শ্লেটরং
এই যে শ্লেটরং; লুক্কায়িত বেদনার আসমান, সমূহ বিষণ্ণতার মাপকাঠি। এখানে লেখা ছিলো কিছু চকবর্ণ; সমান্তর মার্জিনে আয়ুপথ। এইখানে বিরাজমান ছিলো কিছু কারুকর্ম; আর একটি ঘরের খোলা দুয়ার
এইখানে তুমি নিজেকে পড়তে পারতে, উপুড় হয়ে; কাত হয়ে, চিৎ হয়ে। সহস্র আয়াতে লিখতে পারতে তোমার নাম। কিন্তু এখন এই যে শ্লেটরং; লুক্কায়িত বেদনার আসমান, সমূহ বিষণ্ণতার মাপকাঠি। এইখানে এখন দ্যাখো; লেখা আছে কেবলি মহাকাল..
মা!
আমার মা বহুকাল হলো মৃত। মায়ের হাতে সবজি কেমন সবুজ ছিলো জানি। জানিনা অক্ষরমালা তার হাতে কেমন রান্না হতো। কোনোকিছুই তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। ইচ্ছে ছিলো জানতে চাইবো, হাড়ভাঙ্গা খেটে আপনি কোন দেবতার ঘরে কবর খুঁড়তে মগ্ন ছিলেন?
মা! আপনি কি হাসছেন?
জুতা চুরি
জুতা চুরি করবো বলে মন্দিরে যাই।
আগের রাতে আমি মাস্টারপ্ল্যান সাজাই।
মন্দিরে যেতেই দেখি উলু বাজে,
শঙ্খ লাগে; ওড়ে ধোঁয়া। হায়! হায়!
মন্দিরে যাই একজোড়া জুতা চুরি করবো ভেবে;
পায়ের সাথে পা মেলাবো বলে মন্দিরে যাই।
অথচ দেবী, তোমার পায়ে কোনো জুতা নাই!
ঝঞ্ঝা
হাওয়ায় ভেসেছে বুক
কাঠিতে বাজছে তুমুল ড্রাম
আহা!
ঢেউ
ঢেউ
ঢেউ
হাত রেখেছে কেউ?
ছিলোনা, আছে; এইতো কাছে
দর্পনে লিখেছে নাম
ভেতরে মুক্তো জেনেছি ঝিনুক
সমুদ্র!
ঝড়
হাওয়া
ঝড়
বয়ে যাচ্ছে যার উপর
সেই তো বাঁচে, রঙের আঁচে
কিনেছে আয়ুর দাম
স্তব্ধ ঘূর্ণিতে উড়ছে মর্মর ভুক
আহা!
চমক
বিদ্যুৎ
চমক
ঘুম ভেঙ্গেছে খমক
খোলা বাক্স, যা-ই দেখছো
হাওয়ায় ভেসেছে বুক
কাঠিতে বাজছে তুমুল ড্রাম
জুডো
প্রতিবার খেলার আগে আমি আগুন জ্বালাতে ভুলে যাই। হারিয়ে যাই অন্ধ-মঞ্জুরি প্রহরে। বায়োস্কোপ করি, যেমনটা অইরকম দেখা যায় বলে সবাই লজ্জা পায়; আর তুমি লজ্জা পাও অথবা পাও না; দেখতে পারিনি বলে- প্রতিবার খেলাশেষে আমার কেবলি সিগারেটের কথা মনে পড়ে ।
প্রতিবার খেলার সময় আমি সঁপে দেই জীবনের সমস্ত উত্তেজনা। আগুন আর কিইবা করতে পারে? কতটা দহন!
অথচ, প্রতিবার খেলাশেষে আমি দেখি তুমি ছিলে আমার শরীর!
বেশ্যা
বেশ্যালয়ের চেয়ে উৎকৃষ্ট কোনো মন্দির নাই।
প্রত্যেক পুরুষ বেশ্যাদের যমজ ভাই,
বেশ্যাদের জন্য পৃথিবীতে এত বসন্ত, ফাল্গুনি-
প্রত্যেক নারী বেশ্যাদের কুমারী জননী।
পাথুরে মেঘ
এইসব বৃষ্টির রাতে পাথুরে মেঘ তুমি গলে যাও, জানি। নিজেকে পারি দাও নিজেকে ছেড়ে। নেমে পড়ো এই শুষ্ক মঞ্জিলে। যেখানে পড়ে থাকে খোলা মৃত্তিকা এবং সেখানে বাসা করে বসে থাকে অযুত পিঁপড়াগন। তোমাতে স্নান করে তারা; উৎসব করে আয়োজন করে চোষে তোমার বৃষ্টি-মেঘজল।
অথচ পাথুরে মেঘ, তারপর তোমার একটা আকাশ কোথায় হারিয়ে যায় পিঁপড়ারা ঘুণাক্ষরেও সেটা নিয়ে কখনো ভাবে না।
বিষাদ
তোমার স্তনে আলেকজান্দ্রিয়ার আলো, দেখে নিমজ্জিত হই টাইটানিকের মতো। ওমঃ সমুদ্রের গভীরে সাইরেন জেগে ওঠে। মূলকোষে পাহাড়ের মতো সবুজ- ফুটে ছিলো অতদিন ফুলের মতো একা!
জলজ চোরাপথ ধরে এই অন্ধকারে সৌরভ শুঁকে যদি ডুবুরি ভ্রমর না আসে। তবে সে-ও জীবনের এক নিগুঢ় ব্যর্থতা-
তবুও ভ্রমর, তবুও ডুবুরি- কেবল জানে, অই স্তনে, অই ফুলে; লুকিয়ে আছে কতটা বিষাদ..
ওশেন, ওশেন!
ওশেন, ওশেন! তুমি আমাকে দেখতে পাবে না।
ক্ষীরচঞ্চুর ওপরে, নাসিকার শুরুকারী ভূমিকায়, ভ্রু-আঁধারে, চোখের জ্যোতিকণায়; শব্দহীন ঘুমের ভেতর- অতিকায় প্রতিচ্ছায়ার অংশ দ্বিত্ব ফসিল অথবা ফসিল না হয়ে তোমার দুই চোখের মাঝখানের রোদ্দুরে আমি ভেসে আছি রক্তিম পাখির মতো
ওশেন, ওশেন! তুমি আমাকে দেখতে পাবে না?
কদম ফুলের গন্ধ
বাড়ির আঙ্গিনায় আমার সমবয়সী একটি কদম গাছ ছিলো। যে ঝড়ের রাতে আমি জন্মেছিলাম অই রাতে বাবা গাছটি পুঁতেছিলেন। তারপর কত ফুল, কত বর্ষা; এলো, গ্যালো। গাছটি অকৃত্রিম আবহ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। যেদিন বুভুক্ষু মানুষের ঝড় উঠলো, সেদিন গাছটি মরে গ্যাছে।
সেটা ছিলো বর্ষাকাল; চারদিকে বৃষ্টি হচ্ছিলো। সেদিন গাছটার ডাল দিয়ে মা ভাত রান্না করেছিলো, পাতা দিয়ে তরকারি। রান্নাটা ছিলো বরাবরের মতো সুস্বাদু। কিন্তু সেই রান্নায় কদম ফুলের গন্ধ ছিলো না কেন?
চারবাকে প্রকাশিত মেহেদি হাসান তন্ময়ের একশো হাইকু পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মেহেদি হাসান তন্ময় ১৯ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন । লেখালেখি শুরু করেন ২০১৩ থেকে ।