্ম । এই ধর্ম্ম পালন না করলে অস্তিত্বের (বা সেই সত্তার) শরীরটাই বিলুপ্ত হয়। যে কারণে অমরকোষ বলেছেন, ‘(সত্তার) শরীরসাধন যে কর্ম্মের অপেক্ষা করে, তাকেই (তত্তদ সত্তার) শরীরের ধর্ম্ম বলে’। অণুর ভিতরে পরমাণুদের আচরিত কর্ম্মই অণুটীর ধর্ম্ম। সেই ধর্ম্ম পালন না করলে অণুর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। সমাজের ভিতরে তার সদস্যস্বরূপ মানুষদের আচরিত কর্ম্মই সেই সমাজের ধর্ম্ম। সেই ধর্ম্ম পালন না করলে সেই সমাজের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।
প্রতিটী অস্তিত্বের বা সত্তার ভিতরে এইরূপ নিজ নিজ ধর্ম্ম থাকে, যার ওপর সত্তাটীর টিকে থাকা নির্ভর করে। তার মানে, কর্ম্ম যেমন আত্ম-ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার কার্য্যাবলীকে বোঝায়, ধর্ম্ম তেমনি আত্ম-অস্তিত্বকে ধরে রাখার জন্য করণীয় কার্য্যাবলীকে বোঝায়। আর যেহেতু কর্ম্মই সেই কার্য্যাবলী, তাই (সত্তার) কর্ম্মই (তার) ধর্ম্ম পদবাচ্য।
অতএব এ জগতে প্রতিটী অস্তিত্বই তার নিজধর্ম্ম পালন করে তবেই টিকে থাকে এবং সেই সুবাদে এ জগতে ধর্ম্মহীন কোন সত্তাই নেই; সকলে আপন আপন ধর্ম্মে যথার্থেই ধর্ম্ম-পরায়ণ, ধার্ম্মিক। ধূলিকণা থেকে শুরু করে মহাবিশ্ব পর্য্যন্ত প্রতিটী সত্তাই ধর্ম্ম-পরায়ণ। অস্তিত্ব মাত্রেই, তা সে মাটীর ঢেলাই হোক আর কুকুর বেড়াল ডাক্তার মাস্টার … যেই হোক, প্রত্যেকেই যে-যার নিজের অস্তিত্বের ধর্ম্ম অবশ্যই মানেন, অন্যথায় তাঁর অস্তিত্বের বিপর্য্যয়, মৃত্যু বা বিলুপ্তি অনিবার্য্য।
অবশ্য অস্তিত্বসমূহের ইত্যাকার ধর্ম্ম স্বরূপে প্রকাশিত না হয়ে কখনো কখনো ভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়, বিশেষত যখন অন্য কোন সত্তার সঙ্গে এই ধর্ম্মপরায়ণ সত্তাসমূহের, অর্থাৎ এই বস্তু-ব্যক্তি-সমাজের সম্বন্ধ ও পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। সত্তার এই প্রতিক্রিয়া-জনিত ধর্ম্ম-স্বরূপটীকে প্রায়শই ভিন্ন বলে মনে হয়। কিন্তু গভীরে অভিনিবেশ করলে বোঝা যায় যে, সেই প্রতিক্রিয়া-জনিত স্বরূপটী আদতে তাদের আভ্যন্তরীণ ধর্ম্ম থেকেই জন্ম লাভ করেছে। এটী কোন নতুন ধর্ম্ম নয়; সম্বন্ধিত সত্তা দুটীর আভ্যন্তরীণ ধর্ম্মের আত্মীয়তা ও শত্রুতার মিলিত ও নিঃসারিত ফল। … আজকাল একে বস্তুর ‘প্রতিক্রিয়া’ বলা হয়। পাশ্চাত্যে বস্তুর এই প্রতিক্রিয়াকেই বস্তুর ধর্ম্ম বা property বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু ধর্ম্ম শব্দের বানানে দুটী ম কেন? হ্যাঁ, ধর্ ক্রিয়ার সঙ্গে মন্-এর বা ‘মিত’-এর যোগসাধন করতে গেলে মাঝে একটী ম-এর আগম ঘটে। কর্ম্ম, চর্ম্ম, ধর্ম্ম … প্রভৃতি সকল সমজাতীয় শব্দের ক্ষেত্রেই এটী ঘটে। আর, সেটী কেবল জিহ্বা-যন্ত্রের সুবিধার জন্য ঘটে এমন নয়, বাস্তবেও একটী ক্রিয়ার সঙ্গে আর একটী ক্রিয়ার যোগসাধনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পূর্ব্বতন ক্রিয়াটীকে একটু কাটছাঁট করে নিতে হয়, নইলে ক্রিয়াদুটী হাত ধরাধরি করতে পারে না, আগুপিছু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি তৈরী হয় পূর্ব্বতন ক্রিয়াটী (এখানে ধৃ বা ধর্) যদি আবর্ত্তন (ঋ) মূলক হয়। একটী মানুষ যদি বনবন করে ঘুরতে থাকে, তার হাত ধরা মুশকিল। তাই, ধৃ-কে ধর্ করে নিলেই চলে না, তাকে ধর্ ম্-এ পরিণত করে নিতে হয়। এবার তার সঙ্গে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে যেতে পারে ম। তখন ‘ধর্ ক্রিয়ার মিতি (ম্) মিত (ম)’ হয়ে ধর্ম্ম-তে পরিণত হয়ে যায়। আর তার ফলে ‘ধরবার বিশেষ প্রক্রিয়ার বিশেষ এলাকা’ অর্থটী ধর্ম্ম শব্দের মধ্যে ধরা হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে শব্দটীকে ধর্ম লিখে ফেললে, তা মানে হয়ে যায়— ‘ধর মিত যাহাতে’, অর্থাৎ ‘ধরবার বিশেষ এলাকা’। একই ঘটনা ঘটে কর্ম্মাদি শব্দের বেলায়।
কর্ম্ম ও ধর্ম্ম শব্দের নিহিত অর্থের ব্যাখ্যায় আমরা দেখেছি, ‘করা’-কে কমিয়ে শুধুমাত্র টেবিল-করার জ্ঞানে পৃথক করে না নিলে টেবিল বানানোর কর্ম্মটী করা যায় না; ‘ধরা’কে অর্থাৎ শস্যাদি উৎপাদন ও বণ্টনে আপন অস্তিত্ব ধারণ করাকে পৃথক করে না নিলে কৃষকের ধর্ম্ম পালন করা যায় না। আপনি যদি আপনার সকল কারুকাজের জ্ঞান নিয়ে টেবিল বানাতে যান, টেবিল বানানো যাবে না; আর তাছাড়া সেরকম হওয়াও অসম্ভব। … তাই ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি মান্য করতে হলে আপনাকে কর্ম্ম, ধর্ম্ম, চর্ম্ম, ঘর্ম্ম, নর্ম্ম … ইত্যাদি বানানে শব্দগুলি লিখতে পড়তে হবে। তবে প্রতীকী শব্দবিধিতে কর্ম, ধর্ম … ইত্যাদি চলতে পারে। কারণ, তখন কর্ম, ধর্ম শব্দের অর্থ আপনাকে শব্দদুটীর ভিতর থেকে বের করতে হচ্ছে না; তখন কর্ম মানে work, ধর্ম মানে religion; শব্দের বানানের সঙ্গে যে অর্থের কোন সম্বন্ধই নেই।
ওপরে ধর্ম্ম শব্দের ৩-এ প্রদত্ত অর্থগুলি যাদের চিহ্ণিত করে, দেখা যায়, তারা কোন না কোনভাবে ধর্ম্ম শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থের কোন না কোন স্থির প্রতীকী হয়ে যাওয়া রূপ মাত্র। যেমন (ধর্ম্ম শব্দের) ‘শাস্ত্রদৃষ্টকার্য্যমাত্র’ অর্থটীর কথাই ধরা যাক। শাস্ত্রাদিতে বা গ্রন্থাদিতে যে সকল কাজের কথা দেখতে পাওয়া যায়, সেসব প্রধানত মানুষের নিত্য ধর্ম্ম ও নৈমিত্তিক ধর্ম্মের কথাই। প্রতিদিন যে খাদ্যাদি গ্রহণ, মলমূত্রাদি বর্জন … ইত্যাদি করতে হয়, এসব হল নিত্য ধর্ম্ম। আবার, কাউকে কেউ খুন করল, সেটা দেখে ফেললে খুনীর নাম বলে দেওয়ার জন্য মনুষ্যত্ব যে ছটফট করে, এটাও মানুষের নিত্য ধর্ম্ম। কারও কাছে বেতন নিয়ে তার কাজ করে দেওয়া হল নৈমিত্তিক ধর্ম্ম। সুতরাং, ধর্ম্ম শব্দের প্রতীকী অর্থ রূপে ‘শাস্ত্রদৃষ্টকার্য্যমাত্র’কে উল্লেখ করাই যায়, আর বঙ্গীয় শব্দকোষ সেটাই করেছেন। বলতে কী, ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ লিখিত সমস্ত প্রতীকী অর্থগুলিই কমবেশি এই রকম।
… সবশেষে ধর্ম্ম শব্দের ব্যবহার বিষয়ে কিছু তথ্য জানা জরুরী। প্রথমত, আধুনিক শিক্ষিত বাংলাভাষী ধর্ম্ম শব্দটীকে ফেলে দিয়ে religion-বাচক ধর্ম শব্দটী ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ধর্ম্ম শব্দটী এত ব্যাপক অর্থধারী ছিল যে, বাংলাভাষীর উত্তরাধিকারে মানুষের জীবনের ও সমাজের বিশাল অংশ জুড়ে সে বিদ্যমান ছিল। ফলে, ইংরেজিবাদী বাংলাভাষীর একগুঁয়ে চেষ্টা সত্ত্বেও ধর্ম্ম শব্দটী আদৌ পরিত্যক্ত হয়নি; সাধারণ বাংলাভাষীর মুখে তার ব্যবহার আজও ব্যাপকভাবে টিকে রয়েছে। তাছাড়া আজকের বাংলাভাষীর জীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজনই শব্দটীর নবজাগরণ দাবী করছে বিপুলভাবে। একজন মজুর কিংবা কেরাণী যথাসময়ে কাজে যান, নির্দ্দেশ মত কাজ করেন, কর্ম্মান্তে বেতন নেন— ক্রিয়াভিত্তিক শব্দবিধি অনুসারে এরকম মানুষ যথার্থে ধর্ম্মপরায়ন, ধার্ম্মিক। একই কারণে আপন আপন সামাজিক নৈমিত্তিক-ধর্ম্মে বা কর্ম্মে একনিষ্ঠ চাষী, জেলে, ছুতার, কুলি, তাঁতী, শিক্ষক, ডাক্তার, সরকারী কর্ম্মচারী … ইত্যাদি মানুষেরা প্রত্যেকেই ধার্ম্মিক পদবাচ্য। কেননা, তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম্ম পালন করে থাকেন। টিকি-দাড়ি-পৈতা-টুপী পরে অদৃশ্য কোন শাসকের প্রশংসায় যিনি সময় কাটান, তাকে আর যাই বলা যাক, ক্রিয়াভিত্তিক শব্দবিধি অনুসারে ধার্ম্মিক বলা যায় না। একইভাবে যাঁরা শেয়ার বাজারে টাকা খাটায়, নিজে কোন পণ্য বা পরিসেবা উৎপাদন করে না, কেবল অধর্ম্ম দ্বারা অর্থোপার্জন করে, কিংবা যারা ধর্ম্মবৈতংসিক, তাদেরকেও ধার্ম্মিক বলা যায় না।
ভূমিকার পরিবর্ত্তে—
[(ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুসরণ করে কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তী যে বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ সংকলন করেছেন, তার ১ম খণ্ডে ধর্ম্ম শব্দের যেরূপ অর্থ প্রদত্ত হয়েছে, এখানে সেটী উপস্থাপন করা হল ।)
