কিতাব
সে বলেছিল, চল্লিশের আগে অস্থিরতা মূলত তোমার অজ্ঞতাই! এই বৃত্ত গোল, ছলাকলা, খেলাই। তারপরে অস্থিরতা চল্লিশের বিপরীত ছেলে মানুষী শব্দ । তুমি বরং ঢেউয়ের কলতান, পাখির গান পুষো বুকে, অথবা বিকেলের বাগান মোহময়ে, চায়ের চুমুকে, উদাস দুপুরে, ভোরের স্নিগ্ধতায়, প্রেমিকপ্রেমিকার রসিকতায় থাকতে পারো– পারো, কারো গহীন ব্যাথায়, কারো দেয়া অবহেলায় থাকতে। ঐ কুঠারটির তাচ্ছিলে পড়ে থাকায়, জং ধরাতেও– করতে থাক নিজেকে আবিষ্কার! বড় মাছের খাদ্য তালিকায় ছোট মাছদের ইতিহাসও জানতে পারো, অথবা গাছটির জন্ম থেকে কারো বিছানার খাট হওয়া অবধি’র ইতিহাস । ঘুরতে পারো, মাঠ-ঘাট থেকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সকল কিছুতে। তারপর, চল্লিশ আসতেই তুমি হয়ে যেও প্রকৃতি প্রদত্ত এক পবিত্র কিতাব!
পাগল
একটা পাগল পুষি গোপনে, এমনই পাগল যে, ওঁ দেখতে অবিকল আমার মত! হাঁটে, খেলে, রাতকে দুপুর মানে, দুপুরকে রাত! পথের ধারে সমগোত্রীয় কাউকে দেখলেই কেঁদে উঠে! রাষ্ট্র মানে, কাঁটা তারের বেড়াও মানে, হঠাৎ হঠাৎ আকশটাকেই আপন জানে, দেখতে অবিকল আমার মত– ব্যথা পেয়েও হাসি মেখে গেয়ে ওঠে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে, অযথাই হেসে ওঠে, হঠাৎ করে লাফিয়ে ওঠে! পেয়েছি বলে– মরা ফুলের পাপড়ি নিয়ে নাকে মুখে ঘ্রাণ মাখে, দেখতে একেবারেই আমার মত! গাছের সাথে, মাছের সাথে কী যেন কথা বলে, কেউ খেতে না দিলেও অমূল্য হাসি দিতে জানে, দেখতে অবিকল আমার মতো, যেন আমায় জানে!
বিড়াল এবং মৃত মানুষ
বিড়ালটি ছটফট করছে, একটা মোটর সাইকেল এবং তার ড্রাইভার আনন্দ করেই তার বুকের উপর দিয়ে গেছে। ড্রাইভারের সেকি আনন্দ! আমি দেখেছি শানগ্লাসের ভেতর থেকে তাদের হাস্যোজ্জল চোখ! পেছনে বসা দোস্তের মুখাবয়ব যেন বলছিল- শালার বিড়াল, চিৎ হয়ে যন্ত্রণা ভোগ কর এবার, হা হা হা ! সাথে মোটর সাইকেলটার দারুন গতিবেগ। নিমিষেই হাওয়া হলো দুজন, বিড়ালটি মারা যাচ্ছে। আশেপাশের কারো চোখ বিড়ালটির দিকে নেই। এবং বিড়ালটিরও বোধহয় কেউ নেই। হঠাৎ আরেকটা বিড়াল এসে, মারা যাওয়া বিড়ালটির পাশে, কাতর চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখগুলো লাল ছিল, একবার সে আমার দিকেও তাকায় অগ্নি চোখে! কিছুটা ভরকে যাই আমি, একটু পর কেমন অদ্ভুত আওয়াজে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। আরো কয়েকটি বিড়াল এসে জড়ো হলো, তারাও আওয়াজ তুল্লো, প্রতিবাদী লাল চোখে! আমি কিছুটা অসুস্থতা বোধ করি, আমাকে কেমন তাদেরই একজন মনে হচ্ছিলো। এবার কিছু মানুষ লাঠি নিয়ে বিড়ালগুলোকে তাড়াতে এলো, যাহ যাহ– কী অদ্ভুত! আমি, তাড়াতে আসা মানুষগুলো সহ আমাকে মোটেই জীবিত দেখছিলামনা! আমার কাছে মনে হচ্ছিলো তারা সবাই ঐ মরে পড়ে থাকা বিড়ালটির মত! মূলত, আমরা মানুষ মরে পড়ে থাকি না? আহা প্রাণ!
নিঃস্ব ঈশ্বর
নিজেকে গড়ছে অতলে
নুজো হয়ে আরাধনায় মেতে
নিজে পড়ছে সে,
নিজেকে পুড়ছে সে,
নিজেরই সহনও তলে।
তাঁরে বুঝছে সে,
তারেই জানার তাড়নে।
ঘুরে ফিরছে সে,
ফের, ধ্যানে সে নিজও মন-মন্দিরে!
কে জেন বলেছে তারে-
আছে এক আকাশ-পাতালে,
তারেও দেখছে সে
তারই গভীরও গহীনে!
আরো দেখে,
সকলেই সকলের ধ্যানে,
সকলেরে লয়ে একলা পরবাসে।
ধরণী ছেড়ে নক্ষত্রপুঞ্জে,
তারেও ছাড়ে,
ফের ফিরে শূন্য বোধে!
বোধি ঘরে শুধু শব্দ খেলে,
দেখে, সেও ঈশ্বর সেজে সকলের মাঝে! বলে,-
মানুষ নিয়ে পুতুল খেলা খেলে
তবে আমিও চির নিঃস্ব শেষে!
এপার ওপার ব্যথার
সে শুয়ে আছে, নিয়ে পৃথিবীর ভার। বুকে তার কত সবুজ ঘাস — সাথে আঁধার সঙ্গীরূপ ঝলোমল । কংকাল জুড়ে প্রেয়সীর দেয়া ব্যথার স্মৃতি আঁকা । পাশে শুয়ে অনন্তের নিস্তব্ধ সুর বাজে সচল কানে । এখানে কেউ নেই তবু ওপারে কেউ কি ছিল তার? তবে কি শূন্যেঘর এপার ওপার?
লেখকবৃত্তান্তঃ
আজিম পাটোয়ারী
পিতাঃ তোফাজ্জল হোসেন।
মাতাঃ মৃত আনোয়ারা বেগম।
জন্মঃ ১৯৮৭ সালে, ফেনী জেলার রতন পুর গ্রামে।
শিক্ষাঃ নোয়াখালী সরকারী কলেজে দর্শন শাস্ত্রে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত ।