বৃত্তায়ন ও অন্যান্য কবিতা । প্রত্নপ্রতিম মেহদী

0

বিবমিষা

চোখের কালিতে আঁকা একটা উল্লম্ব নাচঘর
নেচে নেচে উঠতেই ধৃতির শিখরে দেখি—
উড়ন্ত কমেডির তালিকা থেকে
লিক হয়ে যাচ্ছে প্যারাসাইকোলজির স্বর;
তখন মৃদঙ্গবাজনার মতো বিদ্ধ হতে থাকে
তার আরোপিত হুল ও হ্রেষা

একটা বাদ্যবাহিত অসুখের মনোলগ
আর মন্দ্র সপ্তকে ভালো লাগছে না—
ভালো লাগছে না

তুষারমণ্ডিত স্মৃতির ক্যাটালগ দেখে
ডুব দিই বিস্তৃত ভাবনায়— কবে যেন
হাল ফ্যাশনের টর্চ হাতে এক নৈশ বিদ্যালয়ের
প্রাচীন দেয়ালে আড়ি পেতে শুনেছিলাম
বেথেলহেমের দুর্বিগেহ কেচ্ছাকাহিনি

হেভি মেটাল পোয়েট্রি

হরিণকে সাপোজিটোরি দিতে এসে বাঘেরা সার্কাস দেখায়! এই দেখে মনে পড়ে— বাঁদরের বাবাতো ভাইয়েরা আমাকে বলেছিলো, আয়নাপথে বাইপাস বলে কিছু নেই । চোখ বুজে হাঁটা দিই সঘন তরাসে— যেন এক বিবস্ত্র মেজাজে । দেহসুদ্ধ ঘর্মগ্রন্থিদের লম্ফঝম্প থেমে গেলে বুঝি— এইসব জটিল দৃষ্টিভ্রম স্টাফ নোটেশন থেকে সনাতনী কায়দায় নেচে উঠেছিলো । এরকম বাতাস বাতাস গ্রিনহাউজে খুব জমে যায় আমাদের ভুল ও ভ্রমের খেলা ।

এই জড়তুল্য দৃষ্টি যেন সমান্তরাল বাদক বর্তনী । পারমাণবিক সংস্কৃতি ভেদ করে ফোকাল পয়েন্ট স্থির হয়ে আছে রৌদ্র-সমীরণে । এদিকে ঔষধী বোমার তেজস্ক্রিয়তায় ঝলসে যাচ্ছে অসুখ; ওদিকে ছড়ানো ফুল-পাতাদের কান্নাহাস্যসার— শংকার ঝংকার!

বৃত্তায়ন

বুনোঘাস শুধু বুনোঘাস…
আমার দুচোখ আজ  ঝলসে গেছে চন্দ্রালোকের বিষে!
ভাবি বাদুড়ের সহবাসে কতোদিন ছিলাম,
কতো রাত কেটে গেছে ইঁদুরের চোখ দেখে দেখে?
ঘনঘোরা অজস্র সন্ধ্যায় আরোপিত হয়েছিলো সুর—
নেচার-মনাস্ট্রি আর সরু-বাঁকা শূন্য বালিপথে ।
ভোরের শিশির থেকে দূরে—
খসড়া জুয়ার বিদীর্ণ আসরগুলি আজ শশাঙ্কসংকাশ!

আমার দু’চোখ যেন ঝলসে গেছে চন্দ্রালোকের বিষে!
তারপর আহা…
বাদুড়ের সহবাস— ইঁদুরের চোখ—
বুনোঘাস শুধু বুনোঘাস…

ইলোপ

হস্ত যদি রিক্ত করে ফিরি— গাছটি তবে হেলান দিয়ে বসবে আমার পিঠে । এই যে দুপুর দুপুর হাওয়া, রেসের ঘোড়া— এইসব সস্তা কাদাচিত্র ভেবে ভেবে ভোর । ডাকে ব্যোম হর্ষঝংকারে! কে কাঁদে থামায়ে সকল দৌড়? এইখানে ছবিবন বিস্তার করেছে শুধু বনজ বিশ্বাস— ঘাসের প্রহার শেষে মনে হতে পারে পরদাদা যুগের কোনো শীতগন্ধা শতরঞ্চির কথা । ঢানঢানিয়া, এইদিকে আসুন— আপনার ঊর্ধ্বে ঘনীভূত হচ্ছে গর্ভবতী মেঘেদের ভ্রমণ । মন শুধু প্রতিভাত স্মৃতির ব্যারাক । যেদিকে তাকিয়ে হাসি, সেইদিকে দ্বিরুক্ত হয় ধনুস্টংকারের তীর! এখন সেবিকারা হেঁটে যাচ্ছে নিকট বালিঘরের দিকে— আর এইভাবে ক্রমশ উপভোগ্য হয়ে উঠছে জীবনের দ্বিতীয়াদি বিভক্তিবিলোপ । ইলোপ! ইলোপ!

উন্মোচন

বাড়ন্ত এক সদিচ্ছাকে ঘিরে কোনো পথই মসৃণ নয় ।
তুমিও কি এমনি বন্ধ্যা বাতাস— খামখোলা যন্ত্রণায় মেশা?
ধ্যানলব্ধ ধীবলয়ে উদ্বায়ী হলো পাষাণ— তোমার সমস্ত সংশয়,
জানায়ো জানায়ো অজানা ভূগোল— আমিও নিমগ্নকলম।
কখনো শুনেছো নাকি, নিজ করতলে হারানো ফোনালাপ?
ফণাভৃৎ নাগ ও ফুলেল সুষমাসহ সুপ্ত বেদনাগৃহে
বিদীর্ণ সুরে আজ  তুলে ধরি অপসৃয়মাণ দীর্ঘ অতীত।
শোনো এ অমসৃণ যাত্রায়— প্রপাতে-পর্বতে
তুমি আজো লেখ্য নও জানি দাহ্য স্মৃতিপটে ।

 

প্রত্নপ্রতিম মেহদী
কবি

শেয়ার করুন

মন্তব্য

টি মন্তব্য করা হয়েছে

Leave A Reply

শেয়ার