“পথ শিশুর গল্প” নিয়া জিপসী রুদ্র বা জিপসী রুদ্রের স্টোরি অব দ্য স্ট্রিট চাইল্ড

0

জিপসী রুদ্রর পথ শিশুর গল্প

যে কোন আর্ট অনেকটা আড়াল দাবি রাখে। যদি তা কেবল বক্তব্য দানের দিকে ধাবিত হয় তবে সেই আর্ট ঢলে পড়ে। আর্ট দিয়ে আপনি কিছু বলতে চাইতেছেন- চেয়ে উল্লেখ্য আর্ট কী বলে তার দিকে তাকানো। যদিও আর্টকে কোন কিছু বলতে হবে এমন ক্লেইম আর্টকে হালকা করে ফেলে। তো জিপসী রুদ্রের আর্ট মানে তার শর্টফিল্ম ‘Story Of The Street Child’ দিয়ে সে কিছু বুঝাতে চায়। আমরা জানি- “পৃথিবীর ইতিহাস শোষক আর শোষিতের ইতিহাস।” বা “পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস।” জিপসী দলিতদের পক্ষে। এবং সে দলিত (sub-altern) শ্রেণীর ভাষা, তাদের জীবন যাত্রা ক্যামরাবন্দী করে বুঝাতে চায় যে, ডেভেলাপিং দেশে এখনো কীভাবে বৈষম্য বিরাজমান। এবং দলিতরা কীভাবে ভিক্টিম হচ্ছে। এটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। যদি নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি তাহলে দেখব- ফিল্মের মধ্যে ক্যামরার কাজ অত্যন্ত গতানুগতিক। ফিল্মের শুরুতে ‘ক্যারো’ মদ শুঁকে দেখা একদম চাইল্ডিশ ব্যাপার। অভিনেতার অঙ্গভঙ্গি দৃষ্টিকটু। বাড়তি অভিনয় হয়ে গেছে। এখানটাই হাংরি প্রভাবিত ছাপ স্পষ্ট। পুরো পনেরো মিনিটের ফিল্মটা দাঁড়ায় আছে একটা মাত্র ডায়ালগের উপর। এবং এই ডায়ালগটা এখানে উহ্য থাক। পাঠক/ দর্শক তা নিজেই আবিষ্কার করুক। একজন পথশিশুর আত্মপরিচয় সন্ধান ফিল্মটির মূল বিষয়। সেই মূল বিষয়টি দিয়ে যেন পরিচালক/ নির্দেশক/ স্ক্রিপ্ট রাইটার জিপসী রুদ্র- চলিত সমাজব্যবস্থা বা মধ্যবিত্ত সোসাইটিকে আঘাত করল। এই আঘাতটা দরকার আছিল। তাই সাধুবাদ। স্ক্রিপ্ট সাধারণ তবে সাধারণ দৈনন্দিন দৃশ্য/ ঘটনাবলী যেভাবে আমাদের চোখ এড়ায় যায়; জিপসী সেই পাত্তা না পাওয়া দৃশ্যাবলী আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। কিংবা ফটোগ্রাফার সাহেব যখন ইংরাজী লিখল দ্যান কেটে বাংলায় লেখা শুরু করে তখন তার চেতনা/ চৈতন্যদোয় আমাদের আন্দোলিত করে। এখানটাই বাঙালীর দাসত্ব ছেড়ে বেরিয়ে আসার আবেদন তৈরী করে। যদিও ফিল্মটির নাম ইংরাজী ভাষায়। পরস্পবিরোধী চেতনায় মগ্ন। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে ফিল্মটি যেন পথশিশুদের একটা আত্মপরিচয় খোঁজার দলিল। পথশিশুটির মা এবং পথশিশুর বক্তব্য/ ডায়ালগ একটা জোরালো অবস্থানে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। অভিনেতাদের কথা যদি বলি- তবে বলতে হবে তাদের ডায়ালগ থ্রু যথেষ্ট সাবলীল, স্বতঃস্ফুর্ত ছিল না। এ্যাক্সপ্রেশনে কোন চমৎকারিত্ব তেমন নজরে পড়েনি। ঘটনার পরম্পরা ভালো তবে তাড়াহুড়ার ব্যাপার ছিল খুব। যদিও এটা শর্টফিল্ম; এতো কথা না বলায় শ্রেয় (আমি তো দেখি আলেজান্দ্রো ইনারিতো পরিচালিত ‘বার্ডম্যান’ এর সমালোচকের মতো হয়ে যাচ্ছি)। তবু বন্ধু বলে কথা। সামনের কাজগুলাতে জিপসী থেকে আরো পারফেক্ট কাজ আশা করি। সে প্রমিজিংও বটে। তো ফিল্মটি চুপিচুপি দেখছিলাম শিল্পকলা শিরীষতলায় বসে। এবং লেখাটি সম্পূর্ণ স্মৃতি থেকে। ফিল্ম দিয়ে সমাজকে আবার আঘাত করার যে সাহসিকতা সে দেখালো এখানেই জিপসী ও তার ফিল্মের সার্থকতা। ২২ তারিখ ফিল্মটা আবার দেখতে যাচ্ছি। আপনারাও আসুন। 

                      উপল বড়ুয়া
                      কবি
                      প্রকাশিত কাব্যঃ কানা রাজার সুড়ঙ্গ (বইমেলা ২০১৫)
                      ফোনঃ ০১৭২৪৪৩৮৯৮৯ 
                      চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার