শব্দও খই হয়ে যায়
১৯
মাছরাঙা শালিক দোয়েলের কালো দিঘি মন অরণ্য গহীন । আলোছায়ায় পুড়ে ও পুড়িয়ে অন্তঃপুরে স্নিগ্ধতা অন্তহীন । উপেক্ষা যেভাবে উদাসীনতায় জমায় বিষাদের কারুকার্য কাজল । প্রতি জন্মেই নাট্যমঞ্চ স্বপ্নময় সংকল্প আকাঙ্ক্ষায় সফল । আলোআঁধারি রাত্রির নাক্ষত্রিক চাঁদহীন এক চন্দ্রবিন্দু চাকা । খামখেয়ালি উথালপাতাল ভুলে যাওয়ার আবছায়া কৈশোরের আটচালা । প্রভাতী প্রার্থনার নির্জনতা হেমন্তের শিশির সিক্ত কাশবন দুর্লভ । আমিত্বের জীবন যাপনের স্খলন দূরত্বের মেঘ ছুঁয়ে অবাঞ্ছিত সংসব ।
●
আত্মার লেনদেনে ভোরের প্রথম আলোর কুসুম । পাহাড়ের বুকে নদীর ক্লান্তিকর নিশ্চিন্ত ঘুম । আশ্চর্য জন্মান্তর জন্মমৃত্যু মধ্যকার ভাস্কর্য ভালোবাসার কথামালা । ভোর থেকে ঘোরে পাখিদের ঘরে ফেরার গানে আকাশ আকসা তারা । হিংসার বাগানে অযত্ন তবুও বিস্তার ভালোবাসার বীজ । জন্মমৃত্যুর উষার পারে উত্তরাধিকারীর ভবিষ্যতের জন্যে সময়ের অমোঘ আশীষ । শত ক্ষত সামাল আগলে আলোআঁধারি আলোকের হুদিশ । খেয়ালি মন যখন তখন ভাবুন এক রোদেলা শিশির দিনের ছবি । অভাবের দুঃসহ তীরে ছেঁড়া কাঁথায় রাজকন্যার মন নয় মতি । চোখে তবুও ছেঁড়া সময়ের শস্যশ্যামলা গাঁথা অচেনার গাঁ কাশের ছায়া । শিউলির পরে শিশিরের শুভ্রতা হেমন্তের কাঁচা রঙের দাওয়া ।
স্যাডো
১০৩
প্রতিদিন ডাইরির পাতা ভরে ফুটিয়ে শব্দ এঁকে সময়ের ছবি / প্রতিদিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা বুঁদ হেঁটে পার হতে আজ থেকে কালে কেউ বেঘোরে হারাচ্ছি / কাঁকড়া’র মতো কাউকে লেখা দেবার শেষদিন চুপি নিজের টা ডাকে ছেড়েছি / এ জীবন কবিতার জীবন এতটুকুও নয় অন্ধকার পথ বাঁকে যেমন দেখেছি / ভাষাও সহ্য অতিক্রমে ভীষন অভিমানী হয় যদি কোনদিন / ধুলো কাদার জীবনে অবিরত কান্নাতেও শোধ হয়না মাতৃ-ঋণ / ভোরবেলা ঘুমভাঙে উঠে হয়তোবা দেখবো সে লুপ্তপ্রায় / হে সাধনা নৈঃশব্দ্য জীবনে অমোঘ আলোর পথ দেখাও /
১০৫
মৃত্যু মাখি মৃত্যু লেপি জীবনের ভীষন উতল বেলা ধূধূ বোকাপথে / সম্পর্ক চাদরের ভাঁজে নির্জন বিষণ্ণ মন অজানা মেঘে ভেসে / স্বপ্ন ভাঙার অঙ্ক করা তোর কৈশোর গুগুলবেলা ভুলি কেমনে বল / যেমন ছিলি তেমনি থাক বন্ধু বন্ধু খেল তোর মন টলমল ছল / আমিও অবোধ রে তুই নদী বুঝিনি বলেই বন্ধনহীন রইলো জীবনের গল্প / ইচ্ছে-পাখি হবি মেয়ে একবারও জানলে কিছুই না গাছ আঁকা যেত অল্পসল্প / সেদিনের বিকেল ছুঁইছুঁই নির্জনে বললি এক নিশ্বাসে আর নয় কবিদাদা শুধুই কবি / মনে মন এমন সহজিয়া কি কঠিন বসন্ত এঁকে দিলি তোর পাপড়ি মেলার ছবি / পুড়ে আর পুড়িয়ে সুখ নিংড়ানো অনুভূতি তোর যেন পাহাড়িয়া নদী / বিষাদ আমারও জানিস তোর মতো করে তোকে ভালোবাসতে পারলাম নারে পোড়ামুখি /
যে শব্দ নদী হয়ে গেছে-১০
অ
প্রতিদিন উপেক্ষা অবহেলা তবু নীরব আমার আসাযাওয়া । মাটির গন্ধে শস্যস্বপ্ন আমার স্বাদ ও স্বাদ্ধ লিখে রাখা । বিপন্নতায় বাধ্যতা বসত মৃত্যুর প্রযোজনে বেঁচে থাকা । লজ্জার আনুগত্য তোষামোদ বিচিত্র বোধ অদ্ভুত সময়ের চাকা ।
আ
ঘৃণা আর ক্রোধ ভীষন আগুন ছুঁয়ে মড়ক ও মাড়ি । প্রজন্মের জন্য এ সামান্য জীবন পুড়তে ও পোড়াতে পারি । সেই কিশলয় রঙিন নীল পাড় সাদা শাড়ির মেয়ে । পাহাড়ের বিশ্বাস বুকে ধরে রাখে নদীই জেনো ভালোবেসে । ঝরা পাতার শূণ্যতা জেনেছি কতখানি গাছের মৃত্যু বেদনা । প্রকৃতির বিপুল জীবনের কাছে সভ্যতার অবদান মৃত্যুর কশাঘাত প্রতারণা ।
ই
এই জীবন পশুদের মতো হলেই বোধহয় ভালো হতো । জীবনের গর্ভগৃহে যে পথে অন্ধকার ভরছে যতো । পশুরা নয় মানুষ অবিরত গভীর অসুখের মৃত্যুর বীজ বোনে রোজ । যতটুকু দেখা মারণঅসুখ ছেয়েছে পৃথিবী তবুও সামান্য স্বাদ জাগে আলোরই খোঁজ । জীবনের ব্যর্থতা সয়ে সমাজের ফিসফাস ব্যঙ্গ বিদ্রূপের ধুলোঝড়ে তমসাঘন চোখ । সাফল্যে যত বন্ধু হয় সমাজ ব্যর্থতায় জেনো ততটাই বন্দুক আগুন খাওয়া বোধ । প্রার্থনার চিরন্তন রীতিনীতি পবিত্রতা স্নাত মনপুর কারও আকাশ ভরা নক্ষত্র কারও চাঁদহীন অন্ধকার । শ্রম ও মজুরির অনন্ত অমীমাংসিত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিউটন আজও হাসে কবিদের মাঠটা বড় দরকার ।
ঈ
প্রতিটি জন্মে বন্ধু ও বন্দুক ঘাপটি থাকে মুখোমুখি প্রতীক্ষা পথের ঘাসে ঘাসে । হে জীবন তোমার সহ্য আর ধৈর্যের সাধনায় নির্ধারণ স্পর্শ রাখো প্রথমত বন্ধু না বন্দুক সামলাবে । সেই শিউলি গন্ধের নীলরঙা কৈশোরবেলা টলোমলো বসন্তচর্চিত মেয়েগাছ । শারদীয়া মুখ বকুলের ঝরা পাতায় মন নির্জনে লিখেছিল যে তুমিই সেই তুমিই সেই মেয়ে আমার বিশ্বাস ।
উ
কুড়ি কুড়ি মেঘরোদ হলুদ রঙের দাওয়ার ছায়া এটুকুই সামান্য গৃহকোণের অনুভূতি । ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দ আরো কিছু আলো ও গতি বিষয়ক শব্দমালা অংশত আমারই জখম বিস্মৃতি ।
ডাইরির ছেঁড়া পাতা সিরিজ-১৭
এই যে তোমার ঠোঁটের ডান ধারে – ছোট্ট-খানি তিল-
ওটাই আমার বোটানিক্যাল, ওটাই আমার রাজচন্দ্রপুর, নিশ্চিন্দার ঝিল ।
ওই যে তোমার নাকের ওপর -বিন্দু, বিন্দু জমা ঘাম,
ওটাই আমার ঢাকেশ্বরী, ওটাই ধনঞ্জয়-পান্নালালের গান ।
ওই যে তোমার খোপার ভেতর – বাধ্য চুলের খামখেয়ালি মুগ্ধতা,
ওটাই আমার প্যারেড গ্রাউণ্ড, ওটাই বালিগঙ্গার শিশির ভেজা শুদ্ধতা ।
ওই যে তোমার কানের গায়ে – কানের দুলের বাহার, নাকের নথ-
ওটাই আমার ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া নিশ্চিন্দার চিত্রপট ।
ওই যে তোমার কালি পড়া – ব্যাকুল চোখের বালির সোনাঝড়া কিনার,
ওটাই আমার হপ্পা-বাজার, ঘোষপাড়া-বাজারের স্মৃতিকথা শোনার ।
কপাল ছড়ে সেইসব আলোলাগা বেলার – গভীর ব্যথার স্মৃতি সুধার দাগ,
ওটাই আমার নিশ্চিন্দার মোড়, খেতে বসে বড়মামার এঁটো হাতেই ধরতে শেখানো জলের গ্লাস ।
লেখকবৃত্তান্তঃ
জয়দীপ চক্রবর্তী
পিতাঃ বিমল কুমার চক্রবর্তী
মাতাঃ অরুণা চক্রবর্তী
গ্রাম+পোষ্ট+থানাঃ বাগদা
জেলাঃ উওর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ । জন্ম ১৯৮৪ ৩ সেপ্টেম্বর । পেশাঃ সাংবাদিকতা ।
প্রথম কবিতা বাড়িতে পোষা বিড়ালের অকাল মৃত্যু শোকে । দুহাজার সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । সেই লেখা স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া থেকেই পথ চলার সূচনা বলা যেতে পারে । পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন বাংলা লিটল ম্যাগাজিনে অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প প্রকাশিত হয়েছে । বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকার দুহাজার পাঁচের পর থেকে অসংখ্য লেখালিখি প্রকাশিত হয়েছে । স্থানীয় দেওয়ার পত্রিকা দীর্ঘদিন সম্পাদনা পরবতীর্কালে দুহাজার আট সালে নিজের সম্পাদনায় ”উওরের জানালা” সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হয় । প্রথম সংখ্যা বাইশে শ্রাবণ সংখ্যা থেকে আজও পত্রিকা সান্মাষিক প্রকাশিত হয় ।
প্রকাশিত কবিতার বইঃ শূন্যতার অন্তরমহল