কবিতা আমাকে কখনো ছেড়ে যায় নি, প্রতারণাও করে নি তবে যন্ত্রণা দিয়েছে সঙ্গে অসীম আনন্দও কবিতার জন্য অর্থকে অনর্থক বলেছি কিন্তু অর্থের জন্য কবিতাকে ছাড়ি নি। আমার কবিতা আমার জীবনের জলছাপ।
-কবি আহমেদ মওদুদ
[ কবি আহমেদ মওদুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮১ খিস্টাব্দে। মহিন্দ্রাফতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আফানউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে মাহিগঞ্জ কলেজ ও কারমাইকেল কলেজে একাডেমিক পাঠের সমাপ্তি ঘটে। পেশাঃ শিক্ষকতা। সম্পাদকঃ পাঠশালা (কিশোর পত্রিকা)। প্রকাশিত বইঃ দেহের আড়ালে থাকে প্রকৃত স্বজন (কবিতা), কিশোর (কিশোর উপন্যাস), দুঃস্বপ্নের চিরস্থায়ী বাগানের খন্ড চিত্র (কবিতা)। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সাম্য রাইয়ান । ]
প্রশ্নঃ আপনার লেখালেখির শুরু কীভাবে? আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করলেন কবে থেকে? কীভাবে?
উত্তরঃ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় আট-দশ লাইনের একটা গল্প লিখলাম। গল্পটা লেখার পরে এর শব্দার্থ এবং প্রশ্নও লিখলাম। বাসার সবাই দেখে হেসে অস্থির। কিন্তু কেন এত হাসাহাসি, গল্পটা ভালো কি মন্দ এসব কিছু কেউ বললো না। পরে এক সময় বুঝতে পারলাম লেখকের কাজ শুধু গল্প লেখা, শব্দার্থ বা প্রশ্ন লেখা অন্য কারো কাজ। আসলে ক্ষুদে মস্তিষ্ক বাংলা বই দেখে লেখকের যে চরিত্র দাঁড় করিয়েছিলো তারই প্রতিফলন ছিলো ওটা এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতেই লেখক জীবনের প্রথম পর্বের শুরু ও সমাপ্তি। দ্বিতীয় পর্বের সূচনা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। আমার মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর একদিন কিছু কবিতা (ছড়াগুলো শিশুকালে আমাদের কাছে তো কবিতাই ছিলো) দেখিয়ে বললো ওগুলো তার লেখা। দেখলাম ওর কবিতায় অন্তমিলটাই প্রধান ভাব বা ভাষায় ভীষণ অসঙ্গতি। মনে হলো আমি ইচ্ছা করলে ওর চেয়ে ভালো লিখতে পারবো। তখন শুরু হলো ছড়া লেখা। এবার কিন্তু বাসার সবাই উপভোগ করলো আমার ছড়া। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমাদের হাইস্কুলে একটা অনুষ্ঠানে শিামন্ত্রী এলেন। তার সঙ্গে এলেন কয়েকজন সাংবাদিক। একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো। বাসা আামদের মাহিগঞ্জেই। তার কাছে পত্রিকায় লেখা প্রকাশের অভিপ্রায় জানালাম। তিনি তার বাসার ঠিকানা দিয়ে বললেন একটা কবিতা তার কাছে জমা দিতে। একদিন জমা দিয়ে অপো করতে থাকলাম। প্রায় একমাস পর প্রকাশ পেল কবিতাটা (ছড়াটা)। স্কুলে তো আমি রীতিমতো হিরো। যাই হোক ধীরে ধীরে আমার সাহিত্য সংশ্লিষ্টতা বাড়ে।
তৃতীয় পর্ব বা সিরিয়াসলি লেখালেখির শুরু এস এস সি পাশের পর। ছোট থেকে পারিবারিক কড়া শাসন-শোষণের কারণে আমার মধ্যে এক ধরণের নিরবতা কাজ করতো। তবে অন্তর্গত সরবতা ছিলো অক্ষত আর তার পরিভ্রমণটাও থেমে ছিলো না। তো এস এস সি পাশের পর কলেজে প্রবেশের কারণে স্বাধীনতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখার পরিধিও বাড়ে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হলেন সোহরাব দুলাল। আমাদের কলেজের বাংলার শিক্ষক। তিনি নিজেও কবিতা লিখতেন।
ক্লাসে যখন তিনি জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতেন মনে হতো স্বয়ং জীবনানন্দই বোধহয় আমাদের বোঝাচ্ছেন। তার সাথে আমার সখ্যতা বেড়ে যায় অচিরেই এবং কলেজে আমি শুধু তার কাসেই উপস্থিত থাকতাম।
বাকি সময় থাকতাম রংপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারে। নিয়মিত কলেজ ফাঁকির কারনে এক সময় আমার বিজ্ঞান বিবাগ নৃ-বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ সময়ে আমি আমার প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘কিশোর’ লিখতে শুরু করি। পাশাপাশি চলে ছোটগল্প ও কবিতা। আর এভাবেই মূলত আমি সিরিয়াসলি লেখালেখির বৃহত্তর পরিসরে প্রবেশ করি এবং শেষ পর্যন্ত কবিতাকেই গ্রহণ করি সিরিয়াসলি।
প্রশ্নঃ অনেকের ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে যে, ছোট কাগজে লিখতে শুরু করে একসময় বড় কাগজে ভিড়ে গিয়েছে। ছোট কাগজকে তারা সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু আপনার বেলায় তা হলো একদম উল্টো। একসময় আপনি প্রথম আলো সহ অপরাপর বিভিন্ন বড় কাগজে কবিতা-গদ্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অনেক দিন থেকেই আপনি শুধু নির্বাচিত কিছু ছোট কাগজের বাইরে কোথাও লেখা দিচ্ছেন না। এর কারণ কী?
উত্তরঃ আসলে আমার শুরুটাই হয়েছিল দৈনিক পত্রিকা দিয়ে। রংপুরের সব ক’টি দৈনিকেই একসময় প্রচুর লিখেছি। এরপর প্রথম আলো সহ আরো দু’-একটি বড় পত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম। লেখালেখির পাশাপাশি আমি সব সময় সামাজিক বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত থাকতাম। এটা লেখালেখি করি বলেই নয়। আমার ভিতরে সব সময় একটা প্রতিবাদি মানুষ বিরাজ করতো, এখনো করে। তো আমি লেখক স্বত্ত্বা আর ব্যক্তি স্বত্ত্বাকে কখনো আলাদা করতে পারি নি। এই না পারাটাই আমাকে অনেক কিছু সম্পর্কে ভাবতে শেখায়। রংপুরের একটি সাহিত্য সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম এক সময়। পরে সংগঠনের সদস্যদের পদ নিয়ে দলাদলি দেখে মনে হলো এরা তো লেখালেখি করতে আসে নি, এসেছে সভাপতি আর সম্পাদক হওয়ার জন্য। পরে এক সময় উপস্থিত সভ্য/অসভ্যদের মুখোশ উন্মোচন করে বেরিয়ে আসি।
এভাবে অনেক জায়গা থেকেই নিজেকে পৃথক করি। প্রথম আলো বা অন্যান্য দৈনিক থেকে নিজেকে সরিয়ে আনাও ঠিক একই কারণে অর্থাৎ কারণটা নীতিগত। আগেই বলেছিলাম যে, বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলাম যার পরিপ্রেক্ষিতে একসময় তেল-গ্যাস-কয়লা ও বিদ্যুত-বন্দর রা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ির কয়লা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই। তো একসময় দেখলাম প্রথম আলো আমার কবিতা যেমন ছাপে তেমনি ফুলবাড়ির শত্রু, দেশের শত্রু এশিয়া এনার্জির বিজ্ঞাপনও ছাপে। অর্থাৎ তারা এশিয়া এনার্জির কাছে থেকে টাকা নিয়ে আমার মতো সাহিত্যিকদের টাকা দেয়। তখন মনে হলো, এই সাহিত্য দিয়া আমি কী করিব? তো এক দিকে আন্দোলন, অন্যদিকে আপোষকামিতা, যা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এছাড়া বুঝতে পারি সাহিত্য চর্চা এদের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসা করা। আর লেখার উপর এদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও মোড়লিপনা আমার পছন্দ ছিলো না। যে কারণে এক সময় সব দৈনিকেই লেখালেখি বন্ধ করে দেই। প্রথম থেকেই ছোট কাগজে লেখালেখি না করলেও ছোটকাগজ নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করতাম এবং গুরুত্ব দিয়েই। এভাবে পড়তে গিয়ে ছোটকাগজও যে বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত তা অনুধাবণ করি এবং প্রকৃত ছোট কাগজগুলো সংগ্রহ করতে শুরু করি যা আজীবন অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্নঃ কবিতাকে অনেকেই অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আপনার কাছে কবিতার সংজ্ঞা কী?
উত্তরঃ আসলে কবিতা কিংবা শিল্পের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ সংজ্ঞা যে কোন বিষয়কে স্থির করে ফেলে। আর কবিতা তো স্থির কোন বিষয় নয়। কবিতা তার ভাব, ভাষা, বিন্যাস সবকিছুকে নিয়েই গতিময় এবং পরিবর্তনশীল। যুগে যুগে অনেকেই কবিতার সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। আমার কাছে মনে হয়, কবির অন্তর্দহনের নির্যাসই হচ্ছে কবিতা।
প্রশ্নঃ কেউ কেউ যেমন এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, হুইটম্যান প্রমুখ কবি কবিতাকে শ্রমসাধ্য বিষয় বলে মনে করেন; অন্য দিকে ওয়ার্সওয়ার্থ, কোলরিজ, ইয়েট্স প্রমুখ কবি কবিতাকে স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশ বলে মনে করেন -এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
উত্তরঃ আমার কাছে মনে হয় দু’ভাবেই কবিতা লেখা সম্ভব। বিষয়টা অনেকটা যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো। আপনি যদি কোনো দেশে যেতে চান আপনার জন্য জল, স্থল এবং আকাশ পথের যে কোন একটাকে বেছে নিতে হবে। তিন পথেই আপনি যেতে পারবেন তবে তাতে সময়ের ব্যবধানও ভিন্ন ভিন্ন এবং তিন ক্ষেত্রেই আপনাকে ভ্রমণের প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে অর্থ সংস্থানের পাশাপাশি পাসপোর্ট এবং ভিসার কাজটাও সারতে হবে। এরপর ভ্রমণ পথের কোনটা হতে পারে শ্রমসাধ্য আবার কোনটা হতে পারে আয়েসী; তবে লক্ষ্য কিন্তু এক। কবিতার ক্ষেত্রেও এরকম একটা ঘটনা ঘটে থাকে। একজন কবি যখন লেখার টেবিলে বেশি শ্রম দিচ্ছেন অন্য কবি হয়তো টেবিলে বসার আগেই সেই শ্রমটা ব্যয় করছেন।
প্রশ্নঃ লেখার ক্ষেত্রে অথবা ব্যক্তিজীবনে কাউকে অনুসরণ করেন?
উত্তরঃ নিজেকে আমি সংশয়বাদি হিসেবেই জানি এবং মানি। কোনো কিছুতেই আমার পুরোপুরি আস্থা নেই। নিজেতেই আমার সকল আস্থা। আর লেখালেখির শুরুতে অনেকের দ্বারা প্রভাবিত হলেও এখন সম্ভবত এ বিষয়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ব্যক্তি জীবনে কাউকে অনুসরণ করি না তবে একজনের ব্যক্তিত্ব আমাকে বরাবরই আকর্ষণ করতো এবং এখনো করে যার কথা আগেই বলেছি- আমার শিক্ষক সোহরাব দুলাল। তার নির্লিপ্ত জীবন যাপন এবং সাদামাটা চাল-চলনে এখনো মুগ্ধ হই।
প্রশ্নঃ আপনার প্রিয় লেখক কারা?
উত্তরঃ আমার প্রিয় লেখকের তালিকাটা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে বেশ দীর্ঘ হয়ে গেছে। একসময় সুকান্তসমগ্র আমার নিত্যসঙ্গী ছিলো। এরপর নজরুল, জীবনানন্দ দাশ থেকে বিনয় মজুমদার, আবুল হাসান, উৎপল কুমার বসু, শৈলেশ্বর ঘোষ এবং এর বাইরে কাহলীল জীবরান, মাহমুদ দারবিশ, বোর্দলেয়ার, র্যাঁবো প্রমূখ লেখকগণ রয়েছেন প্রিয় লেখকের তালিকায়।
প্রশ্নঃ আপনার সমসাময়িক কোন কোন কবিকে সফল অথবা সম্ভাবনাময় মনে করেন?
উত্তরঃ আসলে কবিতার পথটা বন্ধুর এবং দীর্ঘসূত্রিতার, তাই সমসাময়িক কোনো কবিকে সফল বা বিফল বলার চেষ্টা করার জন্য আরও বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হওয়া দরকার বলে মনে করি। তবে অনেককেই সম্ভাবনাময় মনে হয় আবার অসম্ভাবনাময় কবির সংখ্যা সম্ভাবনায় কবির সংখ্যার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাই এ বিষয়গুলো নির্বাচনের দায়িত্ব সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো।
প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সহ প্রমুখ লেখকের মধ্যেই প্রবল মৃত্যুভাবনা ছিলো। জীবনানন্দ পড়লে তো মনে হয়, তিনি যেন মৃত্যুর মধ্যেই বেঁচে ছিলেন। আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? …মৃত্যুভাবনা?
উত্তরঃ মৃত্যুভাবনা একসময় আমাকে প্রচন্ড ভাবাতো। দিনে অন্তত দুইবার আত্মহত্যা করার কথা মনে হতো। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মনে হতো একটা ট্রাক এসে যদি আমার গায়ে উঠে যেত তবে ট্রাকের সামনে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার অপবাদ থেকে বেঁচে যেতাম। এক সময় আর আত্মহত্যা করার প্রবণতাকে ঠেকানো গেলো না। ২০০৩ সালের শীতকালে পরপর দুই রাত আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলাম। কীটনাশকের বোতল হাতে নিয়ে রাত দশটার সময় প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। হঠাৎ মনে হলো আত্মহত্যা করার আগে অন্তত আর একবার ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকানো যাক অর্থাৎ স্মৃতি চারণ করা দরকার। এই স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে রাতটা এতো দ্রুত কেটে গেল যে ভুলে গেলাম আত্মহত্যার কথা।
পরের রাতটাও একই ভাবে কাটলো। সেই যাত্রায় আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসি। তো সেদিন ভোরে আমার পূর্ণজন্ম হলো। পূর্ণজন্ম বলছি এজন্য যে আমার কাছে মনে হয় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া আর আত্মহত্যা করার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। কারণ আমরা কিন্তু দেহহত্যা বলছি না বলছি আত্মহত্যা। যার অর্থ আত্মাকে হত্যা করা। তো আমাদের আত্মার মৃত্যু হরহামেশাই ঘটতে পারে। সেই রাতে আমার পূর্ববর্তী চিন্তা-দুঃচিন্তা যা আমার আত্মা দীর্ঘদিন থেকে বহন করে আসছিল সেগুলোর মৃত্যু ঘটে। আসলে আমি এখন এটেনশন জীবন যাপন করছি এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওই যে বললাম স্মৃতিচারণ অর্থাৎ স্মৃতিচারণ করে করে বেঁচে থাকা। তবে লোকজনকে সন্দেহের চোখে তাকাতে দেখে মাঝে মধ্যেই ভাবি বেঁচে আছি না কি মরে আছি।
প্রশ্নঃ আপনার কবিতা সম্বন্ধে আপনার মন্তব্য কী? কী প্রত্যাশা করেন কবিতা থেকে?
উত্তরঃ কবিতাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সাধনা বলেই মেনেছি। কবিতা আমাকে যা দিয়েছে এবং আমার কাছ থেকে যা নিয়েছে তা আর কারও দ্বারা সম্ভব হয় নি। অনেকেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, প্রতারণা করেছে কিন্তু কবিতা আমাকে কখনো ছেড়ে যায় নি, প্রতারণাও করে নি তবে যন্ত্রণা দিয়েছে সঙ্গে অসীম আনন্দও কবিতার জন্য অর্থকে অনর্থক বলেছি কিন্তু অর্থের জন্য কবিতাকে ছাড়ি নি। আমার কবিতা আমার জীবনের জলছাপ। আমার জীবনের ছায়া। অতএব আমার কবিতা আমার মতোই। আমার কবিতা আর কারও মতো হবে না। আমার কবিতা নিয়ে কে কী বললো, তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আর যেহেতু কবিতাকে হাট-বাজারে বিক্রি করার কোন ইচ্ছে নেই সেহেতু আমার কবিতা পুরোপুরি স্বাধীন। কবিতার কাছে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই তবে আমার কাছে কবিতার কোনও প্রত্যাশা থাকলেও থাকতে পারে। আহা তা যদি জানতাম! কবিতা, প্রিয় বন্ধু আমার – প্রিয় শত্রু আমার।
1 Comment
Pingback: চারবাক । নবপর্যায়ে প্রথম সংখ্যা । জুলাই ২০১৬ | চারবাক