পলাতকার ডায়েরী থেকে । আসমা অধরা

0

– এই করিসটা কী?
– কিছু না । ফেসবুকে তোর ছবি দেখি নতুন আপ্লোড করছিস যেগুলা ।
– হুমম্, আমাকে সুন্দর লাগছেনা ছবিতে?
– নাহ্, পেত্নীর মত লাগছে একদম কিন্তু তোর চোখগুলা আসলেই টানে। তুই সবসময় কাজল দিস?
– হু আমার চোখে কাজল দেয়া ফরজ। যেদিন দেখবি আমার চোখে কাজল নাই তাইলে বুঝবি একটা গরমিল হইছে।
– মারহাবা আমার কাজলা কোকিলা বান্ধবী।
– চুপ কর। এই সৌম্য, কবিতা শুনবি?
– শোনা।
– ওকে ফাইন, ওয়েট।

“তুমি লহ নাই ভালবাসিবার দায়
দু’হাতে শুধুই কুড়িয়েছো ঝরা ফুল
কৃষ্ণচূড়ার তলে বসে আমি একা
বুনিয়াছি প্রেম ঘৃণা বুনিবার ছলে”

– সুন্দর, দোস্ত আমার, ইতু নক করছে পরে কথা বলি, বাই।

চ্যাট মেসেজটা পড়ে ল্যাপটপটা পাশে রেখে অশ্রু  বুকশেল্ফের কাছে দাড়ালো। লাল মলাটের বইটার ১৮৬ পৃষ্ঠা বের করে পড়তে লাগলো

“অনেক দূরের মানুষকে ভাবি কাছে,
এমন কিছুটা অপরাধ আজো আছে ;
বুকের পাশের সত্যকে ভাবি, নেই।”

২.
সৌম্য খুব অবাক হয়ে অশ্রুর হাওয়াই মিঠাই খাওয়া দেখছে। বাচ্চাদের মত হাতমুখ মাখিয়ে খাচ্ছে,নিষ্পাপ লাগছে খুব । আজ সৌম্যর সিলেটে যাওয়ার কথা ১৫ দিনের জন্য, কারণ এম্নিতে আত্মীয় স্বজনের বাসায় ঘোরাঘুরি আর কি। আসল কথা ইতুর সাথে অনেকদিন পর দেখা হবে, তাই একটু এক্সাইটেড । মাঝে মাঝে সৌম্য আফসোস করে লং ডিসট্যান্স প্রেমের জন্য,কেন যে ইচ্ছে হলেই দেখতে পারে না।

অশ্রু পাশে এসে বসলো,অশ্রুর চুলগুলো খোলা, তবুও ওর মাঝে কিসের যেনো একটা অভাব সৌম্য ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। সৌম্য টিস্যুটা বাড়িয়ে দিল অশ্রুর দিকে,অশ্রু মুখ মুছতে মুছতে বললো,
– তোর ট্রেন কত লেট করবে?
– ক্যান তোর কি বিরক্ত লাগছে অশ্রু? চাইলে আরো কয়েকটা হাওয়াই মিঠাই কিনে দেই।
– দরকার নাই, ১৫ দিন?
– দোস্ত প্লিজ,এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় আমি মইরাই যাব, আর মনে করায় দিসনা।
– ওকে ফাইন, তোর ট্রেন আসছে এবার যেতে পারিস। এই বলে অশ্রু হাসলো।

সৌম্য ট্রেনে আয়েশ করে বসার একটু পরেই ছেড়ে দিল ট্রেনটা । ওর ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো । অশ্রু মেসেজ দিয়েছে…

“দুটি গোলাপই তাকে
দিয়ে বসে আছো ,
আমার কবরে তুমি
কোন গোলাপটা দিবে?”

হঠাত্ সৌম্য একটা ব্যাপার ভেবে ধাক্কা খেলো, অশ্রুর চোখে আজ কাজল ছিলোনা সেই কারণে আজ ওকে এতটা অন্যরকম লাগছিলো । ও দ্রুত কল দিল, সুইচড্ অফ । ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে গেলো….. আসলেই কি কিছু গরমিল হয়েছে?

৩.
ধীরপায়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিল অশ্রু । ল্যাপটপটায় প্রিয় গানটা ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাড়িয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল টানলো । কিছুক্ষণ পর চোখের জলে কাজল ছড়িয়ে গেলো অশ্রুর । ল্যাপটপে তখনো বেজেই চলছে….

And the bright emptiness
In a room full of it
Is a cruel mistress
I feel this unrest
That nest all hollowness
For I have nowhere to go in the cold
And I’m so lonely
There’s a better place than the emptiness

তারপর লিখতে বসলো, সৌম্য’র দেয়া ডায়রিতেই,

“আমি বিশ্বাস করতাম তুই আমার চোখে তাকালে স্পষ্ট বুঝতে পারবি আমি তোকে কতটা ভালবাসি সৌম্য । কিন্তু সবকিছু তোর চোখ থেকে এড়িয়ে গেছে এমনকি আমাদের শেষ দেখাতেও তুই আমাকে বুঝিসনাই ।

চলে যাচ্ছি, অপারেশন অনেক আগেই হওয়ার কথা এবার সব কনফার্ম হলো । আমিও নিশ্চিত ছিলাম অনেক ব্যাপারে যে তুই আমার হবিনা,আমি ফিরবো না এসব । যাক গে, তুই ইতুর সাথে দেখা করার ব্যাপারে এতটাই এক্সাইটেড ছিলি যে তোকে জানাইনি আর । সবকিছু গুছিয়ে চলে যাওয়া অথবা তোর কাছ থেকে পলায়ন । তুই নিশ্চয়ই ‘পলাতকার প্রতি’ কবিতাটা আমাকে উত্‍সর্গ করবি না?

লিখতে ক্লান্ত লাগছে, সৌম্য আমি ক্ষণজন্মা তাই আমি তোকে আমার বলে দাবি করিনি কখনো । সত্যি বলছি তোকে ভালোবেসে এক পূর্ণতা পেয়েছি আমি, জানি আর ফিরে আসবোনা । সেই খুশিতে একটা কবিতা বলি,

‘এই নাম এত প্রিয় হবে,
এত কান্নাময় হবে, কে জানতো?
এই জন্ম এত পূর্ণ হবে,
এত প্রিয়ময় হবে, কে জানতো?’

সৌম্য, ভীষন ভালবাসি তোকে ভীষন..”

আসমা অধরা
কবি

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার