আরণ্যক টিটোর পনেরটি কবিতা

0

শারীরিক

জেনেছে পৃথিবী, মাটির শরীরে জমেছে যে মনজল।
মনজল,
ছোঁয়াল শরীর পিপাসায়।  ভালবেসে শারীরিক
ললিতকলার উপাচার,
 চুষে মনজল,
           করছি রচনা, মাটির ধরায় সবুজ সদন!

সবুজসদনে
ফিরছি আমিই > বৃক্ষ > ফুল > ফল > বীজ > চারা > বৃক্ষ >
রূপের মাধুরী মম!
 শরীরবিহীন,
   কেন যে খুলেছ চোখ?
     এই আমিই শরীরি এই আমিই যে মন!
          খোঁজ না আমাকে,
                 শরীরের বাহিরে ও মনের বাহিরে।

শরীরনগরে এস, মনযানে চড়ে।
অথবা,
মননগরে এস, শরীরযানে চড়ে— শরীর ও মন, আমি ছাড়া
তুমি নাই,
তুমি ছাড়া আমি নাই! …

বাঁক

আঁ কা  বাঁ   কা
সবুজ মাঠের পথ ধরে হেঁটেছি কেবল,
উজান ভাটির ব্যাকরণে শুনি নাই
জলের কাকলি।
এটুকু বুঝিনি, কতোটা আঘাত পেলে বাঁক নেয় নদীটির মন,
অভিমানে সরে সরে যায় নদীয়ার কূলে!
জলজ ভাষায় ভেসে ভেসে যায় কাঁখের কলসি,
কূলের কথনে ভেসে ভেসে যায় ঘাটের কাহন, মরমিয়াগাথা!…
মন,
বাঁকানোর আগে ভালো করে জান,
কতোটা বাঁকালে বাঁক খায় শ্যামল কটাক্ষ ভরা চোখের ধনুক,
শরের যোজনা থেকে পলকে পালায় বাক্যের হরিণ!
কথার কাননে
কী ভাবে বাঁকাবে তুমি সাধের জীবন;
তাহার বয়ানে জানো,
              পথের আদলে বহা নদীটির আঁ কা বাঁ কা ইতিহাস! …

জড়িয়ে পড়ছি সংঘাতে, পরিপার্শ্ববিশ্বে! …

নবনীতা
জলের বোধনে যে নিজেকে ভেজায় না,
সে সংঘাতকে জাগাতে জানে না!
যে সংঘাতকে ভালবাসে না, সে সম্ভাবনাকে বলতে পারে না, ভা ল বা সি! …
ভুল ও ফুলের
গলায় গলায় ভাব,
পরাগায়নটুকুর অনুধ্যানে হতে পারে না পথের সমাজদার! …
এইটুকু
ভেবে ভেবে হাঁটছিলাম, মৌমাছির ইন্ধনে! …
হঠাৎ মনে হল,
[…..]
তুমি যে শূণ্যস্থানটুকু পূর্ণ না করে চলে গেছো, সেখানে লিখেছিলাম, স ম্ভা ব না! …
শুভ!  
দ্বন্দ্ব/সংকুল পথে যেতে যেতে, ক্রমশ, জড়িয়ে পড়ছি সংঘাতে, পরিপার্শ্ববিশ্বে! …

একটুখানি পরিচয়

বাপু,
এত সাদা কথা কও ক্যনে? একটু শ্যামল কথা কও,
অব্যক্ত বর্ষায় জুড়াক পরাণ! …
লোকমুখে শোন নাই? এইখানে রমনীরা নয়ন পিঞ্জরে পুষে শ্যামসুখপাখি!
মওলার ইশকুলে পড়ো নাই? আমরা যে শ্যামলবরণ জাতি! …

সাদা না,
শ্যামল মনের মানস আমি!
দেখি, সময়ে সময়ে রং বদলায় প্রকৃতি ও প্রেম
এবং জীবন!
আরও দেখি, বিমুখ প্রান্তরে
আমারই মাঝে কারা যেন বলে ওঠে,
কালো হাত ভেঙে দাও!
যদিচ
নীরব কুটিরে
ঝুপ… ঝুপ… … ঝুপ… … …
নেমেছে উপনিবেশ, সাদা!
জানালায়, …
তাকিয়ে আছেন, আপনি, কোন মনের মানস?
মানস নন্দনে কেবল রঙের ছড়াছড়ি! …

দেখা হয় নাই নয়ন মেলিয়া, আড়ালে আড়ালে কে কাকে মাখায় রং! …….

অপরাধ বিষয়ক

[…………………..]
আমাদের
অপরাধটুকুর বর্ণনা
মাত্রা
লিখে রাখা যায়, বিজ্ঞানপাতায়! …

সুন্দর মুহুর্তটুকু ফুটিয়ে তোলার জন্য
অপরাধটুকুর প্রয়োজন ছিল!
বর্ষার কাজল পরা চোখে, বৃষ্টির মুগ্ধতা ঝরা
কিছু অপরাধ জমা থাক,
কদম ফুলের কাছে! …
এটুকু জানুক, ভোরের মানসি!
আরও জানুক,
অপরাধ
বিপ্লবের ধাত্রী,
ফুল ফোঁটার ব্যাকরণ!
যারইই মর্ম্মে কানাকানি, জানাজানি,
ভাবার্ত্ত জীবন!…

আহা,
সৌন্দর্য্যপিপাসা মনে খেলা করে
অপরূপ অপরাধ
প্র ব ণ তা! …

দ্বন্দ্ব / বন্ধ করোনা জানালা

Dear,
I’ve anti-creation for you,
Because,
You’re a creative river
Go ahead murmuring beside my window! …
I’ve anti-creation for you on the faculty of art,
Before the rain comes! …

দ্বন্দ্ব /
বন্ধ কর না জানালা /
খোলা জানালায় ভাষা পায় / বকুলের ঘ্রাণ /
জেগে উঠে আদিগন্ত / স্বপ্নভঙ্গ নির্ঝরের মন / ………

দ্বন্দ্ব /
বন্ধ কর না জানালা /
খোলা জানালার অভিবাদনায় /
বসে আছি /
নগর শোভিত / ঘাসের সবুজ মনে / একটি ললিত উত্তরণ / ……………

দ্বন্দ্ব /
বন্ধ কর না জানালা /  
বল না কখনো / প্রান্তে কিছু নাই /
খোলা জানালায় ভাষা পায় /  
দূরের গাঁয়ের মেঠোমনে ফোঁটা / বুনোফুলটির ঘ্রাণ /
বিশ্বলোক /
……………….

বাদ্যবাধকতা

বাদ্য,
বাধ্য করে না আমাকে, আপনায় বেজে উঠি একতারায়! …
বাদ্য,
বাঁধে না আমাকে বাধ্যবাধকতায়, নূপুরের কলতানে বেজে উঠা উদাস দুপুর, দেখে চুপিসারে,
কোথায় উঠেছে বেজে মনের মন্দিরা,
ভেঙে শাসনের বেড়া!
বাঁশিটি বাজিছে কোন্ সে নদীর কূলে, বুঝতে পারে না, কি শাসন কি রাষ্ট্র! …
বাদ্য,
বাধ্য করে না আমাকে,
আপনায় বেজে ওঠে বাদ্যবাধকতা!
দেখি, ধুলোউড়া পথে ভোরের মেজাজ,
মিছিলে মিছিলে বেজে ওঠছে
কিংবা
গোধূলির রঙ লাগা আকাশের কোল ঘেষে দৃশ্যকল্পে উড়া বলাকার ঝাঁক,
নীড়মুখী,
কী এমন দলগত বাদ্যে, …

নদীটির নীড়ে,
বাকবাকুম বাকবাকুম অভিসারে মাতে
কৈতরাকৈতরি, জগতের এ আনন্দযজ্ঞ, বাদ্যবাধকতা, বুঝতে পারে না, কি শাসন কি রাষ্ট্র! …

অভিবাসী মেঘ

অভিবাসী মেঘ, তুমি কোথা যাও?
জলের ডানায় উড়ে উড়ে যাও কোন্ সে দূরের গাঁয়? …
এইখানে এস।
কাজলা দিঘীর জলে ভাসা
দলকলমির
পাঁপড়ির উপর চুপটি করে বস। …
অভিবাসী মেঘ, তুমি কোথা যাও?
এইখানে এস।
শোন।
ধানক্ষেতের আড়ালে
কাঁদছে
সদ্যজাত যিশু!
শংখলা নদীটির নীড়ে,
গণকবরের
সবুজ ঘাসের ফুলে ফুলে দিয়ে যাও জলজ পরশ! …
কাঁটাতার ঘেরা শ্যামল সবুজে,
পৃথিবীর
গাঁয়ের আকাশে,
মন পবনের নায়ে ভেসে ভেসে যাও
কোন  সে দূরের গাঁয়?
ভাসছি অকূলে, সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের নাঁয়!
অথই সমুদ্রে
আশার ছলনে ভাসে কোটিল্য নগর, কী ভাবে বাহিব দাঁড় উজানিয়া টানে! …

অভিবাসী মেঘ, আমাকেও নিয়ে যাও! …

কুশল

আছি /
আমি ভাল /
তবে /
একটুখানি কাল /
সোনায় যেমন /
খাদ/
বিহনে হয় না / অলংকার /
তেমনি আমিও / একটুখানি কাল /
ভালর অলংকারে /
তুমি /
আছো গো কেমন /
জীবন
সখা হে /
কী পথ চলিলা / আঁলিএ কাঁলিএ /
আজো /
পারিনি বুঝিতে /
সুরেলা শিষের  ঝংকারে /
যাও /
কী কথাটি বলে /
বাতাসের কানে কানে /
জীবন
সখা হে /

আছি / আমি ভাল /
তবে /
একটুখানি কাল / শ্যামজ সুন্দরে / …

যুক্তবর্ণা

আপনি, যুক্তবর্ণ পছন্দ করেন না! ‘বন্ধন’ শব্দটিকে লেখেন এইভাবে: বন্‌ধন্
মুক্তবর্ণের শব্দমালায় নতুন বিন্যাসে রচনা করেন বাকের বিভুতি, প্রেম!
আর
আমার সহজাত টান, যুক্তবর্ণে… বন্ধনে…
যেমন, ন্ধ!…  
এইখানে
বর্ণে বর্ণে মাখামাখি, একে অপরের উপর চেপে থাকা,  
বলছে, পড় মিথুনের ভাষা! …
চোখ চলে যায় খাজুরাহো, টেরাকোটা, কোণারকে…
দৃশ্যের হৃদয়ে শৈলী, কলা,
পাঠের আনন্দে নেচে উঠা মন, রিনিঝিনি শিহরনে টের পায়,
সৃজনের শরীরচেতনা! …
এখানেই
আমি চির সনাতন! যুক্তবর্ণা, আমাকে তাগাদা দেয় যূথচারিতার দিকে!…

যুক্তবর্ণার শরীরচেতনায় তাহাকেই পেতে সাধ জাগে, …

চাঁপাফুল

নহে চাপাবাজ,
এই বলে খ্যাত হোক, মম নাম চাঁপাফুল! …

ইটের ফোঁকর থেকে

সূর্য্যের  আলোর দিকে উঁকি দেয়া
চাপাপড়া
সাদা সাদা ঘাস জানে,
থরে ও বিথরে ফুটি বর্ষার ইন্দনে, …

দলিতকথার জিহ্বায়, বোঁটায়,
এই বলে খ্যাত হোক, মম নাম চাঁপাফুল! নহে চাপাবাজ! …

সবুজ পাতার মূল্যবোধ


আপনাকে না,
সবুজপাতাকে ভালবাসি! তবে,
ভাবার বিষয়,
সবুজপাতার দেখা পেলে আপনাকে মনে পড়ে।
………………..

গাছেরা গজাল
শাখায় শাখায় সবুজ পাতার মূল্যবোধ!
যার মাঝে
পাখিরা পেতেছে নীড়, মধুর কুজনে।
সবুজপাতা,
আজ
শিখলাম এতোটুকু, দেখে আপনাকে, ….
শিখেছি
প্রজাপতির কাছে, উড়ালকবিতা, উড়ালকাহন,
রঙিন ডানায় নানান রঙের পটভূমিকা ও সময়;
যারই প্রকাশ রঙিন জীবনে! …
শিখলাম,
মৌমাছির কাছে, শ্রমের গীতিকা,
শ্রমিক সাম্যের ফুলে ফুলে মধু আহরণ,
মধুর সখ্যতা, মৌমাছিতন্ত্রের ফুলবাস ও মৌচাকজীবন!
শেখার রয়েছে বাকী, ফুলের কাছে, নদীর কাছে….
সবুজপাতা,
চলুন, যাওয়া যাক,
আজ, একটি বৃক্ষের শোকসভা আছে
নিসর্গবিতানে,
চলুন, যাওয়া যাক,
যেতে যেতে পথে জানবো আরও….
আর
আপনাকে…

ফুলেরা পোশাক পরে না

আষাঢ়স্য বরষায়,
শাওয়ারের জলে ভেজা, স্নানার্থি কদম,
প্রতিভার অলংকারে
বিকশিত চেতনায়, দিয়েছে নির্জনে,
      একটি কোমল অটোগ্রাফ,
           ফুলেরা পোশাক পরে না! …

নিরাভরণায়,
তুমুল রহিত প্রেমে, ভিজলাম সহজ সৌন্দর্য্যে
এক
বর্ষনমুখর সন্ধ্যায়!…

মুগ্ধতার জলে ভেজা মনে
সেই থেকে
নন্দনের কানে কানে বলি,
       ফুলেরা পোশাক পরে না!
                    সহজ লাবণ্যে ফোটে সৌন্দর্যের বনে, …

আলো ও আঁধার

শীতার্ত রাত্রিটা শুভ হোক /
এতটুকুন বলে / ঘুমিয়ে পড়লো মোমবাতি /
শীতার্ত রাত্রিটা জানে / কতটুকুন আলোকপ্রাপ্তির কাঙখায় /
জেগে আছে আঁধারের মন /
যেমনটি ছিলেন মহাজ্ঞানী / মহাজন /
গমন কিঙবা /
উদয়কালের সূর্য জানে /
আলো /
অথবা আঁধার /
আঁধার /
অথবা আলো /
একটিকে ছাড়া একটি / অমূল্যের মানস নন্দন /
তবু /
আলো হাতে চলা / আঁধারের যাত্রি /
গলায় গলায় সাধে / আলোয় ভুবন ভরা দীপালির মন /
আমি /
ধাঁধানো আলোর ঝলসানো চোখে /
খুঁজি / একটু মনোরম আঁধার / গর্ভের চেতনা /
দেখি /
আলোর বন্যায় উড়াওড়ি / ঝাঁকে ঝাঁকে মরে পতঙ্গ পরান / ……..

জ্যা, মিতি ও সৃজন

জ্যা /
অনুভব করুন / টান / জ্যামিতি আনন্দে / সৃজন আনন্দে / …

আপনি /
তাহাকে ভালোবাসেন / অনুভব করেন /  টান /
ইহা /
মহাশুণ্যতার / অপার জ্যামিতি / অপার সৌন্দর্য /
যারইই আকর্ষনে / বিকর্ষনে  /  টানে /  আবর্তিত / স ব কি  ছু  /
আপনার মূলে /  মৌলে / …
এইযে এখন /
মাটির ধরায় / আপনা(র) বিহনে / আমার মনে যে টান /
সেও / একই জ্যামিতি / একই সোন্দর্য / প্রকৃতির শোভা ও সৃজন /  বিবর্তনে / ……………….

 

আরণ্যক টিটো

                                                                 আরণ্যক টিটো

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার