রুদ্র শেষ হয়ে আসা সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে তর্জনীর সুনিপুণ টোকায় ছুঁড়ে দিল হলুদ ফিল্টার । আগুন আর ফিল্টারের আলাদা হয়ে যাওয়া দেখে সে নিজেই হেসে উঠল । এভাবেই তো সে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। রুদ্র চকবাজার যাওয়ার জন্য লোকাল বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল ২নং গেইটে । চকবাজার শিল্পকলার কিংবা চেরাগী মোড়ের উঠতি কবি-সাহিত্যিকদের সাথে এখন তার দারুণ জমে । সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে কয়েকজন বয়েসী কবি সাহিত্যিককে বাতিল খাতায় নাম লিখে দেওয়া বা কুপোকাত করা তার কাছে কোন ব্যাপারই না ।
খাম্বায় হেলান দিয়ে সে আরেকটি সিগারেট জ্বালায় । বাস আসছে-যাচ্ছে । কিন্তু একটাতেও উঠার চান্স নেই । শ্বাস ফেলার জন্য নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষগুলো বাসের জানলার বাইরে নাক বের করে দিয়েছে । যদিও হেঁটে গেলেই এতক্ষণে সে পৌঁছে যেত । পৌঁছে গেলেই দু-একটা মাথামোটা সাহিত্যিক হয়ে যেত কুপোকাত । যে কোনদিন নারী শরীর দেখেনি সে লিখছে স্তনের বর্ণনা । যে কোনদিন খুন করেনি, খুন পর্যন্ত দেখেনি সে কিনা কলম দিয়ে খুন করছে পরপর! অদ্ভুত, অদ্ভুত ঠেকে তার কাছে । ইচ্ছে হয় এসব মুখস্তবাদী অভিজ্ঞতাহীন বুদ্ধিজীবীগুলোর মুখে হাত মেরে বীর্য ঢেলে দিতে । চেটে দেখ ব্যাটা বীর্যের নুনতা স্বাদ । জীবনেতো কখনও বীর্য জিহ্বাতে নিয়ে দেখিসনি । শালা । লিটারেচার চুদায়!
বাংলাদেশের বোধহয় অধিকাংশ সাহিত্যিক সেক্স ডিজিজে আক্রান্ত । আর এসব গর্দভরা সবসময় সস্তা যৌন কাহিনী লিখতে ভালবাসে । এত মানুষের সাথে সে মিশেছে অথচ কাউকে তার সমকক্ষ মনে হয়নি । মনে হয়নি তাকে উতরে যাওয়ার ক্ষমতা কারও আছে । এরা কথার তোড়ে বাল ছিঁড়ে অথচ সামান্য ঠুনকি দিতেই ঝনঝনাঝন বাজে । আর সে বাজানি কীভাবে থামাতে হয় তাও জানে না বোকারা । আরে ব্যাটারা খালি কলসিতে পানি ভর । না সে কষ্টে তারা যাবে না । তাদের একসাথে সব দরকার । খ্যাতি অর্থ নারী । নারী । এই শব্দটি মনে পড়তেই তার জিন্সের প্যান্টে বন্দী কালো শিশ্নটি হঠাৎ ফুলে উঠল । ঐতো, ঐতো নারী, সবুজ ইউনিফর্ম পড়া স্কুল বালিকা, শাদা এ্যাপ্রোনের কলেজ পড়ুয়া যুবতী, ঘামে ভেজা ব্লাউজের মহিলা । ঐতো শাড়ি ফাঁক করে উঁকি দিচ্ছে তার নাভি । নাভি আরও গভীর হওয়া চাই । সতেজ সুগন্ধি-মৃগনাভি । ঠিক জোবাইদার মত । এত সুন্দর নাভি রুদ্রর কখনও চোখে পড়েনি । স্তন আর যৌনাঙ্গেও মধ্যবিন্দু । নাভি…
মুঠোভর্তি মুঠোফোনটা কেঁপে উঠতেই সবুজ বাটন টিপে রুদ্র কানে লাগায় । ‘হ্যাঁ, আমি রুদ্র বলছি, শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো, হ্যাঁ রুদ্র…।’ একবার তার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো বলতে ইচ্ছে হলো-
I m your only son
My name is nail Armstrong …
হ্যাঁ, আমি রুদ্র-
গতকাল যে লোকটি ড্রেনের পাশে লুঙ্গি তুলে প্রস্রাব করতে বসেছিল আমিই তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছি
হ্যাঁ, আমি রুদ্র-
মানুষের ভিড়ে কলেজ পড়ুয়া তরুনীটির স্তন আমিই টিপে দিয়েছিলাম
হ্যাঁ, আমি রুদ্র-
ভিক্ষুকের থালা থেকে টাকা তুলে দৌড় দেওয়া রুদ্র
হ্যাঁ, আমি রুদ্র-
আমরা চার বন্ধু । কাওসার-পানের দোকানদার, হাছান-সুফিয়া হোটেলের বয়, হামিদ-সোনালী ব্যাংকের দারোয়ান এবং আমি । জি.ই.সি. মোড় থেকে গত শুক্রবার একজন বেশ্যাকে ভাড়া করে…
হ্যাঁ, আমি রুদ্র-
BRTC গিয়ে মদ গিলি । ষোলশহর স্টেশনে গাঞ্জা টানি ।
হ্যাঁ, এইতো লাইনে আসছেন । আপনি যা মনে করেছেন আমি তাই । কোন নৈতিকতাবোধ আমার নাই । একজন মানুষ কী চায়? মৌলিক চাহিদাপূরণ? আমার সব ফিল আপ হয়ে গেছে । জ্বী, আমি ভোগবাদী । সবাই ভোগবাদী । বিপ্লবীকেও মরে যেতে হয় । নতুবা সেও ভোগবাদী হয়ে উঠে । এই রকম ডেসপারেট মন্তব্য আমি মাঝে মাঝে করি । মানুষ বেঁচে থাকে তার মন্তব্যের মধ্যে । ভুল হোক শুদ্ধ হোক মন্তব্য করতে হবে । যে মানুষ মন্তব্য করতে পারে না তার সাথে অন্য প্রাণীর কোন তফাৎ নেই । হ্যাঁ, আমি মন্তব্য করেছিলাম উপল বড়ুয়া গদ্য লিখতে পারে বাট ডক্টর আনিসুজ্জামান কখনও কবিতা লিখতে পারবে না । এই মন্তব্যে অনেকে নেচেছিল পুড়েছিল ভেবেছিল । কবির পক্ষপাতিত্ব আমাকে করতে হয় । যেহেতু আমি কবি । আই এ্যাম এ পোয়েট । মাই নেম ইজ রুদ্র অনিকেত । আমার নিজের দেয়া নাম । কবিতা লিখতে গেলে নাম সংশোধন করতে হয় । কবিতার মতো শ্রুতিময় হতে হয় কবির নাম!
