মোক্ষ-৬
কিছু বোঝার আগেই মৃত্যু আসবে। ঘর-গৃহস্থালি গোছানোর আগেই সে আসবে। অনেক কিছুই ঝরে পড়বে থলে পূর্ণ করার পূর্বেই। তোমার রাস্তাই নিয়ে যাবে সেই অবস্থায়। পৃথক হয়ে যাব তোমার থেকে। যখন বুঝতেই পারলাম না ঝড়ের মত দমকা বাতাস কেন প্রবাহিত হয়?
বঙ্গপোসাগরের নোনা ঢেউ আমার শিরায় বয়ে যায় অবিরত। নারী প্রতীক হয়ে সামনে আসে প্রকৃতির সমস্ত উপাদান নিয়ে। একবার তাকিয়েই বুঝে যাই হিমালয়ের উচ্চতা। সুন্দরবনের গহীনতা কতখানি অন্ধকার সবুজ আর কালোর মিশ্রণ। মৃগনাভীর ঘ্রাণ লুকায়িত পশমের আড়ালে?
ঝরনার স্বচ্ছ পানি ঝরে সাগরে মিলনের আশায়। মুক্তি পেতে চাই জীবনের শৃঙ্খল থেকে। বন্দিত্ব ঘুচলে জীবনের ছলাকলা শেষ হয়ে যায়। মুক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ি আরেক বন্দিশালায়। চুড়ই পাখির মত ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে বসি আরেক ডালে। প্রকৃত মুক্তি আমার জীবনে সম্ভব হবে কি?
মোক্ষ-৭
খেলে যাই জীবনের খেলা। আট চাকার ট্রাকের মত ভারবাহী হতে চাইনা। রেসিং মটর বাইকের মত ট্রাকে ঘুরি নিয়ন্ত্রন রেখে। রাস্তা মসৃণ হলে ভালোই হত। অনায়াসে চালিয়ে নিতাম ঝুকিপূর্ণ সময়।
সমাপ্তি লাল ফিতা ছোঁবার আগেই আউট অব ফিল্ড হবার সাধ নেই। স্পাম থেকে শুরু করে আজ অব্দি প্রতিযোগীতা। সৃষ্টিকর্তা এত পরীক্ষার খাতা বিছিয়ে রেখেছে। মানুষের তৈরী ক্লাস পরীক্ষায় আমি বরাবরই ফেলের ছাত্র।
তোমার বাহু ডোরে বন্ধি থাকতে ভাললাগে। সেইসাথে মুক্তি চাই সময় অন্ধকার চাদরে ঢাকা। কমলে আবৃত্ত থেকে কল্যাণ সম্ভব নয়। বৃহৎ স্বার্থে চল ক্ষুদ্র স্বার্থ জ্বলানজলি দেই।
মোক্ষ-৮
বৃষ্টি জলে ধুয়ে নিয়েছি অহম। কোথায় খোসিয়া পড়েছে আমার আহ্লাদের অহম? প্রকাশিত আমিত্ব শুনিলে কুঁকড়িয়া উঠি। তীরের ফলার মত শ্রবন পর্দায় আঘাত লাগে।
যতকিছু আমার বলে ধরতে গেছি ততই দূরে সরে গেছে সবই। এখন বোকার মত দোয়েলের শিস আমার বলে ধরতে যাইনা। বৃষ্টিস্নাত পত্রপল্লব চক্ষু মেলিয়া দেখি। আমার বলে সবুজে চোখ রাঙ্গাতে চাইনা।
আমার বলে আর কোন কিছুকে আমি ভাবিনা। হারানোর পদার্থের মাঝে আমিত্ব নামের নোংরামী হারিয়েছে। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে ড্রেন বাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়েছে।
বৃষ্টি ধোঁয়া বায়ুর ভিতরে প্রথম সূর্য রশ্মি দেখি। বিকরনে, ভিতরে আমিত্ব জেগে উঠে ট্যাগানো ধানের কুশির মত। তার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ভয় আমিত্ব হারানোর।
মোক্ষ-৯
আগরবাতির শরু সাদা ধুয়া এঁকে বেকে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরময় শ্বাসের সাথে উঠানামা করে সুগন্ধ। টিভিতে টম এন্ড জেরির দুষ্টমি দেখি নির্বাক দৃষ্টিতে। থান্ডার ক্যাটস দেখে যত মজা পেতাম এখনকার শিশুরা আনন্দের বাহিরে।
ঘরবন্দি থাকতে থাকতে কয়েদী হয়ে উঠেছি। ছোট বৃত্ত চক্রে পরিধির বাইরে পরিচিতরা। একখন্ড আকাশ কিছু গরম বাতাস পরিচিত রাস্তা। শিকল পড়া সিংহের বোবা গর্জনে কেঁপে উঠে অন্তরাত্মা।
দাসত্বপ্রথা জারি রেখেছি পুঁজিপতির বিলাসের রাংতায়। আগে বালিকা দেখলেই প্রেমিক মনে হত। নারী দেখলেই কষ্টে বুখ ভার হয়ে আসে। বন্ধিত্বের শিকল আজন্ম পায়ে পড়ে ঘুরছে রুপালী নূপুর।
মোক্ষ-১০
জাম রঙের জামদানীর নিপাট ভাঁজে লুকিয়ে আছে সুখ দুখের স্মৃতি। তুমি যখন পড়েছিলে অনুভব করতে পেরেছিলে সেই কাহিনী। বুঝতে পারনি ঘামের দাগ সুঁইয়ে ফোঁড়ে ফোঁড়ে গাঁথা আছে।
নকশী করা শাড়ীতে কারিগরের বেদনার মাধুর্য দেখেছিলে। দেখবে কিভাবে তুমি মুক্তি দিয়েছ তাদের পরিশ্রমকে। টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছে তোমার শরীরে। সময়ের আবর্তনে বেড়ে উঠা শরীরের সমস্ত রুপ শুষে নিয়েছে জামদানী।
তুমি যেভাবে টাকার বিনিময়ে শুষে নিয়েছ কারিগরের কর্মফল। কারিগরের কর্ম শুষে নিয়েছে প্রত্যেক লোমকূপের ঘ্রাণ। শাড়ীর রঙে তোমার ত্বক অস্থিরভাবে গোলাপী রঙ ধারন করেছিল।
০৪-০৬-২০১৫ইং
লেখকবৃত্তান্তঃ
রেজওয়ানুল হাসান
জন্মঃ ৫ই আগষ্ট ১৯৭৯, সোমবার
জন্মস্থানঃ মিডফোর্ড, ঢাকা।
কাব্যগ্রন্থঃ বঙ্গআবীর, ২০১৫।
বর্তমান ঠিকানাঃ ১৭/১/১, টোলারবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৭৬০৬৩