ধর্ম্ম বিষয়ের এই অর্থ আমাদের জানায়, জগতের প্রতিটী সত্তার নিজ নিজ ধর্ম্ম আছে। মানুষের সেই আদি অকৃত্রিম স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ধর্ম্মকে তার সনাতন ধর্ম্ম বলা হয়, অন্যত্র বলেছেন লেখকদ্বয়। তৃষ্ণার্ত্তকে জল দেওয়া, কথা দিয়ে কথা রাখা, মূল্য নিলে তার প্রতিদান দেওয়া, বিপন্নকে রক্ষা করা, শিশু ও বৃদ্ধকে সহায়তা করা … এসবই মানুষের সনাতন ধর্ম্ম। সেই ধর্ম্ম অধঃপতিত হয়ে গ্লানিগ্রস্ত (যদা যদা হি ধর্ম্মস্য …) হলে ধর্ম্মস্রষ্টার জন্ম হয়। তাঁরা মানুষের সনাতন ধর্ম্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় নতুন ধর্ম্মচক্র প্রবর্ত্তন করেন। কিন্তু জগতের নিয়মে সেই নবধর্ম্ম কিছুকাল পরে পুনরায় গ্লানিগ্রস্ত হতে শুরু করে। মানুষের ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ক্রমে মন্দির মসজিদ গির্জা গুরুদ্বারার … প্রাতিষ্ঠানিক ও মৌলবাদী ধর্ম্মে পরিণত হয়ে যায়। ধর্ম্ম-এর মৌলবাদী, বিকৃত, হিংস্র, অন্ধ ও আধুনিক রূপটীর বিরোধিতা করতে গিয়ে সার্ব্বিকভাবে ধর্ম্ম-এর আমূল বিরোধিতা করাটা— ইংরেজীতে যাকে বলে throwing the baby out with the bathwater সেই কাজ করার সমতুল্য। বিপদ এখানেই।
— নারায়ণচন্দ্র দাস]
কলিম খান
জন্ম: ০১ জানুয়ারী ১৯৫০ মামুদাবাদ (মেদিনীপুর)। মৃত্যু: ১১ জুন ২০১৮ কলিকেতা।কলিম খানের প্রকাশিত গ্রন্থাবলী:
১. মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে (১৯৯৫)
২. দিশা থেকে বিদিশায় : নতুন সহস্রাব্দের প্রবেশবার্তা (১৯৯৯)
৩. জ্যোতি থেকে মমতায় : ফ্রম এনলাইটেনমেন্ট টু…. (২০০০)
৪. পরমাভাষার সংকেত (২০০১)
৫. আত্নহত্যা থেকে গণহত্যা : আসমানদারী করতে দেব কাকে (২০০২)
৬. পরমা ভাষার বোধন উদ্বোধন : ভাষাবিজ্ঞানের ক্রিয়াভিত্তিক রি-ইঞ্জিনিয়ারিং (২০০২)রবি চক্রবর্ত্তী
জন্ম: ২৪শে অক্টোবর ১৯২৯, কোন্নগর, হুগলী।রবি চক্রবর্ত্তীর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী:
১. India Rediscovered (2002)
২. দিগন্তের টানে : The Lure of Horizon (২০১২)কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তীর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী:
১. বাংলাভাষা : প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ (২০০৬)
২. অবিকল্পসন্ধান : বাংলা থেকে বিশ্বে (২০০৮)
৩. বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ১ম খণ্ড (২০০৯) ও বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ২য় খণ্ড (২০১১)
৪. সুন্দর হে সুন্দর (২০১১)
৫. বঙ্গযান (২০১২)
৬. সরল শব্দার্থকোষ (২০১৩)
৭. বাংলা বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে (২০১৩)
৮. বঙ্গতীর্থে মুক্তিস্নান : বাংলাভাষা থেকে সভ্যতার ভবিতব্যে (২০১৫)
৯. ভাষাই পরম আলো (২০১৭)
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{ধর্ম্ম শব্দের অর্থ কী? [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ বিধি (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) ও প্রকৃতিপুরুষ ভাষাদর্শন অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}