জোরে চিমটি কাটলে যেরকম অনুভুত হয় অবিকল তেমনি তার পেটের ডানপাশটা হঠাৎ চিকুর দিয়ে মোচড়াতে লাগল। ব্যথাটা কয়েকগুণ বেড়ে যেতেই রুদ্র সিগারেট ফেলে পাঁচ আঙুলে পেট চেপে ধরে । এইরকম মাঝেমধ্যে হয় । গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম । কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপশম হবে । খালি পেটে সিগারেট টানার কার্যকারিতা । এর অর্থ হলো আজ আর আড্ডাতে যাওয়া অসম্ভব । এখন প্রয়োজন ভারি কিছু খেয়ে শুয়ে থাকা । বুক পেঁচিয়ে একটা টক ঢেঁকুর উঠলে দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসল আধঘন সাদা কফ । কফ ফেলার পর পেটে শান্তি ফিরলে সে পুরাতন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে রিকশা নিল । হ্যাঁ, এবার একটু ফিলসফিক্যাল চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে । রিকশা মেডিকেল পূর্ব গেইট পর্যন্ত আসলে রুদ্র দেখে অপজিট এক রিকশাতে মধ্যবয়সী পুরুষটির হাত যুবতীর কোমর পেঁচিয়ে ছুটে যাচ্ছে । এই তো প্রকৃত যুগল । না যুগল নয়, পরকীয়া । যাই হোক । লোকচক্ষুর ফালতু ভয় তাদের নেই । রুদ্র মনে মনে তাদের স্যালুট জানাল । খেলেরাম খেলে যা । ফ্রয়েডের কথাই সত্য । প্রাণীদের একে অপরজনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ সেক্সুয়াল । পৃথিবীতে শুধু কি প্রাণীরাই সেক্স করে? বস্তুরা বুঝি সেক্স করে না? এই যে রিকশা রাস্তার সাথে সঙ্গমরত । তার পড়ার টেবিলটির সাথে তো ডেক্স প্রতিনিয়ত সঙ্গম করে চলেছে । সঙ্গম । দুনিয়ার ইতিহাস সঙ্গমের ইতিহাস । সঙ্গম থেকেই সমস্ত কিছুর উৎপত্তি । অঁলিয়স ফ্রঁসেজের সামনে দু’জন সাদা চামড়ার ভদ্রমহিলা দেখে সে কামুক চোখে চেটে দিল তাদের রুগ্ন পাছা । ওরা এসেছেন এদেশে ফরাসী সংস্কৃতি বিক্রি করতে । আমাদের দেশে সংস্কৃতির বড় অভাব । তাই ইণ্ডিয়া ফ্রান্স জার্মানী আমেরিকা যুক্তরাজ্য থেকে সংস্কৃতি আমদানি করছি । ঐ যে মাংসল বালিকারা মাসাক্কালি ক্যাটরিনা কারিনা পরে ঘুরছে । ঐ যে কানে হেডফোন দিয়ে ঠোঁটে হিন্দী গানের শিস বাজাচ্ছে পাতলা তরুণ । বিদেশী সংস্কৃতি বৃথা যেত দেব না ।
মাথার ভিতরে কবিতা কিলবিল করতে থাকলে সে আরেকটি সিগারেটে আগুন লাগায় । আর প্রথম টানেতেই মনে পড়ে তার প্রথম সিগারেট ফুঁকার স্মৃতি । ক্লাস নাইনে থাকতেই সে লুকিয়ে লুকিয়ে কচু ক্ষেতে সিগারেট ফুঁকত । কত বছর ধরে সে ধুমপায়ী? এখন বয়স কত হবে? আহ! সময় কত দ্রুত চলে যায় । একবার যদি সময়কে ধরা যেত । সময় বুঝি ঈশ্বর?
time you old gipsy man
will you not stay
put up your caraven
just for one day
কার কবিতা? মেমরি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । এত পড়াশুনার পরও কিছুই মনে রাখা যায় না । মানুষ পড়ে কেন? মনে রাখার জন্য নাকি চিন্তাশক্তি উন্নত করার জন্য? না এসব ফালতু চিন্তা সে আর করবে না । চিন্তাভাবনা না করেও প্রাণীরা বেঁচে থাকে । তারচে’ উত্তম এখন গিয়ে খিস্তি খেউড় করতে হবে ভাববাদী সাহিত্যিকদের । নতুন গোঁফ ওঠা কবিদের । ডাইনে বাঁয়ে তাকিয়ে যুবতীর মাংসল পাছা দেখে শিস বাজাতে হবে । তবেই তো কবিগিরি । আওড়াতে হবে পোস্টমর্ডানিজম…
লেখকবৃত্তান্তঃ
উপল বড়ুয়া
অবস্থানঃ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ।
সম্পাদনা করেন ছোটকাগজ ‘টঙ’ ।
প্রকাশিত কবিতার বইঃ কানা রাজার সুড়ঙ্গ
ফোনঃ ০১৭২৪৪৩৮৯৮৯