আমার নাম ফিলিস্তিন
আমার নাম ফিলিস্তিন, আল-আকসা মসজিদ আমার লজ্জাস্থানের মত পবিত্র
তবুও ইসরায়েলের হাত
কমলার কোয়া থেকে রক্তজবা ফুল তুলে আর আপেলের শরীরে ভুল করে আঁকা শব্দের মত
কাটাকাটির দাগ বসিয়ে দেয় পরম নিষ্ঠুরতায় …
আমি ফিলিস্তিন, আকাশের তারায় আগুন জ্বলে; রাত হয়ে ওঠে কেয়ামত—
তখন খিদের তাড়নায় আমি গিলে ফেলি আস্ত একটা বোম
তবুও যখন পাকস্থলী ভরে না তখন একটা একটা করে বুলেট খাই, খেতে খেতে দেখি—
আমার হৃৎপিণ্ড ফুটো হয়ে জর্ডান নদী হয়ে গেছে, নদী তখন কাঁদে
কাঁদতে-কাঁদতে আমি দেখি মীন আমার ভাইয়ের পশমে জমা করেছে
এক কোটি ডিম!
আমি ফিলিস্তিন, বুটের আঘাতে থেঁতলে পড়ে আছে আমার মস্তিষ্ক
উড়ে চলে গেছে আমার পা, পা খুঁজতে খুঁজতে খোঁড়া হয়ে ঘুরছি পৃথিবী জুড়ে—
হঠাৎ অনুভব পৃথিবী অন্ধকার, ডান হাতে কপাল ছুঁয়ে দেখি আমার নেই চোখ
কোথাও যাইনি আমি, ঘুরছি আর মরছি; আমি ফিলিস্তিন
আমার কোথাও কেউ নেই— শুধু আল্লাহ এবং তার রাসূল আছে যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত
তার বুকে
আমার নামে একটু জমী লেখা আছে কারণ আমি শহীদ! …
ঘুম
বুকের ভিতর একটা ঘুঘু হুহু করে কাঁদে।
কোমল হাতে নরম পালকের ভিতর সূর্য্য জ্বলে ওঠে। স্পর্শ পেয়ে সে আরো কাঁদে।
বুকের ভিতর ঝাপটে ধরি
যদি কান্না থামিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে আদুরে পাখীটা।
দূরে
আরো দূরে
আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে কলরব তুলছে হুজুর।
কান্না মুঠোয় নিয়ে পাখীটাকে চেপে ধরি।
অতঃপর
চিৎকার এত চিৎকার যেন কানের পাশ দিয়ে হাজারো সারস পাখী ওড়ে।
নিয়মের বেড়াজালে আঁটকে পড়ে
ঠোঁটে মাছ নিয়ে ফাঁদে পড়া বকের মতন ছটফট করি।
বুকের ভিতর ঘুঘুটা ঘুমিয়ে পড়ুক, ঘুমিয়ে গেলে গালের আইলে লাগিয়ে দেব এলাচের বন।
গন্ধে পাগল হয়ে যাবে একলা পাখী, একলা ঘুঘু আর আমাদের প্রেম।
গোধূলী
চিরদিন জোকার সেজে মনস্থ করে যায় আঙুলের স্পর্শ তবুও নিস্তার নেই।
শ্বাস ছেড়ে কুড়িয়ে নেয় আয়ু যতটুকু
বেঁচে থাকে এসব ভান কেবল।
ভানের শরীর পেরিয়ে অমোঘ সংসার নিয়ে শাদা পৃষ্ঠায় ভরে ওঠে কাঁটাছেড়া জীবন।
যদিও পালানোর পথ নেই তবুও হাঁটু ভাঁজ করে খানিক নৈঃশব্দে কেঁদে নেই।
এসব কান্নার রঙ নীল।
বুকের ভিতরে ঢেউয়ের ওপর ঢেউ আঁচড়ে পড়ে।
পাহাড় সমান উচ্চতা তার বারংবার তলিয়ে যাই।
তবুও বাঁচার চেষ্টা। মানুষজন্ম তোমাকে পেরিয়ে আমি গোধূলীর শেষ রঙ। …
প্রেমিকের রঙ
ভালবাসার গান গেয়ে পাখী আজ ঠোঁট থেকে বের করছে মাইল মাইল অন্ধকার।
পালক থেকে মুছে ফেলেছে জলের দাগ।
সমূহে ঝর্ণা ভেঙে পড়ছে সাগরের বুকে। যেখানে জল পড়ছে সেখানে সৃষ্টি হয় কালো ফুল।
কালো ফুলের পাপড়িতে বিলাপের সুর। বিলাপের শরীর জুড়ে কেবল স্মৃতি।
ফোয়ারা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভাতের মাড়ে অতঃপর বুদ্বুদ।
বুদ্বুদে ঘুঙুর পরে হেঁটে যায় পরীর মতন সুন্দর মেয়ে।
সকাল থেকে বিকাল, বিকাল থেকে রাত,
রাত থেকে ভোর ছুটাছুটি করে কুড়িয়ে পায় শাপলা ফুলের বিল।
শাপলা দিয়ে সুখ কিনে আনে
আর ধর্ম্মের গান বন্ধ হয়ে আকাশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ে একটি বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস যার রঙ প্রেমিকের দুটি চোখ।
জেসিকা আক্তার জেসি
নিবাস : কুমিল্লা, বাঙলাদেশ।
প্রকাশিত গ্রন্থ : প্রাক্তন এবং অভিশাপ (কাব্য) [প্রকাশক : ঘাসফুল]
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : মেহেরাজ হাসান শিশির
{আমার নাম ফিলিস্তিন ও অন্যান্য কবিতা [বঙ্গীয় শব্দকোষ (শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়), বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ও ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক ভাষাদর্শন (কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী) অনুসৃত] চারবাক-এর বানান রীতিতে প্রকাশিত হল।
— সম্পাদকীয়}