এক
সুদেব, বাপিন, রাজা, বিজয়া তখন ক্লাস ফাইভ-সিক্স । ছোট্ট রথ সাজাতো । পুজো করতো । টুনির আলোয় আর ফুলের মালায় জগন্নাথ দেবকে সাজাতো । পাড়াময় রথ নিয়ে বেড়াতে যেত– রথের দড়ি টানতো সবাই । তারপর সন্ধ্যা হলে মেলায় যেত — পাঁপড় ভাজা…
দুই
কলেজ জীবন । ডাক্তার বান্ধবী সুমনা এসেছিল শেষবার । বাপিনকে দেখতে । জ্বর হয়েছিল বাপিনের । জিলিপি আর পেয়ারা এনেছিল সাথে । বলেছিল, আমি তোকে জাস্ট সহ্য করতে পারি না । তোকে বিয়ে করবো না । আমাকে ছাড় ।
তিন
বাপিনের তখন ত্রিশ । ডিগ্রি কোর্সের এক ছাত্রীর সাথে প্রেম করতো । রথের বিকেলে প্রেমিকা শ্বেতা এসেছিল । দরজা বন্ধ ছিল । ডেকেছিল পাড়ার বাচ্চাগুলো । বাপিন ওদের অনেক পয়সা দিয়েছিল । রথের দড়ি টানেনি । ইচ্ছে করেনি । তবে প্রেমিকার ব্রা-এর হুক খুলেছিল ।
চার
চল্লিশে এসে বাপিন রথের বিকেলে কেবল মদ খেয়েছিল । একা–বেশ বড়ো বড়ো পেগ । নেশা হয়নি ।
বাড়ি ফেরার পথে সে রথের শোভাযাত্রা দেখলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে । কী ভীড়– কী ভীড়–বাতাসা কুড়োচ্ছে কেউ কেউ–সাদা বাতাসা বাপিনের খুব প্রিয়…
সাদা বাতাসা ছোটবেলায় রথের মেলায় গেলেই সে পেত । ঠাকুরমার সাথে সে মেলায় যেত–কত কাদা, কত বৃষ্টি–কত ঝড় – জল …
এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে বাড়ি ফিরছে । গত চল্লিশ বছরের জমানো দুঃখগুলো চোখ দিয়ে টপ টপ করে ঝরে যাচ্ছে… বৃষ্টির জল আর চোখের জল মিশে যাচ্ছে, চিনতে পারছেনা সে, কোনটা চোখের জল আর কোনটা বৃষ্টির..